
দীর্ঘদিনের বিতর্ক ও সংঘাতের প্রেক্ষাপটে বেলজিয়ামও স্বাধীন প্যালেস্টাইন রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিল। ইউরোপের এই গুরুত্বপূর্ণ দেশটির পদক্ষেপে আন্তর্জাতিক মহলে নতুন করে আলোচনার ঝড় উঠেছে।
এর আগে ফ্রান্স, আয়ারল্যান্ড, স্পেন, নরওয়ে-সহ একাধিক ইউরোপীয় দেশ প্যালেস্টাইনকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিয়েছিল। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হলো বেলজিয়ামের নাম। এর জেরে ইসরায়েল-প্যালেস্টাইন সংঘাত ঘিরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভিতরে মতবিভেদ আরও তীব্র হতে পারে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকা পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে। ইজরায়েলের টানা হামলায় হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন অসংখ্য নারী ও শিশু। হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, কোনও স্থানই নিরাপদ নয়। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলি একে 'মানবিক বিপর্যয়' বলে আখ্যা দিয়েছে। খাদ্য, ওষুধ ও জ্বালানির অভাবে সাধারণ মানুষের বেঁচে থাকাই প্রশ্নের মুখে। এই প্রেক্ষাপটে বেলজিয়ামের স্বীকৃতি নিছক রাজনৈতিক বার্তা নয়, বরং গাজার অসহায় মানুষের প্রতি সহমর্মিতা বলেই মত আন্তর্জাতিক মহলের।
ইজরায়েল রাষ্ট্র ঘোষণার সময় থেকেই প্যালেস্টাইনিদের নিজেদের ভূখণ্ড হারানোর অভিযোগ রয়েছে। পশ্চিম তীর, গাজা উপত্যকা-সহ একাধিক অঞ্চলে ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণ আজও বহাল। ফলে কয়েক দশক ধরে লড়াই, দমননীতি এবং প্রতিশোধপরায়ণ সহিংসতাই মধ্যপ্রাচ্যের রোজকার বাস্তবতা। বেলজিয়ামের মতে, এই অবস্থার পরিবর্তন একমাত্র সম্ভব প্যালেস্টাইনের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা স্বীকৃত হলে।
ইজরায়েল বারবার দাবি করেছে, তাদের সামরিক অভিযান মূলত হামাসকে নির্মূল করার উদ্দেশ্যে। কিন্তু বেসামরিক প্রাণহানি ও ধ্বংসযজ্ঞ নিয়ে আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে। তবুও ইজরায়েল মনে করছে, প্যালেস্টাইনকে একতরফা স্বীকৃতি দেওয়া মানে সন্ত্রাসবাদকে বৈধতা দেওয়া। তাদের মতে, এ ধরনের একতরফা স্বীকৃতি শান্তি প্রক্রিয়াকে জটিল করবে।
আমেরিকাও প্রথাগতভাবে ইজরায়েলের অবস্থানকেই সমর্থন করেছে। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, সরাসরি আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান সম্ভব, একতরফা স্বীকৃতিতে নয়। অন্যদিকে আরব বিশ্ব ও গ্লোবাল সাউথ এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে, যা আন্তর্জাতিক কূটনীতির মেরুকরণকে আরও স্পষ্ট করে তুলছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইউরোপে ক্রমবর্ধমান এই স্বীকৃতির ধারা আগামী দিনে জাতিসংঘের আলোচনায় প্রভাব ফেলতে পারে। বর্তমানে ১৯৩ জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে ১৩০টিরও বেশি দেশ প্যালেস্টাইনকে রাষ্ট্র হিসেবে মান্যতা দিয়েছে। তবে আমেরিকা, ব্রিটেন ও জার্মানির মতো প্রভাবশালী দেশ এখনোও স্বীকৃতি দেয়নি।
বেলজিয়ামের পদক্ষেপে প্যালেস্টাইন প্রশ্ন আবারও আন্তর্জাতিক মঞ্চে প্রধান আলোচ্য হয়ে উঠল। কূটনৈতিক মহলের মতে, যদি আরও ইউরোপীয় দেশ এই পথে হাঁটে, তবে মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি প্রক্রিয়ার সমীকরণে বড় পরিবর্তন আসতে বাধ্য।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন