
আফগানিস্তানে রবিবার মধ্যরাতে হওয়া ভয়াবহ ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ৮০০ ছাড়িয়েছে। আহত প্রায় ২,৭০০। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী কুনার প্রদেশ। অন্যদিকে, তালিবান শাসিত দেশে এই বিপর্যয়ের সময় সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে ভারত। ইতিমধ্যেই সেই দেশে ত্রাণ পাঠানো হয়েছে।
রবিবার স্থানীয় সময় রাত ১১টা ৪৭ মিনিট (ভারতীয় সময় রাত পৌনে ১টা) নাগাদ কম্পন অনুভূত হয় আফগানিস্তানে। ন্যাশনাল সেন্টার ফর সিসমোলজি জানিয়েছে, রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৬.৩। যদিও মার্কিন ভূতাত্ত্বিক সর্বেক্ষণ জানিয়েছে, কম্পনের মাত্রা ছিল ৬। জালালাবাদের উত্তরপূর্বে, ২৭ কিলোমিটার দূরে নানগড়হার প্রদেশে প্রথম কম্পন শুরু হয়। ভূপৃষ্ঠ থেকে মাত্র আট কিলোমিটার গভীরে ছিল কম্পনের উৎস।
এরপর বেশ কয়েকবার পরবর্তী কম্পন (আফটারশক) অনুভূত হয়েছে। ভারতীয় সময় অনুযায়ী রাত ১টা ৫৯ মিনিটে ৪.৩ মাত্রা, সোমবার ভোর ৩টে ৩ মিনিটে ৫ মাত্রা এবং ভোর ৫টা ১৬ মিনিটে ৫ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে আফগানিস্তানে। প্রতিটির গভীরতা ছিল ভূমিপৃষ্ঠ থেকে ১০-৪০ কিলোমিটারের মধ্যে।
কুনারের পাশাপাশি নানগরহর, লাঘমান এবং নুরিস্তান প্রদেশও ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রায় ১২,০০০ মানুষ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এখনও পর্যন্ত অন্তত ৮০০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। তবে মৃতের সংখ্যা আরও অনেক বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা। প্রশাসন সূত্রে খবর, ধ্বংসস্তূপের নীচ থেকে মানুষদের উদ্ধারের জন্য উদ্ধারকাজ চালানো হচ্ছে।
এদিকে, রবিবারই নিজের এক্স হ্যান্ডলে এই ঘটনা নিয়ে গভীর শোকপ্রকাশ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর জানিয়েছেন, মানসিক ভাবে সাহায্য করতে প্রস্তুত ভারত। এরপর সোমবার রাতে বিদেশ মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, আফগানিস্তানে ত্রাণ পাঠানো হয়েছে। মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল জানিয়েছেন, চালের বস্তা, তাঁবু এবং অন্যান্য খাদ্যসামগ্রী বোঝাই ট্রাক কাবুলের উদ্দেশে রওনা হয়ে গিয়েছে।
জয়শঙ্কর বলেন, ‘‘ভূমিকম্পে এতগুলি প্রাণহানির জন্য ওঁকে সমবেদনা জানিয়েছি। ওঁকে জানিয়েছি যে, ভারত আজ কাবুলে ১০০০টি পরিবারের জন্য তাঁবু পাঠিয়েছে। এ ছাড়াও, ১৫ টন খাদ্যসামগ্রী কুনারে পাঠানো হচ্ছে। কাল থেকে ভারত থেকে আরও ত্রাণ পাঠানো শুরু হবে। এই কঠিন সময়ে ভারত আফগানিস্তানের পাশে রয়েছে। আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করি।’’
আফগানিস্তানের মতো দরিদ্র দেশে মানুষ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পাবেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ইতিমধ্যেই জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, বিশ্ব সংস্থা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সাথে দ্রুত চাহিদা মূল্যায়ন, জরুরি সহায়তা প্রদান এবং অতিরিক্ত সহায়তা সংগ্রহের জন্য প্রস্তুত থাকার জন্য কাজ করছে। তিনি জাতিসংঘের বৈশ্বিক জরুরি প্রতিক্রিয়া তহবিল থেকে প্রাথমিকভাবে ৫ মিলিয়ন ডলার অনুদানের ঘোষণাও করেছেন।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন