'ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতীক 'সেঙ্গোল'- এর কোনও প্রমাণ নেই', কংগ্রেসের দাবীতে ক্ষিপ্ত অমিত শাহ

জয়রাম রমেশ বলেন, ‘লর্ড মাউন্টব্যাটেন, সি রাজাগোপালাচারি এবং জওহরলাল নেহরু সেঙ্গোল-কে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতীক হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন, এর কোনও প্রামাণ্য নথি নেই।’
সেঙ্গোল
সেঙ্গোল

নয়া সংসদ ভবন উদ্বোধন বিতর্কের মাঝেই 'সেঙ্গোল' নিয়ে তীব্র সংঘাতে জড়াল কেন্দ্রের মোদী সরকার ও কংগ্রেস। শুক্রবার, 'সেঙ্গোল' নিয়ে কংগ্রেসকে পাল্টা আক্রমণ করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।

আগামী রবিবার নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধনকালে লোকসভার স্পিকারের আসনের কাছে ‘সেঙ্গোল' রাজদণ্ড স্থাপন করা হবে বলে আগেই জানিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।

তিনি দাবি করেছিলেন, ‘১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট, ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতীক হিসেবে এই সেঙ্গোল রাজদণ্ডটি ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল।’

তবে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই দাবীকে উড়িয়ে দিয়েছে কংগ্রেস। বৃহস্পতিবার, কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ বলেন, ‘লর্ড মাউন্টব্যাটেন, সি রাজাগোপালাচারি এবং জওহরলাল নেহরু সেঙ্গোল-কে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতীক হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন, এর কোনও প্রামাণ্য নথি নেই।’

শুক্রবার (২৬ মে), কংগ্রেসের এই মন্তব্য নিয়ে বেজায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন অমিত শাহ। টুইট করে সেঙ্গোল-বিরোধিতা নিয়ে কংগ্রেসের তীব্র সমালোচনা করলেন তিনি।

অমিত শাহ বলেন, ‘ভারতীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে কংগ্রেস পার্টি কেন এত ঘৃণা করে? তামিলনাড়ুর এক পবিত্র শৈব মঠ থেকে এই সেঙ্গোলটি পণ্ডিত নেহরুকে দেওয়া হয়েছিল ভারতের স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে। কিন্তু, সেটিকে একটি সাধারণ লাঠির মতো যাদুঘরে ফেলে রাখা হয়েছিল।’

অন্য এক টুইটে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লিখেন, ‘এখন ফের একবার কংগ্রেস লজ্জাজনক অপমান করল (ভারতীয় সংস্কৃতির)। পবিত্র শৈব মঠ তিরুভাদুথুরাই আধিনাম থেকেও ভারতের স্বাধীনতার সময় সেঙ্গোলের গুরুত্ব সম্পর্কে বলা হয়েছে। আধিনামের ইতিহাসকে ফালতু বলছে কংগ্রেস! কংগ্রেসকে তাদের আচরণ নিয়ে ভাবতে হবে।"

এর আগে, কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ অভিযোগ করে বলেন, 'তামিলনাড়ুতে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার জন্য এই রাজদণ্ডটি ব্যবহার করছেন প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর পারিষদরা।"

বিজেপির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক স্বার্থে তথ্য বদলের অভিযোগ এনে তিনি বলেন, 'সেঙ্গোলের ইতিহাস নিয়ে কেন্দ্র যা বলছে, তা চেন্নাইয়ের এক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের কল্পনাপ্রসূত। চেন্নাইয়ে তৈরি এই রাজদণ্ডটি প্রকৃতপক্ষে ১৯৪৭ সালের অগস্টে জওহরলাল নেহরুকে উপহার দেওয়া হয়েছিল।'

তিনি বলেন, 'মাউন্টব্যাটেন, রাজাজি এবং নেহেরু এই রাজদণ্ডকে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতীক হিসাবে বর্ণনা করেছেন, এমন কোনও প্রমাণ নেই। এই বিষয়ে সমস্ত দাবিই একেবারে ভুয়ো। এই সকল তথ্য সম্পূর্ণভাবে কিছু মানুষের মন গড়া এবং তা হোয়াটসঅ্যাপে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন সেটাই সংবাদমাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।'

রাজনৈতিক মহলের দাবি, লোকসভা ভোটের আগে এর মাধ্যমে দক্ষিণ ভারত তথা তামিলনাড়ুকে সুকৌশলে বার্তা দিতে চাইছে বিজেপি নেতৃত্ব। বিজেপির তরফে তামিলনাড়ুর মঠ বা আধিনামগুলিকে কাছে টানার প্রচেষ্টা এই প্রথম নয়। গত দু’বছর ধরে তামিলনাড়ুতে ডিএমকে সরকারের সঙ্গে মাদুরাই বা ধর্মপুরমের মতো আধিনমগুলির সম্পর্কে ফাটল ধরানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বিজেপি।

তবে নয়া সংসদ ভবনে ‘সেঙ্গোল’ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়ে প্রশ্নও উঠছে। এ প্রসঙ্গে দ্রাবিড় শিক্ষাবিদ তথা লেখক কে তিরুনাভুক্কারাসু (K Thirunavukkarasu) জানিয়েছেন, প্রাচীন যুগে রাজার অভিষেকের প্রতীক হিসেবে রাজপুরোহিত তাঁর হাতে রাজদণ্ড তুলে দিতেন। কিন্তু গণতন্ত্রে এ ধরনের অনুষ্ঠানের কোনও স্থান নেই। এধরনের প্রথায় বৈষম্য বাড়ে। 

GOOGLE NEWS-এ Telegram-এ আমাদের ফলো করুন। YouTube -এ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন।

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in