
চেহারা আর উচ্চতাই সব নয় - এ কথার জীবন্ত প্রমাণ আইএএস অফিসার আরতি ডোগরা। মাত্র ৩.৫ ফুট উচ্চতা হওয়া সত্ত্বেও তিনি আজ রাজ্যের শীর্ষ প্রশাসনিক পদে আসীন। একসময় যাঁকে রাস্তাঘাটে দেখে মানুষ হাসতেন, যাঁর ভবিষ্যৎকে অবহেলা করা হয়েছিল, সেই আরতিই আজ হয়ে উঠেছেন দেশের লক্ষ লক্ষ তরুণ-তরুণীর অনুপ্রেরণা।
দেরাদুনের বাসিন্দা আরতি শারীরিক গড়নে ছোট হলেও মনের জোরে ছিলেন অদম্য। তাঁর উচ্চতা থেমে গিয়েছিল ৩.৫ ফুটেই। চারপাশের কটাক্ষ, অবহেলা, এমনকি হাসাহাসিও তাঁকে পিছু হটাতে পারেনি। আরতি জানতেন, তাঁর জীবনের লক্ষ্য শরীর নির্ধারণ করবে না, বরং তাঁর স্বপ্ন ও পরিশ্রম।
আরতিকে সবসময় উৎসাহ দিতেন তাঁর বাবা-মা। তাঁর বাবা কর্নেল রাজেন্দ্র ডোগরা এবং মা কুমকুম ডোগরা ছিলেন স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা। তারা তাকে অন্য যেকোনো শিশুর মতো পড়াশোনা, খেলা এবং স্বপ্ন দেখতে উৎসাহিত করেছিলেন। তাদের বিশ্বাসই তার ভিত্তি হয়ে ওঠে।
ছোট থেকেই পড়াশোনায় উজ্জ্বল ছিলেন আরতি। দেরাদুনে স্কুলের পড়াশোনা শেষ করে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হন এবং পরবর্তীতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। কিন্তু তাঁর স্বপ্ন ছিল দেশসেবা। সেই লক্ষ্য স্থির করেন ইউপিএসসি সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা।
যদিও মানুষ সন্দেহ প্রকাশ করছিল—এত ছোট গড়নের একজন মেয়ে কী করে দায়িত্ব সামলাবেন? কিন্তু আরতি সন্দেহকে দৃঢ়সংকল্পে পরিণত করতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিল। তিনি অক্লান্তভাবে পড়াশোনা করেছিলেন, তার সীমাবদ্ধতার উপর নয় বরং তার ক্ষমতার উপর মনোযোগ দিয়েছিলেন।
আইএএস হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর একের পর এক ক্ষেত্রে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করেছেন আরতি ডোগরা। বুন্দি, বিকানের ও আজমের-এর জেলা শাসক ছিলেন তিনি। যোধপুর বিদ্যুৎ বিতরণ নিগম লিমিটেড-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে তাঁর কাজ এতই প্রশংসনীয় হয়েছিল যে রাষ্ট্রপতি পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।
পরবর্তীতে তিনি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলটের যুগ্ম সচিব ও বিশেষ সচিব পদে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তি ও যোগাযোগ দপ্তরের সচিব -এর দায়িত্বে রয়েছেন আরতি।
বর্তমানে মানুষ আরতি ডোগরাকে উচ্চতা নয় তাঁর সাফল্য এবং আত্মবিশ্বাস দেখে অনুপ্রেণীত হন। নিজের উচ্চতা পাল্টাননি, বরং পাল্টে দিয়েছেন সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন