
জল্পনার অবসান। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নয়! চলতি বছর শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাচ্ছেন ভেনেজুয়েলার মারিয়া কোরিনা মাচাদো। দীর্ঘদিন ধরে সে দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে তাঁর ভূমিকার জন্যই এই সম্মান পাচ্ছেন তিনি বলে জানিয়েছে নোবেল কমিটি। শুক্রবার অসলোতে মারিয়ার নাম ঘোষণা করা হয়েছে। চলছি সপ্তাহের মঙ্গলবারই ছিল তাঁর জন্মদিন।
চলতি বছর নোবেল শান্তিতে ৩৩৮টি মনোনয়ন জমা পড়েছিল। যার মধ্যে ৯৪ টি ছিল সংগঠন হিসেবে এবং বাকিগুলি ব্যক্তিগত ভাবে। এমনকি এই তালিকায় নাম ছিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের।
নরওয়ের নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান জর্গেন ওয়াটনে ফ্রাইডনেস পুরস্কার ঘোষণার সময় বলেন, “মাচাদো এমন এক নেতৃত্বের প্রতীক, যিনি বিভক্ত রাজনৈতিক বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ করেছেন। যেখানে লক্ষ্য ছিল একটাই - মুক্ত ও সুষ্ঠু নির্বাচন এবং জনগণের প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা।”
তিনি আরও বলেন, “গত এক বছরে তাঁকে গোপনে বসবাস করতে হয়েছে। প্রাণনাশের হুমকি সত্ত্বেও দেশ ত্যাগ না করে তিনি থেকে গেছেন। তাঁর এই সাহস লক্ষ লক্ষ মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছে। যখন একনায়কতন্ত্র ক্ষমতা দখল করে নেয়, তখন এমন সাহসী স্বাধীনতার রক্ষকদের স্বীকৃতি দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
ভেনেজুয়েলার এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হলেন মারিয়া। ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করেছেন তিনি। বহু বছর ধরে ভেনেজুয়েলার স্বৈরশাসক নিকোলাস মাদুরোর সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার। গণতন্ত্রের দাবিতে মারিয়ার আন্দোলন তাঁকে দেশজুড়ে ও আন্তর্জাতিক পরিসরে প্রতিরোধের প্রতীক করে তুলেছে। ২০১৩ সালে ভেনেজুয়েলায় উদার রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠিত হয়। যার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা হলেন মারিয়া।
তাঁর রাজনৈতিক যাত্রা নানা বাধা ও নির্যাতনে ভরা। বহুবার গ্রেপ্তার, হুমকি ও রাজনৈতিক নিপীড়নের মুখে পড়তে হয়েছে তাঁকে। সর্বশেষ নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা থাকলেও সরকার তাঁকে অযোগ্য ঘোষণা করে। এরপর তাঁর জায়গায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এডমুন্ডো গনসালেস, যিনি আগে কখনও রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন না।
নির্বাচনের পর থেকেই মারিয়া আত্মগোপনে আছেন। তাঁকে সর্বশেষ প্রকাশ্যে দেখা গেছে জানুয়ারিতে। তাঁর সহকর্মী গনসালেসের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলে তিনি দেশ ছাড়েন এবং পরে স্পেনে আশ্রয় পান।
নোবেল কমিটি জানিয়েছে, ভেনেজুয়েলার বর্তমান সংকট গণতন্ত্রের জন্য এক কঠিন পরীক্ষার সময়। সেই প্রেক্ষাপটে মাচাদোর সাহস ও দৃঢ়তা গোটা বিশ্বের কাছে স্বাধীনতার এক উজ্জ্বল উদাহরণ।
উল্লেখ্য, নোবেল শান্তি পুরস্কার একমাত্র পুরস্কার যা নরওয়ের রাজধানী অসলোতে প্রদান করা হয়। গত বছর এই পুরস্কার পেয়েছিল ‘নিহন হিদানকিয়ো’। জাপানের পারমাণবিক হামলায় আহতদের জন্য কাজ করা একটি সংগঠন। যারা দীর্ঘদিন ধরে পারমাণবিক অস্ত্রবিরোধী আন্দোলন চালিয়ে আসছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন