
প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি ইস্তফা দেওয়ার পরে নেপালের শাসনভার নিয়েছে সেনা। কিন্তু তারপরেও পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি পরিস্থিতি। মঙ্গলবারই আনুষ্ঠানিকভাবে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, নতুন সরকার গঠন না হওয়া পর্যন্ত দেশের শাসনভার চালাবে সেনা। পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক করতে দেশ জুড়ে কার্ফু জারি করা হয়েছে সেনার তরফে। বুধবার সকাল থেকে কোনও বড় ধরনের অশান্তির খবর না পাওয়া গেলেও, সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, নেপালের বাঁকে জেলার সংশোধনাগারে সংঘর্ষে পাঁচ বন্দীর মৃত্যু হয়েছে।
সোমবার এবং মঙ্গলবার নেপালে ছাত্র-যুব আন্দোলনের জেরে দফায় দফায় উত্তেজনা ছড়ায়। মঙ্গলবার সকাল থেকে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় প্রধানমন্ত্রী ওলির বাসভবনে, তাঁর মন্ত্রীদের বাসভবনে, নেপালের পার্লামেন্ট ভবনে। এমনকি সূত্রের খবর, সে দেশের সুপ্রিম কোর্টেও আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়।
এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবারই প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন ওলি। এরপর দেশের শাসনভার তুলে নেয় সে দেশের সেনা। সরকারের প্রধান সচিবালয় ভবনের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে সেনা। সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে নেপাল সরকারের প্রধান সচিবালয় ভবনও। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ইতিমধ্যেই একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। নেপালের বিভিন্ন দিকে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। সংবেদনশীল এলাকায় টহল দিচ্ছে সেনাবাহিনী। এবিষয়ে দেশের নাগরিকদেরও সহযোগিতা চেয়েছে তাঁরা।
মঙ্গলবার রাতেই বিক্ষোভকারীদের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনায় বসেন নেপালের সেনাপ্রধান অশোকরাজ সিগদেল। তাঁদের দাবিদাওয়া জানাই উদ্দেশ্যে ছিল এই বৈঠকের। জানা গেছে, বুধবার বিক্ষোভকারীদের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে বসতে পারেন নেপালের রাষ্ট্রপতি রামচন্দ্র পৌডেল। যার মধ্যস্থতা করবে নেপালের সেনাবাহিনী। এই বৈঠকে রফাসূত্র মিলতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, এই বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে নেপালের জেলগুলি ভেঙে পালানোর চেষ্টা করেন শয়ে শয়ে বন্দি। যা আটকাতে গেলে আক্রান্ত হন নিরাপত্তারক্ষীরা। পাল্টা গুলি চালানো হয়। জানা গেছে, বাঁকের জেল বন্দিরা পালানোর চেষ্টা করলে গুলি চালায় পুলিশ। যার জেরে সাতজন আহত হন। হাসপাতালে ভর্তি করানো হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পাঁচ জনের মৃত্য হয়। আন্দোলনকারীরা বাঁকে, পোখরান জেলে হামলা চালান। জানা গেছে, এখনও পর্যন্ত ১৬০০ বন্দি পালিয়েছে জেল থেকে।
বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশ্যে অশোকরাজের আহ্বান, ‘‘প্রতিবাদ কর্মসূচি থেকে বিরত থেকে আলোচনায় বসুন। কঠিন পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে হবে আমাদের।’’ সেনাবাহিনী জানিয়েছে, দেশের সার্বভৌমত্ব, বাসিন্দাদের স্বাধীনতা অক্ষুন্ন রাখতে তারা বদ্ধপরিকর। সেনাদের দাবি, কিছু স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী দেশে এই ধরনের অস্থির পরিস্থিতির সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে, নাগরিকদের সতর্ক থাকার বার্তা দেওয়া হয়েছে সেনার তরফে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন