
৭২ ঘন্টা পার, এখনও তেলেঙ্গানায় ধসে পড়া সুড়ঙ্গে আটকে রয়েছেন ৮ জন শ্রমিক। সুড়ঙ্গের ভিতরে বিস্তর এলাকাজুড়ে কাদা, মাটির পরিমাণ আরও এক মিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। যার কারণে উদ্ধারকারীরা খনন কাজ সাময়িক ভাবে বন্ধ রেখেছে। অন্যদিকে, চার দিন অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও এখনও পর্যন্ত সুড়ঙ্গের ভিতরে আটকে পড়া শ্রমিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। ফলে উদ্বেগ বাড়ছে।
উদ্ধারকারী দল জানাচ্ছে, এই পরিস্থিতিতে খননের ফলে বিপদ আরও বাড়তে পারে। কেবল আটকে পড়া শ্রমিকদেরই নয়, বিপদ হতে পারে উদ্ধারকারীদেরও। প্রতি মিনিটে প্রায় ৩২০০ লিটার জল সুড়ঙ্গ দিয়ে বইছে। যা বিপুল পরিমাণে বালি, পাথর এবং কাদা বয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে সুড়ঙ্গের ভিতরে কাদার পরিমাণ বাড়ছে। এই প্রসঙ্গে সোমবার অষ্ট্রেলিয়ার এক টানেল বিশেষজ্ঞ ক্রিস কুপার জানান, পুরো এলাকাটি ভয়াবহ বলে মনে হচ্ছে। এখানে ভারী খননকাজ চালানো খুবই বিপজ্জনক।
অন্যদিকে, সুড়ঙ্গে আটকে পড়া শ্রমিকদের উদ্ধার করতে মঙ্গলবারই ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে আরও একটি ‘র্যাট হোল মাইনার’ দল। এই দলের নেতৃত্বে রয়েছেন মুন্না কুরেশি। যিনি ২০২৩ সালে উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশীর সিল্কিয়ারা সুড়ঙ্গে আটকে পড়া ৪১ জন শ্রমিককে উদ্ধার করেছিলেন। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যর্থ হয়েছিল সেবার। ১৩ দিন পর ৪১ জন শ্রমিককে উদ্ধার করেছিল মুন্না ও তাঁর দল। এবারেও আটজন শ্রমিকদের জীবিত এবং সশরীরে উদ্ধার করতে ডাক পড়ল সেই মুন্নার। ঘটনাস্থলে গিয়ে গোটা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখছেন মুন্না নিজেই।
সিল্কিয়ারা টানেল অভিযানে অংশ নেওয়া আর একটি দল সোমবারই ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। প্রায় এগারোটি উদ্ধারকারী দল ইতিমধ্যেই উদ্ধার অভিযানে নিযুক্ত রয়েছে। জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া এবং ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক্যাল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের বিশেষজ্ঞদেরও পরিস্থিতির মূল্যায়ন করার জন্য নিযুক্ত করা হয়েছে।
শনিবার থেকে শ্রীশৈলম বাঁধের কাছে ধসে পড়া সুড়ঙ্গে আটকে রয়েছেন ৮ জন শ্রমিক। তেলেঙ্গানার মন্ত্রী তথা কংগ্রেস বিধায়ক জুপাল্লি কৃষ্ণ রাও সোমবার জানিয়েছিলেন, "৮ জনের মধ্যে ৪ জন শ্রমিক এবং ৪ জন নির্মাণ সংস্থার কর্মী রয়েছেন। সকলের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। প্রচুর পরিমাণে জল ও কাদা থাকায় উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে। সুড়ঙ্গের ভেতরে অনেক উঁচুতে কাদা জমে আছে যার ফলে হাঁটা অসম্ভব হয়ে পড়ছে। তবে আমরা এখনও আশা ছাড়ছি না"।
আটকে পড়া শ্রমিকদের মধ্যে সন্দীপ শাহু, জেগতা জেস, সন্তোষ শাহু এবং অনুজ শাহু – এই চারজন ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা। উত্তরপ্রদেশের দু’জন বাসিন্দা রয়েছেন – মনোজ কুমার এবং শ্রী নিবাস। এছাড়া রয়েছে জম্মু ও কাশ্মীরের সানি সিং এবং পাঞ্জাবের গুরপ্রীত সিং।
মুখ্যমন্ত্রী রেভান্ত রেড্ডি জানিয়েছেন, তিনি সারাক্ষণ পরিস্থিতির উপর নজর রাখছেন। উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের কাছ থেকে প্রতিমুহূর্তের আপডেট নিচ্ছেন। দ্রুত সুড়ঙ্গ থেকে জল বের করা ও অক্সিজেন সরবরাহের জন্য অনুরোধ করেছেন।
প্রসঙ্গত, গত ২২ ফেব্রুয়ারি অর্থাৎ শনিবার সকালে ধস নামে তেলেনাঙ্গার নাগারকুর্নুল জেলার শ্রীশৈলম বাঁধের কাছে নির্মীয়মাণ একটি সুড়ঙ্গে। প্রশাসন জানায়, সুড়ঙ্গের ১৪ কিলোমিটার পয়েন্টের বামদিকের ছাদটি ৩ মিটার পর্যন্ত ধসে পড়ে। অনেকে পালিয়ে গেলেও ৮ শ্রমিক আটকে পড়েন।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন