নিউইয়র্কে এক মাসের মধ্যে দ্বিতীয়বার ভাঙা হল মহাত্মা গান্ধীর মূর্তি। নিউইয়র্কের একটি মন্দিরের সামনে রাখা মহাত্মা গান্ধীর এই মূর্তি সম্প্রতি ভাঙা হয়েছে। স্থানীয় এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এই মূর্তির রক্ষণাবেক্ষণ করবে বলে জানিয়েছে। মঙ্গলবার ভোরের এই ঘটনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গান্ধী মূর্তির উপর ধারাবাহিক হামলার সর্বশেষ ঘটনা।
পুলিশের উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদমাধ্যমে জানানো হয়েছে, ছয়জন ব্যক্তি শ্রী তুলসী মন্দিরের সামনে রাখা এই মূর্তিটিকে একটি স্লেজহামার দিয়ে ধ্বংস করে এবং এর চারপাশে বেশকিছু ঘৃণাসূচক বক্তব্য লিখে দেয়।
কুইন্স ডেইলি ঈগলের জানিয়েছে, মূর্তিটি এর আগে ৩ আগস্ট ভাঙচুর করে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। পুলিশ এই হামলায় জড়িত সন্দেহে ২৫-৩০ বছর বয়সী পুরুষদের একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে।
জানা গেছে, একটি সাদা মার্সিডিজ বেঞ্জ এবং একটি গাঢ় রঙের গাড়িতে করে দুষ্কৃতীরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। অন্য গাড়িটি ভাড়া করা টয়োটা ক্যামরি হতে পারে বলে পুলিশের অনুমান।
নিউইয়র্কের আইনসভায় নির্বাচিত ভারতীয় বংশোদ্ভূত সদস্য জেনিফার রাজকুমার বৃহস্পতিবার সিবিএস নিউইয়র্ক টিভিকে জানিয়েছেন: "গান্ধী মূর্তি ভাঙচুরের ঘটনা আমাদের বিশ্বাসের ওপর আঘাত এবং আমাদের জন্য খুবই বিরক্তিকর। "
মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা পণ্ডিত মহারাজ নিউইয়র্ক পোস্টকে জানান, "গান্ধীজী শান্তির প্রতিনিধিত্ব করতেন এবং কেউ এসে শুধু মূর্তিটিকে লক্ষ্য করে ভাঙচুর করবে, এটা খুবই দুঃখজনক"।
স্বেচ্ছাসেবী ওয়াচ গ্রুপ, সিটিলাইন ওজোন পার্ক সিভিলিয়ান প্যাট্রোল বৃহস্পতিবার টুইট করে জানিয়েছে এর সদস্যরা মন্দিরের চারপাশে তাদের উপস্থিতি বাড়িয়েছে।
এক ট্যুইট বার্তায় সংস্থা জানিয়েছে, "আমরা তুলসী মন্দিরে আমাদের উপস্থিতি বাড়িয়েছি এবং সেখানেও ১০৬ প্রিসিনক্ট দেখে (পুলিশ) খুশি হয়েছি। আমাদের চার স্বেচ্ছাসেবককে ধন্যবাদ, যারা সারারাত ৭ ঘন্টা বাইরে ছিলেন।"
প্রথম আক্রমণের পর, রাজকুমার হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটি গ্রেগরি মিক্স সহ বেশ কয়েকজন নির্বাচিত কর্মকর্তাকে সঙ্গে নিয়ে হামলার নিন্দা করেন এবং পুলিশি পদক্ষেপের দাবি জানান।
ডেইলি ঈগলের উদ্ধৃতি দিয়ে মিক্স বলেন, "আমাদের সম্প্রদায় ও জাতিতে ঘৃণামূলক কাজের কোনো স্থান নেই এবং এই কাজের জন্য অপরাধীদের জবাবদিহি করতে হবে।"
উল্লেখ্য, এই মন্দির সাউথ রিচমন্ড পার্কে অবস্থিত এবং এই এলাকায় ভারতীয় বংশোদ্ভূত বহু মানুষ বাস করেন।
খালিস্তানি এবং উগ্র বামপন্থীদের সংযোগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে গান্ধী মূর্তিগুলিকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে বলে অভিযোগ। কখনও কখনও সেগুলি অপসারণের জন্য তারা প্রচার চালায়। নিউইয়র্ক সিটিতে অন্য একটি মূর্তিটির ক্ষেত্রেও একইভাবে ভাংচুর করা হয় এবং মূর্তিটির ক্ষতি করা হয়।
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে পুলিশের বাড়াবাড়ির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চলাকালীন, ওয়াশিংটনের একটি মূর্তি গান্ধীর উপর জঘন্য ব্যক্তিগত আক্রমণ করা হয়েছিল এবং সেইসময় তাতে ভারত-বিরোধী স্লোগান আঁকা হয়। ২০২০ সালের জুন মাসেও স্লোগান দিয়ে একই মূর্তি ভাঙচুর করা হয়েছিল। ওই বছরের ডিসেম্বরে ভারতে কৃষকদের আন্দোলনের সমর্থনে এক বিক্ষোভের সময় খালিস্তানিপন্থীরা এই মূর্তি আবারও ভাঙচুর করে।
গত বছরের জানুয়ারিতে ক্যালিফোর্নিয়ার ডেভিসে গান্ধীর একটি মূর্তির পা এবং মাথার অর্ধেক কেটে ফেলা হয়।
তবে পুলিশ যে ভিডিও প্রকাশ করেছে তাতে সন্দেহভাজনদের শ্বেতাঙ্গ বলে মনে করা হচ্ছে। মহারাজ স্থানীয় সংবাদ আউটলেট QNS কে বলেছেন: "প্রথমবারের ঘটনার সময় দুষ্কৃতীরা স্প্যানিশ ভাষায় কথা বলেছিল। এবার তারা হিন্দিতে কথা বলে।"
GOOGLE NEWS-এ Telegram-এ আমাদের ফলো করুন। YouTube -এ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন।