
কাজ হচ্ছে না প্রশাসনের পদক্ষেপেও। রাজস্থানের কোটায় বেড়েই চলেছে পড়ুয়া আত্মহত্যার সংখ্যা। গত ২৪ ঘন্টায় দুই পড়ুয়া আত্মঘাতী হয়েছেন। মধ্যপ্রদেশ ও হরিয়ানার বাসিন্দা ওই দুই পড়ুয়াই জয়েন্টের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। একদিনের মধ্যে দুই পড়ুয়ার দেহ উদ্ধার নিয়ে শোরগোল পড়েছে। লাগাতার আত্মহত্যার ঘটনায় প্রশাসনের পদক্ষেপ নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
মধ্যপ্রদেশের গুনার বাসিন্দা ২০ বছরের অভিষেক। গত বছর মে মাসে কোটায় জয়েন্টের কোচিংয়ের জন্য এসেছিলেন। কোচিং সেন্টারের কাছেই ডাকানিয়া এলাকায় একটি বাড়িতে পেয়িং গেস্ট হিসাবে থাকতেন তিনি। জানা গেছে, বুধবার সন্ধ্যায় ওই বাড়ি থেকেই অভিষেকের মৃতদেহ উদ্ধার হয়।
বাড়ি মালিক জানিয়েছেন, প্রতিদিনের মতো এদিনও কোচিং সেন্টার থেকে ফিরে ঘরে ঢোকেন অভিষেক। তারপর থেকে তাঁর কোনও সাড়া শব্দ না পাওয়ায় আতঙ্কিত হয়ে পুলিশকে খবর দেন তিনি। পুলিশ জানিয়েছে, বুধবার রাত পৌনে ৮ টা নাগাদ খরব পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে তারা। দরজা ভেতর থেকে বন্ধ ছিল। দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকতেই দেখা যায় সিলিং ফ্যান থেকে ঝুলছে অভিষেকের দেহ। সঙ্গে সঙ্গে উদ্ধার করে ঘটনাস্থলে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করে।
প্রাথমিক তদন্তে আত্মহত্যা বলেই মনে করছে পুলিশ। অভিষেকের কোনও মানসিক অবসাদ ছিল কিনা, পরীক্ষার কোনও চাপ ছিল কিনা, সেই সমস্ত বিষয় খতিয়ে দেখছে পুলিশ। এবিষয়ে পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গেও কথা বলছেন তারা। তবে অভিষেকের ঘর থেকে উদ্ধার হয়নি কোনও সুইসাইড নোট, তেমনটাই পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
অন্যদিকে, ওই একই এলাকায় মঙ্গলবার গভীর রাতে আত্মহত্যা করেন আরও এক পড়ুয়া। হরিয়ানার বাসিন্দা ১৯ বছরের নীরজ থাকতেন হোস্টেলে। সেখান থেকেই তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়েছে। নীরজও জয়েন্ট এন্ট্রান্সের জন্য পড়াশোনা করছিলেন। ২৪ ঘন্টার মধ্যে পরপর দুই পড়ুয়ার আত্মহত্যার খবর প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
আত্মহত্যা মোকাবিলায় প্রশাসনের তরফ থেকে একাধিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সমস্ত হোস্টেল এবং পিজিতে অ্যান্টি-সুইসাইড ডিভাইস স্থাপন করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এটি হল একটি স্প্রিংয়ের মতো কাঠামো যা সিলিং ফ্যানের সাথে সংযুক্ত থাকে। যখন ২০ কিলোর বেশি ওজনের কোনো জিনিস ফ্যানের সঙ্গে ঝোলানো হয়, তখন এটির সাথে সংযুক্ত স্প্রিংটি প্রসারিত হয় এবং সাইরেন বাজতে শুরু করে। এছাড়াও কোচিং সেন্টারগুলিকেও পড়ুয়াদের মানসিক অবস্থার দিকে নজর রাখতে বলা হয়েছে। রাজ্য প্রশাসন পড়ুয়াদের কাউন্সেলিংয়েরও ব্যবস্থা করেছে। তারপরও কেন কমছে না এই ধরণের ঘটনা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
পাশাপাশি, পুলিশের পদক্ষেপ নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। বেশ কিছুদিন আগে কোটার পুলিশ একটি রিপোর্ট পেশ করে। সেই রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৩-এর থেকে ২০২৪ সালে আত্মহত্যার সংখ্যা অনেক কম। ২০২৪ সালে কোটায় ১৭ টি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে, সেখানে ২০২৩ সালে ঘটেছিল ২৬ টি।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন