
আমেরিকায় কর্মরত বিদেশি কর্মীদের জন্য ‘এইচ-১বি ভিসা’ নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক ঘোষণা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। সেই সুযোগকে কাজে লাগাতে নতুন উদ্যোগ নিল চিন। ঘোষণা করল একেবারে আলাদা ধরনের কর্মভিসা—‘কে ভিসা’। আগামী ১ অক্টোবর থেকে এটি কার্যকর হবে বলে বেজিঙের তরফে জানানো হয়েছে।
আমেরিকার ‘এইচ-১বি ভিসা’র মতোই এই ভিসার আবেদন করতে পারবেন বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, গবেষণা এবং উচ্চশিক্ষার সঙ্গে যুক্ত দক্ষ কর্মীরা। বিশেষত যাঁরা চিন অথবা আন্তর্জাতিক মানের স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক, কিংবা গবেষণা ও শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত, তাঁদের আবেদন গ্রহণ করা হবে। তবে আবশ্যক শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রমাণ এবং নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করতে হবে।
এখন পর্যন্ত চিন বিদেশিদের মোট ১২ রকমের ভিসা দিত। কিন্তু ‘কে ভিসা’ তুলনামূলক অনেক বেশি সুবিধা দেবে। এ ক্ষেত্রে কোনও সংস্থার আমন্ত্রণপত্রের প্রয়োজন হবে না। ভিসার মেয়াদ প্রয়োজন অনুযায়ী বাড়ানো যাবে। পাশাপাশি বিদেশি কর্মীরা চিনে বাণিজ্যিক কাজকর্ম থেকে শুরু করে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেও অংশ নিতে পারবেন।
এই উদ্যোগে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হতে পারেন ভারতীয়রা। প্রতি বছর আমেরিকায় কাজের উদ্দেশ্যে বহু ভারতীয় যান এইচ-১বি ভিসা নিয়ে। সরকারি তথ্য বলছে, শুধু গত বছরেই এই ভিসার ৭১ শতাংশ আবেদন এসেছিল ভারত থেকে। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন নিয়মে আবেদনকারীদের এককালীন এক লক্ষ মার্কিন ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৮৮ লক্ষ টাকা) দিতে হবে। এত দিন যেখানে তিন বছরের জন্য দিতে হত সর্বোচ্চ ৪৫০০ ডলার, সেখানে এক ধাক্কায় বিশাল অঙ্কের বোঝা পড়তে চলেছে বিদেশি কর্মীদের উপর। ফলে বিকল্প পথ খুঁজতে বাধ্য হবেন বহু দক্ষ পেশাজীবী, যাদের জন্য চিনের ‘কে ভিসা’ এক বড় সুযোগ হয়ে উঠতে পারে।
আন্তর্জাতিক মহল মনে করছে, এই পদক্ষেপ আসলে আমেরিকার মেধাসম্পদকেই নিজেদের দিকে টেনে নেওয়ার কৌশল। সামরিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে প্রতিদ্বন্দ্বী আমেরিকার সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে চিন বরাবরই বিকল্প শক্তি প্রদর্শন করতে চেয়েছে। বর্তমানে ৫৫টি দেশের মানুষ সে দেশে টানা ২৪০ ঘণ্টার জন্য ভিসা ছাড়াই থাকতে পারেন। বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ আমেরিকার সঙ্গে প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই টক্কর রয়েছে দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চিনের। সাম্প্রতিক এসসিও সম্মেলন কিংবা সামরিক কুচকাওয়াজে সেই ছবি স্পষ্ট হয়েছে। এবার মেধা-অস্ত্রকেও নিজেদের হাতে টানতে চাইছে বেজিঙ।
একইসঙ্গে ব্রিটেনও মেধাসম্পদ টানার দৌড়ে নেমেছে। ‘ফিনানসিয়াল টাইমস’-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের সেরা পাঁচ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকরা যাতে বিনা ফিতে ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন, সে বিষয়টি নিয়ে ব্রিটিশ প্রশাসনে উচ্চপর্যায়ের আলোচনা চলছে। সরকারি অনুমোদন পেলে যোগ্যতা অর্জনকারীরা একেবারে বিনা খরচে ব্রিটেনে ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
অর্থাৎ, ট্রাম্পের ঘোষণায় যে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে, তার সুযোগ নিতে মরিয়া চিন ও ব্রিটেন। বিশ্বের দক্ষ পেশাজীবীদের টেনে আনতে তাঁরা একের পর এক প্রলোভনমূলক পদক্ষেপের পথে হাঁটছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন