ভিক্ষা করছেন বাবা-মা
ভিক্ষা করছেন বাবা-মাছবি সৌজন্যে ভিডিওর স্ক্রিনশট

ছেলের মৃতদেহ পেতে সরকারি হাসপাতালে ঘুষ দিতে হবে ৫০ হাজার টাকা - আঁচল পেতে ভিক্ষা করছেন বাবা-মা

এই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন সমস্তিপুরের সিভিল সার্জন ডাঃ এস. কে. চৌধুরী। তিনি জানান, 'সাংবাদিকদের মারফত বিষয়টি জানতে পেরেছি আমরা। আমরা অভিযুক্ত কর্মচারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করেছি।'

ছেলেকে হারিয়ে শোক কাতর বাবা-মা। বুক ফাটা কান্নায় ভেঙে পড়েছে পুরো পরিবার। তবে শেষ বারের মতো ছেলের মৃতদেহ বুকে জড়িয়ে ধরতে পারছেন না তাঁরা। সরকারি হাসপাতালের দাবি, ৫০ হাজার টাকা না দিলে ছাড়া হবে না দেহ। তাই বাধ্য হয়ে ছেলের নিথর দেহ ফিরে পেতে মানুষের কাছে আঁচল পেতে ভিক্ষা করছে অসহায়-দরিদ্র বাবা-মা। এমন হৃদয়-বিদারক ঘটনাটি ঘটেছে বিহারের সমস্তিপুরে (Samastipur)।

মৃতের বাবা মহেশ ঠাকুর ও তার স্ত্রী দাবি করেছেন, 'পোস্টমর্টেম হাউসের এক আধিকারিক মৃতদেহ নেওয়ার জন্য ৫০ হাজার টাকা জমা দিতে বলেছেন।' এই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন সমস্তিপুরের সিভিল সার্জন ডাঃ এস. কে. চৌধুরী।

তিনি জানান, 'সাংবাদিকদের মারফত মৃতদেহ ছাড়ার জন্য এক পরিবারের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা দাবি করার বিষয়টি জানতে পেরেছি আমরা। এই ধরনের কাজ মানবতার বিরুদ্ধে। আমরা পোস্টমর্টেম হাউসের অভিযুক্ত কর্মচারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করেছি।'

জানা যাচ্ছে, সমস্তিপুরের তাজপুর থানার অধীন কসবে আহর গ্রামের বাসিন্দা মহেশ ঠাকুর। গত ২৫ মে তাঁর ছেলে নিখোঁজ হয়। ছেলেকে খুঁজে পেতে তাজপুর থানায় 'মিসিং ডায়েরি' করেন তিনি। এরপর, গত ৭ জুন মুসরিঘররি থানা এলাকায় একটি মৃতদেহ উদ্ধার হয়। অজ্ঞাত পরিচয় মৃতদেহটিকে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায় পুলিশ।

এদিকে, তাজপুর থানায় 'মিসিং ডায়েরি' নথিভুক্ত হওয়ায়, দেহ শনাক্তের জন্য মহেশ ঠাকুরের সঙ্গে যোগাযোগ করে পুলিশ। তবে, পোস্টমর্টেম হাউসে মহেশবাবু পৌঁছালে মর্গের কর্মচারীরা তাঁকে মৃতদেহ দেখাতে অস্বীকার করে। বারবার অনুরোধ করার পর অবশেষে মহেশ ঠাকুরকে মর্গে থাকা মৃতদেহটি শনাক্ত করতে দেয় তারা।

এরপরেই বিপত্তি বাঁধে। মহেশবাবু মৃতদেহটি তাঁর ছেলের বলে শনাক্ত করলে, মর্গের কর্মচারীরা দেহটি ছাড়ার জন্য তাঁর কাছে থেকে ৫০ হাজার টাকা 'ঘুষ' দাবি করেন।

গরিব মানুষ মহেশবাবু। এতো টাকা না থাকায় বাধ্য হয়ে ভিক্ষার রাস্তা বেছে নেয় সমস্তিপুরের ওই বৃদ্ধ দম্পতি। রাস্তায় নেমে মানুষের কাছে হাত পাততে দেখা যায় তাঁদের। ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে ওই দম্পতির ভিডিয়ো।

যদিও এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর সমস্তিপুর জেলা প্রশাসন হস্তক্ষেপ করেছে। সমস্তিপুরের সিভিল সার্জন ডাঃ এস. কে. চৌধুরী নিজ উদ্যোগে অসহায় পরিবারের হাতে তাঁদের 'নিথর' ছেলেকে ফিরিয়ে দিয়েছেন।

একইসঙ্গে, মর্গের যেসকল কর্মীরা মহেশবাবুর কাছ থেকে ঘুষ চেয়েছিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে তা নিশ্চিত করারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে জেলা প্রশাসন।

জানা গিয়েছে, জেডিইউ (JDU) এবং বিজেপির (BJP) জোট সরকারের আমলে বিহারের ওই সরকারি হাসপাতালটির অধিকাংশ কর্মী নামমাত্র বেতনে চুক্তির ভিত্তিতে কাজ করে। অতিরিক্ত রোজগারের জন্য এভাবে রোগীর আত্মীয়দের কাছ থেকে ঘুষ চায় কর্মীরা। এই ঘটনা বর্তমানে প্রকট আকার ধারণ করেছে।

-With IANS Inputs

GOOGLE NEWS-এ Telegram-এ আমাদের ফলো করুন। YouTube -এ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন।

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in