
রবিবার মধ্যরাতে জোরালো ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল আফগানিস্তান। এর জেরে মৃত্যু হয়েছে কমপক্ষে ৬২২ জনের। আহত ১৫০০-এরও বেশি। প্রশাসনের আশঙ্কা, ধ্বংসস্তূপের নীচে চাপা রয়েছেন বহু মানুষ। তৎপরতার সঙ্গে শুরু হয়েছে উদ্ধারকাজ। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আফগান জনস্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, লাঘমান এবং নানগরহর প্রদেশে কমপক্ষে ৩৩০ জন আহত হয়েছেন। যার মধ্যে নানগরহর প্রদেশে আহতের সংখ্যা ২৫০ জন। নিহতের সংখ্যা ৯ বলে জানা গেছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের মুখপাত্র শরাফাত জামান বলছেন, ‘‘যা মনে হচ্ছে, হতাহতের সংখ্যা অনেক বেশি। কিন্তু অপেক্ষাকৃত দুর্গম এলাকাগুলিতে উদ্ধারকারী দলকে পৌঁছোতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। তাই সঠিক সংখ্যা এখনও জানা যাচ্ছে না। উদ্ধারকাজ চলছে।’’
ভূমিকম্পে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলির মধ্যে রয়েছে নুর গুল, সোকি, ওয়াটপুর, মানোগি এবং চাপাদরে। ধসে পড়েছে ঘরবাড়ি। বিবিসি-র প্রতিবেদন অনুযায়ী, শুধুমাত্র কুনার গ্রামে নিহত কমপক্ষে ২০ জন এবং ৩৫ জন আহত।
সরকার জানিয়েছে, ভূমিকম্পের ফলে পূর্বাঞ্চলীয় বেশ কয়েকটি প্রদেশে প্রাণহানি ও সম্পত্তির ক্ষতি হয়েছে। বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, কর্মকর্তা এবং স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছেন। রাজধানী কাবুল এবং পার্শ্ববর্তী প্রদেশগুলি থেকে ত্রাণ দল মোতায়েন করা হয়েছে।
অন্যদিকে, পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া লাগোয়া সীমান্তবর্তী পাহাড়ি এলাকাগুলিতে ইতিমধ্যে উদ্ধারকাজ শুরু হয়েছে। প্রাদেশিক তথ্য প্রধান নাজিবুল্লাহ হানিফের কথায়, ‘‘এখনও পর্যন্ত শয়ে শয়ে আহতকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।’’
রবিবার স্থানীয় সময় রাত ১১টা ৪৭ মিনিট (ভারতীয় সময় রাত পৌনে ১টা) নাগাদ কম্পন অনুভূত হয় আফগানিস্তানে। ন্যাশনাল সেন্টার ফর সিসমোলজি জানিয়েছে, রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৬.৩। যদিও মার্কিন ভূতাত্ত্বিক সর্বেক্ষণ জানিয়েছে, কম্পনের মাত্রা ছিল ৬। জালালাবাদের উত্তরপূর্বে, ২৭ কিলোমিটার দূরে নানগড়হার প্রদেশে প্রথম কম্পন শুরু হয়। ভূপৃষ্ঠ থেকে মাত্র আট কিলোমিটার গভীরে ছিল কম্পনের উৎস।
এরপর বেশ কয়েকবার পরবর্তী কম্পন (আফটারশক) অনুভূত হয়েছে। ভারতীয় সময় অনুযায়ী রাত ১টা ৫৯ মিনিটে ৪.৩ মাত্রা, সোমবার ভোর ৩টে ৩ মিনিটে ৫ মাত্রা এবং ভোর ৫টা ১৬ মিনিটে ৫ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে আফগানিস্তানে। প্রতিটির গভীরতা ছিল ভূমিপৃষ্ঠ থেকে ১০-৪০ কিলোমিটারের মধ্যে।
আফগানিন্তানের নানাগরহর প্রদেশ পাকিস্তান সীমান্ত লাগোয়া। পাকিস্তানের কিছু এলাকাতেও কম্পন অনুভূত হয়েছে। মৃদু কম্পন অনুভূত হয়েছে ভারতের জম্মু ও কাশ্মীর এবং দিল্লির আশপাশের এলাকাতেও।
এর আগে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর জোরালো ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছিল আফগানিস্তানে। যার মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৬.৩। সেই সময় তালিবান সরকারের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছিল চার হাজার। যদিও রাষ্ট্রপুঞ্জ জানায়, মৃতের সংখ্যা দেড় হাজারের কিছু বেশি।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন