ঐতিহাসিক ধর্মীয় ব্যাখ্যা না-পসন্দ, লখনউতে দলিত অধ্যাপকের উপর হামলা ABVP-র

এক হিন্দু নারীকে ধর্ষণের কারণে মন্দির ভেঙেছিলেন আওরঙ্গজেব! এমন কোনো ব্যাখ্যা এবিভিপির ছাত্ররা মানতে রাজি হয়নি। অভিযোগ এরপরই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের নিয়ে অধ্যাপকের উপর চড়াও হয় তারা।
অধ্যাপককে ঘেরাও এবিভিপির ছাত্রদের
অধ্যাপককে ঘেরাও এবিভিপির ছাত্রদের ছবি সংগৃহীত
Published on

ফের উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের আক্রমণের মুখে দলিত অধ্যাপক। একটি ঐতিহাসিক ধর্মীয় কাহিনী বর্ণনা করায় বিজেপির ছাত্র সংগঠন এবিভিপি-র আক্রমণের মুখে পড়েছেন লখনৌ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তথা বিশিষ্ট চিন্তাবিদ ডঃ রবিকান্ত চন্দন।

এটি গত ১০ মে, মঙ্গলবারের ঘটনা। ওইদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে কাশী বিশ্বনাথ মন্দির এবং জ্ঞানব্যাপী মসজিদ নিয়ে তৈরী হওয়া বিতর্কে একটি বিশেষ আলোচনা করছিলেন অধ্যাপক চন্দন । আলোচনার মূল বিষয়বস্তু ছিল - "জ্ঞানব্যাপী সমীক্ষাঃ বিজেপিকে ২০২৪ সালের নির্বাচনে সুবিধা দেবে?"

আলোচনা চলাকালীন পট্টভি সীতারামাইয়ার লেখা "ফেদার্স অ্যান্ড স্টোন" থেকে একটি কাহিনী উল্লেখ করেন, যেটি ১৯৪৬ সালে জেলে বন্দী থাকাকালীন তিনি লিখেছিলেন। ঘটনাটি এইরকম - ঔরঙ্গজেব হিন্দু রাজা ও তাঁদের রাণীদের নিয়ে বারাণসীর উপর দিয়ে যাচ্ছিলেন। হিন্দু রানীরা গঙ্গাস্নান ও কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরে যান। সন্ধ্যায় সবাই ফিরে এলেও একজন ফেরেন না। তখন ঔরঙ্গজেবের নির্দেশে খোঁজ শুরু হয়। তাঁর খোঁজ মেলে বিশ্বনাথ মন্দিরের গর্ভগৃহে। সেখানে মন্দিরের এক পুরোহিত তাঁকে ধর্ষণ করে। এই খবর ঔরঙ্গজেবের কাছে গেলে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে মন্দির ভাঙার নির্দেশ দেন।"

এক হিন্দু নারীকে ধর্ষণের কারণে মন্দির ভেঙেছিলেন আওরঙ্গজেব! এমন কোনো ব্যাখ্যা এবিভিপির ছাত্ররা মানতে রাজি হয়নি। অভিযোগ এরপরই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের নিয়ে অধ্যাপকের উপর চড়াও হয় তারা। অধ্যাপককে হত্যার হুমকি দিয়ে 'গোলি মারো' স্লোগান তোলে এবিভিপি। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র অধ্যাপকের বিরুদ্ধে এফআইআরও করে।

এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক রবিকান্ত বলেন, তিনি আলোচনার পূর্বেই পট্টভির বইয়ের কথা উল্লেখ করেছেন।কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবে তাঁর সেই কথা কেটে একটি নির্দিষ্ট অংশ সোস্যাল মিডিয়ায় ছড়াচ্ছে এবিভিপির ছেলেরা। দলিত বলে তাঁর কণ্ঠ রোধ করা হচ্ছে। তিনি হিন্দুধর্মের কোনো অপমান করেননি। তিনি আম্বেদকরের চিন্তা, আদর্শের অনুগামী।

হিন্দুত্ববাদীদের আক্রমণ থেকে নিজেকে বাঁচাতে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোক্টরের ঘরে আশ্রয় নেন এবং সেখান থেকেই ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে পুরো ঘটনার ভিডিও দেখানোর দাবি জানান।

এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক রাজীব কুমার বলেন, রবিকান্ত কোনো অন্যায় করেননি। তিনি শুধুমাত্র আলোচনা সভায় পট্টভির লেখা কাহিনির উল্লেখ করেছিলেন।

বিভিন্ন শিক্ষবিদসহ বিশিষ্টজনেরা অধ্যাপক চন্দন ও তাঁর পরিবারের নিরাপত্তার দাবির পাশাপাশি অবিলম্বে অপরাধীদের শাস্তির দাবি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। ডঃ রূপরেখা বর্মা, প্রভাত পট্টনায়েক, রামকৃষ্ণ চ্যাটার্জী, মধু গর্গ, বন্দনা মিশ্র, রমেশ দীক্ষিত, বীরেন্দ্র যাদব, কৌশল কিশোর, আদিত্য মুখার্জী, দীপক কবীর, নাদিম হাসনেইনসহ ৬০ জন প্রতিবাদী বিবৃতিতে সাক্ষর দিয়েছেন।

SUPPORT PEOPLE'S REPORTER

ভারতের প্রয়োজন নিরপেক্ষ এবং প্রশ্নমুখী সাংবাদিকতা — যা আপনার সামনে সঠিক খবর পরিবেশন করে। পিপলস রিপোর্টার তার প্রতিবেদক, কলাম লেখক এবং সম্পাদকদের মাধ্যমে বিগত ১০ বছর ধরে সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে। এই কাজকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন আপনাদের মতো পাঠকদের সহায়তা। আপনি ভারতে থাকুন বা দেশের বাইরে — নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে একটি পেইড সাবস্ক্রিপশন নিতে পারেন। স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in