

ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে তাণ্ডব চালিয়ে এবার কিউবার দিকে ধেয়ে আসছে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ‘মেলিসা’ (Hurricane Melissa)। মঙ্গলবার সকাল নাগাদ এটি জ্যামাইকার দক্ষিণ-পশ্চিমের নিউ হোপ উপকূলে আছড়ে পড়ে। এটিই ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। জানা গেছে, এখনও পর্যন্ত এই ঘূর্ণিঝড়ের জেরে সাত জন নহত হয়েছে।
মার্কিন ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টার (NHC) জানিয়েছে, ল্যান্ডফলের সময় ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ ছিল ঘন্টায় ১৮৫ মাইল। সর্বনিম্ন গতিবেগ ছিল ১৫৭ মাইল। মেলিসা আঘাত হেনেছে ক্যাটাগরি–৫ মাত্রার ঝড় হিসেবে! যা স্যাফির-সিম্পসন হারিকেন স্কেলে সর্বোচ্চ স্তর।
জ্যামাইকার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্ড্রু হোলনেস দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করেছে। পাশাপাশি গোটা দ্বীপকে ‘দুর্যোগ এলাকা’ ঘোষণা করেছেন তিনি। এখনও পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন পুরো দ্বীপ। জলমগ্ন রাস্তাঘাট, যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন। সরকারি সূত্রে জানা গেছে, উদ্ধারকাজ শুরু হয়েছে। তবে আগামী কয়েক দিন লাগবে সম্পূর্ণ ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানতে।
এদিকে ঝড়ের তাণ্ডবে এ পর্যন্ত অন্তত সাতজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে জ্যামাইকার তিনজন, হাইতির তিনজন এবং ডোমিনিকান রিপাবলিকের একজন রয়েছেন। জ্যামাইকার তিনজনের মধ্যে দুইজন গাছ পড়ে এবং একজন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছেন। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ঝড়ের আগে সতর্কতামূলক কাজের সময়ই বেশ কিছু দুর্ঘটনা ঘটে যায়।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় মেলিসা জ্যামাইকা পেরিয়ে এগোচ্ছে কিউবার দিকে। আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, এটি সান্তিয়াগো দে কিউবা অঞ্চলের দিকে বাঁক নিতে পারে এবং মঙ্গলবার বিকেল থেকে রাতের মধ্যে মূল প্রভাব পড়বে। কিউবার প্রেসিডেন্ট মিগুয়েল ডিয়াজ-ক্যানেল রাষ্ট্রীয় সংবাদপত্র গ্রানমায় প্রকাশিত এক বার্তায় বলেছেন, “আজ বিকেল থেকেই আমরা ঝড়ের প্রধান প্রভাব অনুভব করব। জানি, এই ঘূর্ণিঝড় বড় ধরনের ক্ষতি ডেকে আনবে।”
ঝড়ের আশঙ্কায় কিউবার কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যেই প্রায় ৫ লক্ষ মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, মেলিসার সম্ভাব্য গতিপথে থাকা বাহামা দ্বীপপুঞ্জের দক্ষিণাঞ্চল থেকেও বাসিন্দাদের সরানোর নির্দেশ দিয়েছে সেখানকার সরকার।
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার (WMO) ট্রপিক্যাল সাইক্লোন বিশেষজ্ঞ অ্যান-ক্লেয়ার বলেছেন, “জ্যামাইকার জন্য এটি নিঃসন্দেহে শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়াবহ ঝড়। পরিস্থিতি একেবারেই বিধ্বংসী।” মেলিসা জ্যামাইকার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ওয়েস্টমোরল্যান্ড ও সেন্ট এলিজাবেথ জেলার মধ্যবর্তী এলাকায় স্থলভাগে প্রবেশ করে। যেখানে কৃষিজমি সবচেয়ে উর্বর। প্রবল বাতাস ও বৃষ্টিতে সেখানকার ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে আশঙ্কা।
স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ডেসমন্ড ম্যাকেঞ্জি জানিয়েছেন, সেন্ট এলিজাবেথ অঞ্চল পুরোপুরি প্লাবিত। একমাত্র সরকারি হাসপাতালটির একাংশ ভেঙে পড়েছে এবং বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন। উদ্ধারদল আটকে পড়া কয়েকটি পরিবারকে নিরাপদে সরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে, যাদের মধ্যে চার জন শিশু ছিল।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০২৪ সালের হারিকেন বেরিল–এর মতোই মেলিসাও ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নেবে জ্যামাইকার সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় হিসেবে।
ভারতের প্রয়োজন নিরপেক্ষ এবং প্রশ্নমুখী সাংবাদিকতা — যা আপনার সামনে সঠিক খবর পরিবেশন করে। পিপলস রিপোর্টার তার প্রতিবেদক, কলাম লেখক এবং সম্পাদকদের মাধ্যমে বিগত ১০ বছর ধরে সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে। এই কাজকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন আপনাদের মতো পাঠকদের সহায়তা। আপনি ভারতে থাকুন বা দেশের বাইরে — নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে একটি পেইড সাবস্ক্রিপশন নিতে পারেন। স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন