
বিভিন্ন ইস্যুতে উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে দুদিন আগেই বৈঠক সেরে এসেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এরই মধ্যে সীমানা নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লো এনডিএ শাসনে থাকা দুই রাজ্য রাজ্য অসম এবং মিজোরাম। ঘটনার পরেই দুই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা এবং জোরামথাঙ্গা কার্যত নজিরবিহীনভাবে ট্যুইট যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার পাশাপাশি, ইতিমধ্যেই সংঘর্ষের ঘটনার ভিডিও টুইট করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন। গতকালের এই সংঘর্ষে ছয়জন পুলিশ আধিকারিকের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী। উল্লেখ্য, গত ২৯ জুনও সীমানা নিয়ে বিবাদে জড়িয়েছিল অসম-মিজোরাম।
সোমবার অসমের কাছাড় ও মিজোরামের কোলাশিব জেলার সীমানার লায়লাপুরে অসমের সরকারি কর্মীদের গাড়ি ভাঙচুর করার ঘটনা নিয়ে সংঘাতের সূত্রপাত হয়। মিজোরামের পক্ষ থেকেই হামলা শুরু হয় বলে অভিযোগ ওঠে। পাশাপাশি গুলিও চলে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সীমানা এলাকায় অসম প্রশাসন পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করে। তাতেই মিজোরামের সীমানা লাগোয়া বাসিন্দারা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে অসম পুলিশের সঙ্গে সংঘাত শুরু হয়ে যায়। বাসিন্দারা লাঠিসোটা নিয়েই হামলা চালান। ঘটনার জেরে আসামের ৫ পুলিশকর্মীর মৃত্যু হয় এবং জখম হন কয়েকজন সরকারি কর্মী-সহ ৫০ জন।
প্রসঙ্গত, এই দুই রাজ্যের সীমানা বিবাদ নিয়ে যথেষ্ট অস্বস্তিতে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে দুই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে অমিত শাহ কথা বলে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মিটিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন। মঙ্গলবার দুই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী উপদ্রুত অঞ্চল পরিদর্শনে যান। হাসপাতালে গিয়ে আহতদের সঙ্গে দেখা করেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা।
এদিন মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী টুইটারে এক ভিডিও পোস্ট করে লেখেন, ‘কাছাড় থেকে মিজোরামে ফেরার পথে এক নিরাপরাধ দম্পতির গাড়িতে হামলা করা হয়। তাঁদের গাড়িতে ভাঙচুর করেছে গুন্ডা ও চোরেরা।’ কিছুক্ষণের মধ্যে পাল্টা জবাব দিয়ে হিমন্ত লেখেন, ‘জোরামথাঙ্গাজি আপনি যদি দয়া করে তদন্ত করেন, তাহলে দেখতে পারবেন, কেন মিজোরামের মানুষরা হাতে লাঠি ধরে আছেন এবং হিংসা ছড়ানোর চেষ্টা করছে? জনগণের কাছে আর্জি, দয়া করে নিজেদের হাতে আইন-শৃঙ্খলা তুলে নেবেন না।’ তিনি বলেন, বিষয়টি মিটিয়ে নিতে সরকারের মধ্যে শান্তিপূর্ণ আলোচনা চলছে।
আরও একটি ভিডিও ট্যুইট করে হিমন্ত লেখেন, ‘কোলাশিবের (মিজোরাম) পুলিশ সুপার আমাদের পোস্ট থেকে সরে যেতে বলছেন। তা না হলে হিংসা থামবে না বলা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে কীভাবে আমরা সরকার চালাব? আশা করছি, আপনারা দ্রুত বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করবেন।’ অপরদিকে জোরামথাঙ্গা লেখেন, ‘শাহজী বিষয়টি খতিয়ে দেখুন। অবিলম্বে এসব বন্ধ হওয়া দরকার।’
প্রসঙ্গত, আসাম এবং মিজোরামের মধ্যে সীমান্ত নিয়ে এই উত্তেজনা আজকের নয়। শতাব্দীপ্রাচীন এই বিতর্ক আজও চলছে। মিজোরামের তিন জেলা আইজল, কোলাশিব এবং মামিত-এর ১৬৪.৬ কিলোমিটার সীমান্ত অঞ্চল আসামের কাছাড়, করিমগঞ্জ এবং হাইলাকান্দি জুড়ে বিস্তৃত। মিজোরামের দাবি ১৮৭৫ সালের ইনার লাইন রিজার্ভ ফরেস্ট অঞ্চল ৫০৯ বর্গমাইল এলাকাজুড়ে বিস্তৃত। ১৯৩৩ সালে আরও এক সীমান্ত তৈরি করে লুসাই হিল (রাজ্য হবার আগে মিজোরামের নাম) এবং মণিপুরের মধ্যে সীমানা টানা হয়। ১৯৭২ সালে আসাম থেকে ভেঙে আলাদা মিজোরাম গঠিত হয়। ১৯৮৭ সালে রাজ্যের মর্যাদা পায় মিজোরাম। এরপরেই মিজোরামের পক্ষ থেকে পুরোনো ম্যাপ এবং তথ্যের ভিত্তিতে কেন্দ্রের কাছে সীমানা পুনঃনির্ধারণের জন্য আবেদন করা হয়।
এই বছরের ৩০ জুন মিজোরাম অভিযোগ জানায় কোলাশিব জেলার সীমান্ত অঞ্চলে আসাম বেশ কিছুটা ঢুকে মিজোরামের জমির দখল নিয়েছে। একইভাবে আসামের পক্ষ থেকেও মিজোরামের বিরুদ্ধে তাদের রাজ্যের জমিতে দখলদারির অভিযোগ জানানো হয়। এরপরেই দুই রাজ্যের মধ্যে সীমানা নিয়ে বিবাদ বাধে।
GOOGLE NEWS-এ আমাদের ফলো করুন