বিট্রিশ শাসনের মতো NDA জমানাতেও বিনা বিচারে জেলে আটক বহু লেখক, সাংবাদিক - সরব অমর্ত্য সেনরা

People's Reporter: সেন লেখেন, "বিট্রিশ শাসনে ভারতীয়দের কোনও কারণ ছাড়াই গ্রেফতার করে বিনা বিচারে জেলে আটকে রাখা হত। মুক্ত গণতান্ত্রিক ভারতেও মানুষকে বিনা বিচারে বছরের পর বছর জেলে আটকে রাখা হচ্ছে।"
অমর্ত্য সেন
অমর্ত্য সেনফাইল ছবি
Published on

এনডিএ সরকারের সমালোচকদের বিনা বিচারে কোনও চার্জশিট ছাড়াই দীর্ঘদিন কারারুদ্ধ করে রাখা হচ্ছে। সম্প্রতি এই বিষয় নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে খোলা চিঠি লিখলেন দেশ-বিদেশের খ্যাতিসম্পন্ন পণ্ডিত, শিক্ষাবিদ এবং লেখকরা। চিঠিতে সুশীল সমাজের প্রত্যেককে এই বিষয়ে সরব হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

চিঠিতে লেখা হয়েছে, “ভারত বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ। ভারত দীর্ঘকাল ধরে একটি অনুকরণীয় গণতন্ত্র হিসাবে আন্তর্জাতিকস্তরে প্রশংসিত হয়েছে। কিন্তু ভারতে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক কিছু ঘটনাবলীর মাধ্যমে দেশের সমগ্র গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য মৌলিকভাবে ধ্বংস হচ্ছে। গণতন্ত্রে যে কোনওরকম সীমাবদ্ধতা, কেবল ভারতের জনগণের জন্য নয়, দেশের সম্প্রীতির জন্যও দুঃখজনক।“  

চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন, সাহিত্যিক অমিতাভ ঘোষ, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং অন্যান্য বিশিষ্টরা। চিঠিতে বিভিন্ন সাংবাদিক এবং সমাজকর্মীর কথা বলা হয়েছে, যারা কেবল বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনা করার জন্য গ্রেফতার হয়েছেন।

চিঠিতে স্বাধীন অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘নিউজক্লিক’-এর প্রতিষ্ঠাতা তথা এডিটর প্রবীর পুরকায়স্থের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ৭৫ বছর বর্ষীয় প্রবীর পুরকায়স্থ গত ৬ মাস ধরে জেলে বন্দী আছেন। এখনও কোনও চার্জশিট পেশ করা হয়নি।

চিঠিতে লেখা হয়েছে, 'পুরকায়স্থের অফিস এবং বাড়িতে বারবার তদন্ত চালানো হয়েছিল। কোনও প্রমাণ ছাড়াই তাঁকে অপরাধ দমনমূলক ধারায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ছয় মাস হয়ে গিয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে একটি অভিযোগের সপক্ষেও চার্জশিট পেশ করা হয়নি। এইভাবে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করা হচ্ছে।’

"অন্যদের আরও বেশি সময় ধরে কারাগারে রাখা হয়েছে। যেমন ভীমা-কোরেগাঁও মামলায় গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিরা পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিনা বিচারে কারাগারে বন্দী রয়েছেন (মেডিক্যাল বা প্রযুক্তিগত-আইনি গ্রাউন্ডে আদালত যাদের জামিন দিয়েছেন তাঁরা ছাড়া)", বলা হয়েছে চিঠিতে।

চিঠিতে দিল্লি দাঙ্গা মামলার অনেক অভিযুক্তর কথাও উল্লেখ করা হয়েছে, যারা বিনা বিচারে তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে কারাগারে বন্দী রয়েছেন।

চিঠিতে অমর্ত্য সেনের একটি পৃথক বিবৃতি রয়েছে, যেখানে তিনি তাঁর দেশের সহ নাগরিকদের উদ্দেশ্যে কলম ধরেছেন। তিনি লেখেন, “আমার নিজের দেশে জনগণের স্বাধীনতার এই গুরুতর লঙ্ঘনের আমি তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। যারা নিজেদের গণতান্ত্রিক বলে দাবি করেন, তাঁদের সকলের এই ধরণের কাজের তীব্র প্রতিবাদ জানানো উচিত।“

ব্রিটিশ শাসনের কথা উল্লেখ করে অর্থনীতিবিদ লেখেন, "বিট্রিশ শাসনে ভারতীয়দের প্রায়ই কোনও কারণ ছাড়াই গ্রেফতার করে বিনা বিচারে বছরের পর বছর জেলে আটকে রাখা হত। কম বয়সে এই সব ঘটনা দেখে আশা করেছিলাম একদিন ভারত মুক্ত হবে এবং এই সব অনাচারের অবসান ঘটবে। কিন্তু আজ মুক্ত গণতান্ত্রিক ভারতেও মানুষকে বিনা বিচারে বছরের পর বছর জেলে আটকে রাখা হচ্ছে।"

তিনি আরও বলেন, "সুশাসিত দেশ তৈরির আশা থাকা সত্ত্বেও আইনের অনেক অন্যায় ব্যবহার রয়েছে ভারতে। কিন্তু বিনা বিচারে কাউকে জেলবন্দী করা এবং তাঁর প্রতি অন্যায় আচরণ করা নিঃসন্দেহে সবচেয়ে জঘন্য অন্যায়ের মধ্যে একটি যা ভারতে এখন নিয়মিত ব্যবস্থায় পরিণত হয়েছে। আমরা খুব আশা করছি যে ভারতের বিচার ব্যবস্থা এই ধরণের বর্বরতা দূর করার জন্য সদর্থক হবে।”

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in