ইরানকে ‘নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ’-এর হুঁশিয়ারি ট্রাম্পের! পাল্টা 'যুদ্ধ শুরু'র হুঙ্কার খামেনেইয়ের

People's Reporter: ট্রাম্পের দাবি, ‘‘আমরা জানি ‘সর্বোচ্চ নেতা’ ঠিক কোথায় লুকিয়ে রয়েছেন! সেখানে তিনি নিরাপদে রয়েছেন। আমরা তাঁকে খুঁজে বার করব না বা হত্যা করব না! অন্তত এখন নয়"।
ডোনাল্ড ট্রাম্প, বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু, আয়াতোল্লা আলি খামেনেই (বাঁদিক থেকে)
ডোনাল্ড ট্রাম্প, বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু, আয়াতোল্লা আলি খামেনেই (বাঁদিক থেকে)গ্রাফিক্স - সুমিত্রা নন্দন
Published on

ইরান-ইজরায়েলের সংঘাতের মধ্যে মঙ্গলবার রাতে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লা আলি খামেনেইকে ‘নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ’-এর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্পের আরও হুঁশিয়ারি, ইরান যদি কোনওভাবে আমেরিকার উপর হামলা চালানোর চেষ্টা করে, তাহলে ইরানকে তছনছ করে দেওয়া হবে। এর পাল্টা জবাব দিয়েছেন খামেনেই। 'যুদ্ধ শুরু' বলে জানিয়েছেন তিনি। এছাড়া তিনি ইজরায়েলকে 'সন্ত্রাসী ইহুদি সরকার' বলেও অ্যাখ্যা দেন।

মঙ্গলবার রাতে ট্রাম্প নিজের সমাজমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে কয়েকটি পোস্ট শেয়ার করেন। যেখানে তিনি একটি পোস্টে লেখেন, ‘নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ’। অন্য একটি পোস্টে তিনি লেখেন, ‘‘অসামরিক নাগরিক বা আমেরিকান সৈন্যদের উপর ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ চাই না। কিন্তু আমাদের ধৈর্য ক্রমশ ভেঙে পড়ছে"। ট্রাম্পের দাবি, ‘‘আমরা জানি ‘সর্বোচ্চ নেতা’ ঠিক কোথায় লুকিয়ে রয়েছেন! সেখানে তিনি নিরাপদে রয়েছেন। আমরা তাঁকে খুঁজে বার করব না বা হত্যা করব না! অন্তত এখন নয়"। তেহরানকে আত্মসমর্পণের বার্তা দিয়ে ট্রাম্প কার্যত ইজরায়েলের সুরেই হুমকি দিয়ে বলেছেন, ‘‘ইরানের আকাশ এখন আমাদের দখলে"।

জানা গেছে, মঙ্গলবার ইরানকে হুঁশিয়ারি দেওয়ার পরেই হোয়াইট হাউসে মার্কিন গোয়েন্দাদের সঙ্গে বৈঠক করেন ট্রাম্প। সেই বৈঠকে আমেরিকার পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

অন্যদিকে, ট্রাম্পের পোস্টের কয়েক ঘন্টা পরেই এক্স হ্যান্ডেলে একাধিক পোস্ট করেন খামেনেই। যদিও তিনি তাঁর পোস্টে সরাসরি ট্রাম্প বা আমেরিকাকে নিশানা করেননি। খামেনেই ফার্সি ভাষায় নিজের এক্সের একটি পোস্টে লেখেন 'যুদ্ধ শুরু'। সেখানে একটি ছবিও শেয়ার করেন তিনি। যেখানে দেখা যাচ্ছে, এক ব্যক্তি তলোয়ার হাতে একটি দূর্গের প্রবেশদ্বারের সামনে দাঁড়িয়ে। তাঁর পিছনে রয়েছেন অনুগামীরা। আকাশ থেকে উল্কা ঝরছে! যদিও কার বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু, তা ওই পোস্টে অবশ্য স্পষ্ট করা হয়নি।

এর পরে একটি পোস্টে ইজরায়েলকে নিশানা করেছেন খামেনেই। পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘‘আমাদের অবশ্যই সন্ত্রাসী ইহুদিবাদী শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে কঠোর জবাব দিতে হবে। আমরা কোনও ইহুদিবাদীদের প্রতি দয়া দেখাব না!’’

তবে শুধু ট্রাম্প নয়, ইজরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইজরায়েল কাৎজ মঙ্গলবার খামেনেইকে হত্যার হুঁশিয়ারি দেয়। ইজরায়েল কাৎজ ইরাকের ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হুসেনের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘‘প্রতিবেশী দেশের স্বৈরাচারী শাসকের কী চরম পরিণতি হয়েছিল, ইরান যেন তা মনে রাখে। সাদ্দামের মতো পরিণতি খামেনেইয়েরও হতে পারে"।

রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুসারে, ইজরায়েল সরকার খামেনেইকে খুন করতে সক্রিয় ছিল। ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, তাঁর মতে খামেনেইকে হত্যা করতে পারলেই ইরান-ইজরায়েল সংঘাত শেষ হবে। যদিও নেতানিয়াহুর সরকারের এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

গত শুক্রবার ইরানে প্রথম হামলা চালায় ইজরায়েল। তাদের দাবি, পরমাণু বোমা তৈরির দোড়গোড়ায় পৌঁছে গিয়েছিল ইরান। তাই নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার্থেই তাদের এই হামলা।  ইরানের এই পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে খুশি নয় আমেরিকাও। তাই সংঘাতের প্রথম থেকেই ইজরায়েলের পাশে দাঁড়িয়েছে আমেরিকা। ইরান-ইজরায়েল সংঘাতের মধ্যে খামেনেই কোথায়, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছিল। সংবাদমাধ্যম ইরান ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, উত্তর-পূর্ব তেহরানে একটি বাঙ্কারে সপরিবারে আশ্রয় নিয়েছেন খামেনেই।

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in