India-UK Free Trade: মদ, চকোলেট সস্তা - মুক্ত বাণিজ্যচুক্তিতে কী লাভ ভারতের? ব্রিটেনই বা কী পাচ্ছে?

People's Reporter: বৃহস্পতিবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ব্রিটেন সফরকালে কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল এবং ব্রিটেনের বাণিজ্য সচিব জোনাথন রেনল্ডস এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন।
মুক্ত বাণিজ্যচুক্তি স্বাক্ষরকালীন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী এবং বাণিজ্যমন্ত্রী
মুক্ত বাণিজ্যচুক্তি স্বাক্ষরকালীন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী এবং বাণিজ্যমন্ত্রীছবি - নরেন্দ্র মোদীর এক্স হ্যান্ডেল
Published on

মুক্ত বাণিজ্যচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে ভারত ও ব্রিটেনের মধ্যে। বৃহস্পতিবার এই দ্বিপাক্ষিক চুক্তির কথা ঘোষণা করেছেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ব্রিটেন সফরকালে কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল এবং ব্রিটেনের বাণিজ্য সচিব জোনাথন রেনল্ডস এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন। এর ফলে বছরে দুই দেশের মধ্যে ৩,৪০০ কোটি ডলারের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য হবে।

২০২০ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছেড়ে বেরিয়ে আসার পর কোনও দেশের সঙ্গে এটাই সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক চুক্তি হতে চলেছে ব্রিটেনের। উভয় দেশই এটিকে অর্থনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক বলে অভিহিত করেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই চুক্তিকে সমৃদ্ধির একটি নতুন রোডম্যাপ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি আশা করেছেন, এটি কৃষক থেকে শুরু করে ছোট ব্যবসা এবং পেশাদারদের বিস্তৃত পরিসরের অংশীদারদের উপকৃত করবে।

এই দ্বিপাক্ষিক চুক্তির ফলে, বস্ত্র, রত্ন, অলংকার, সামুদ্রিক খাবার, চামড়াজাত পণ্য, প্রকৌশল পণ্য এবং প্রক্রিয়াজাত খাবারের মতো ভারতীয় রপ্তানি এখন ব্রিটেনে প্রায় শূন্য শুল্ক সুবিধা উপভোগ করবে।

মুক্ত বাণিজ্যের ফলে ভারত কী কী লাভ পেতে চলেছে -

১। ব্রিটেনে তৈরি বা ব্রিটেন থেকে আমদানিকৃত চিকিৎসা সরঞ্জাম, বিমান সরঞ্জাম ভারতীয় নাগরিক এবং ভারতীয় সংস্থাগুলির জন্য আগের চেয়ে সস্তা হবে।

২। ব্রিটেনে তৈরি পানীয় (সফ্‌ট ড্রিঙ্ক্‌স), চকোলেট, সাজগোজের সরঞ্জাম, বিস্কুট, গাড়ি, ভেড়া এবং স্যামন মাছ ভারতীয়দের জন্য অনেক সহজলভ্য হবে। এতদিন এই সমস্ত পণ্যে ১৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর থাকত। এই চুক্তি স্বাক্ষরের পর তা কমে দাঁড়াবে ৩ শতাংশে। এছাড়া বৈদ্যুতিক গাড়ির শুল্ক ১১০ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নেমে আসবে।

৩। মুক্ত বাণিজ্যিক চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর ব্রিটিশ সংস্থাগুলির পক্ষে হুইস্কি এবং অন্যান্য পণ্য ভারতে রফতানি করা সহজ হবে। আমদানি শুল্ক ১৫০ শতাংশ থেকে ৭৫ শতাংশে নেমে আসবে। আগামী ১০ বছরে তা কমে আসবে ৪০ শতাংশে।

৪। এর ফলে আগামী দু'বছরে চামড়া শিল্প ব্রিটেনের বাজারের অতিরিক্ত ৫ শতাংশ দখল করবে। ২০৩০ সালের মধ্যে ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ইলেকট্রনিক্স রপ্তানি দ্বিগুণ হবে। আগামী অর্থবছরের রাসায়নিক রপ্তানি ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। চুক্তি কার্যকর হওয়ার পরে সফ্টওয়্যার পরিষেবা বার্ষিক ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে।

৫। ব্রিটেনে ভারতীয়দের বসবাস আরও সুবিধাজনক হবে।

৬। ব্রিটেনের ৩৫টি সেক্টরে দু'বছরের জন্য কোনও অফিস ছাড়াই কাজ করতে পারবেন ভারতীয়রা। এতে বছরে ৬০ হাজার তথ্যপ্রযুক্তি কর্মীর সুবিধা হতে পারে। লাভ হবে টিসিএস, ইনফোসিস, টেক মাহিন্দ্রা, এইচসিএল এবং উইপ্রো-র মতো সংস্থার।

৭। এই চুক্তির ফলে ফ্রিল্যান্সার, শেফ, সঙ্গীতজ্ঞ, যোগ প্রশিক্ষক এবং চুক্তিভিত্তিক কর্মীরা নতুন সুযোগ গ্রহণ করতে সক্ষম হবেন।

৮। ব্রিটেনের সামাজিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত খরচ থেকেও ভারতীয়েরা তিন বছরের জন্য অব্যাহতি পাবেন।

মুক্ত বাণিজ্যের ফলে ব্রিটেন কী কী লাভ পেতে চলেছে -

১। ব্রিটেনের পণ্যে ভারত যা শুল্ক নিয়ে থাকে, তা অনেকটা কমে আসবে এই চুক্তির ফলে। অন্তত ৯০ শতাংশ শুল্ক হ্রাস নিশ্চিত করা হবে এর ফলে। যার মধ্যে ৮৫ শতাংশ আগামী দশ বছরে সম্পূর্ণ শুল্কমুক্ত হবে।

২। ভারতের বাজারে ব্যবসার ক্ষেত্রে বেশ কিছু বাড়তি সুবিধা পাবে ব্রিটেন।

৩। ২০ লক্ষের বেশি মূল্যের সরকারি টেন্ডারে (সংবেদনশীল নয় এমন) যোগ দিতে পারবে ব্রিটেনের বিভিন্ন সংস্থা। এর অর্থ হল, প্রতি বছরে ৪০ হাজার টেন্ডারে যোগ দেওয়ার সুযোগ পাবে ব্রিটেন, যার মূল্য চার লক্ষ কোটি টাকার বেশি।

৪। এই বাণিজ্যচুক্তির ফলে ২০০০-এরও বেশি নতুন চাকরির সুযোগ তৈরি করতে পারবে ব্রিটেন। এর ফলে ব্রিটেন কর্মচারীদের রোজগার বছরে ২.২ বিলিয়ন ডলার মজুরি বৃদ্ধি পেতে পারে।

৫। চুক্তিতে আর্থিক পরিষেবা এবং বৌদ্ধিক সম্পত্তির উপর নিবেদিত অধ্যায়ও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ব্রিটেনের সংস্থাগুলি আর্থিক খাতে ভারতীয় সংস্থাগুলির সমানভাবে চিকিৎসা পাবে। চুক্তিতে ভারতের জেনেরিক ওষুধ উৎপাদনের নিয়ম কঠোর করতে পারে এমন উদ্বেগের সমাধান করা হয়েছে। পাশাপাশি আশ্বাস দেওয়া হয়েছে সাশ্রয়ী মূল্যের ওষুধ পাওয়ার।

৬। জামাকাপড়, জুতো এবং বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রীর দাম কমবে ব্রিটেনে।

মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের পর ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার বলেন, এটি একটি বড় জয়। এর ফলে হাজার হাজার কর্মসংস্থান তৈরি হবে। তিনি আরও জানিয়েছেন, এই চুক্তি কার্যকর হলে ব্রিটেনের অর্থনীতিতে আরও বিনিয়োগ আসবে। বৃহত্তর বাণিজ্য সম্পৃক্ততার অংশ হিসাবে, ২৬টি ব্রিটেনের কোম্পানি ভারতে নতুন ব্যবসায়িক উদ্যোগ চালু করবে।

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in