Bangladesh: পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত অন্তত ৩২! হাসিনা সরকারের আলোচনার প্রস্তাব ফেরাল আন্দোলনকারীরা

People's Reporter: বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনার কথা জানিয়েছেন। যদিও তার কিছু ঘন্টার মধ্যে সেই প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলন
বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলন ছবি - সংগৃহীত
Published on

সংরক্ষণ তোলার দাবিতে বৃহস্পতিবার পুরো বাংলাদেশ জুড়ে সর্বাত্মক অবরোধ বা কমপ্লিট শাটডাউন ঘোষণা করেছিলেন আন্দোলনকারীরা। যার জেরে বৃহস্পতিবার গোটা বাংলাদেশ স্তব্ধ ছিল। ঢাকা-সহ দেশের সমস্ত জেলায় দিনভর চলে বিক্ষোভ, বাধে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ। যার জেরে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৩২ জনের। আহত বহু।

অন্যদিকে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার দুপুর সাংবাদিক বৈঠক করে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, “আমরাও বর্তমান কোটা ব্যবস্থার সংস্কারের বিষয়ে নীতিগত ভাবে সহমত। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করার জন্য প্রধানমন্ত্রী আমাকে এবং শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীকে দায়িত্ব দিয়েছেন। আমরা তাঁদের সঙ্গে বসব। শিক্ষার্থীরা যখনই বসতে চাইবেন, তা যদি আজ হয়, তা হলে আজই বসতে রাজি আছি আমরা।“

তার কিছু ঘন্টা পর বৃহস্পতিবার বিকালে সংরক্ষণ বিরোধী মঞ্চ ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ প্রধানমন্ত্রীর আলোচনার প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছে। মঞ্চের অন্যতম সমন্বয়কারী সারজিস আলম ফেসবুকে লিখেছেন, “এক দিকে গুলি আর লাশ, অন্য দিকে সংলাপ। আমার ভাইয়ের রক্তের উপর দিয়ে কী ভাবে সংলাপ হতে পারে?” আর এক সমন্বয়কারী হাসনাত আবদুল্লা ফেসবুকে লিখেছেন, “রক্ত মাড়িয়ে সংলাপ নয়।“ মঞ্চের অন্যতম নেতা আসিফ মাহমুদের মন্তব্য, “গুলির মুখে কোনও সংলাপ হয় না। এই রক্তের সঙ্গে বেইমানি করার চেয়ে মৃত্যু শ্রেয়।“ ছাত্র আন্দোলনের সহ-সমন্বয়কারী আব্দুল্লাহ সালেহিন অয়ন হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “রক্তের সঙ্গে বেইমানি করে কখনও কাউকে আলোচনায় বসতে দেব না।“

এর মাঝেই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যেয় সংরক্ষণ নিয়ে শুনানির দিন জানতে চেয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিনউদ্দিন এবং সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এম সাইফুল আলম চেম্বার আদালত (বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট বিভাগ এবং আপিল বিভাগের মধ্যবর্তী আদলত) -এর দ্বারস্থ হয়েছিলেন। আগামী রবিবার এই মামলার শুনানির দিন ধার্য করেছেন বিচারপতি।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে একই ভাবে সংরক্ষণ তোলার দাবি তুলে বিক্ষোভ শুরু হয় গোটা বাংলাদেশ জুড়ে। সেই সময় সরকারি চাকরীতে নিয়োগের ক্ষেত্রে ৫৬ শতাংশ সংরক্ষিত এবং ৪৪ শতাংশ সাধারণের জন্য নির্ধারিত ছিল। এই ৫৬ শতাংশের মধ্যে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের স্বজনদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারীদের জন্য ১০ শতাংশ, বিভিন্ন জেলার জন্য ১০ শতাংশ, জনজাতিদের জন্য ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ সংরক্ষিত পদ ছিল।

এরপর ২০২১ সালে ৭ জন মুক্তিযোদ্ধার স্বজন ২০১৮ সালের সংরক্ষণ বাতিলের নির্দেশের বৈধতা তুলে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। গত ৫ জুন হাইকোর্ট রায় দেয়, হাসিনা সরকারের এই নির্দেশ অবৈধ। তার প্রতিবাদেই আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। এরপর হাসিনা সরকার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। আগামী রবিবার সেই মামলার শুনানি।

এছাড়া বাংলাদেশের সংবাদ পত্র প্রথম আলো সূত্রে খবর, বুধবার রাত থেকেই ঢাকা-সহ সারা দেশে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে মোবাইল ইন্টারনেটের ফোর-জি পরিষেবা। চালু রাখা হয়েছে মোবাইল ইন্টারনেটের টু-জি পরিষেবা। তবে চালু আছে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পরিষেবা।

এদিকে গোটা বাংলাদেশ জুড়ে এই অশান্ত পরিস্থিতির ফলে গত কয়েকদিন ধরেই ব্যাহত জনজীবন। দেশে বন্ধ যান চলাচল। বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে ঢাকায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে মেট্রো পরিষেবা। অনিদিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। বন্ধ রয়েছে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও।

অন্যদিকে, এই ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতর। বিরোধীরা সরকারের নীতি এবং পুলিশের বিরুদ্ধে সবর হয়েছে। অন্যদিকে, শাসকদলের অভিযোগ, শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনকে হাতিয়ার করছে বিরোধী বিএনপি-জামাত। তাই এখন আর এই আন্দোলন শুধু ছাত্র আন্দোলন নেই। অন্যদিকে, সড়ক পরিবহণ এবং সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দেশের নেতা-মন্ত্রীদের রাস্তায় নেমে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার পরামর্শ দিয়েছেন।

SUPPORT PEOPLE'S REPORTER

ভারতের প্রয়োজন নিরপেক্ষ এবং প্রশ্নমুখী সাংবাদিকতা — যা আপনার সামনে সঠিক খবর পরিবেশন করে। পিপলস রিপোর্টার তার প্রতিবেদক, কলাম লেখক এবং সম্পাদকদের মাধ্যমে বিগত ১০ বছর ধরে সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে। এই কাজকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন আপনাদের মতো পাঠকদের সহায়তা। আপনি ভারতে থাকুন বা দেশের বাইরে — নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে একটি পেইড সাবস্ক্রিপশন নিতে পারেন। স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in