Bangladesh: আবারও বিদেশী হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

১৮ জুন বাংলাদেশের বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) ৩৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আয়োজিত বিশেষ অনুষ্ঠানে বক্তব্য পেশ করার সময়ে শেখ হাসিনা এই কথা বলেন।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাফাইল ছবি সংগৃহীত

গণতন্ত্র ও মানবাধিকার ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন পশ্চিমি দেশ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর চাপে রয়েছে বর্তমান বাংলাদেশ সরকার। এসব চাপের বিরুদ্ধে বরাবরের মতো এবারও জোরালো অবস্থানের ঘোষণা করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সুস্পষ্টভাবে তিনি জানিয়েছেন, 'একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ কখনোই বাইরের কোনো হস্তক্ষেপের কাছে মাথা নত করবে না। আমরা একটি স্বাধীন জাতি। আমরা যুদ্ধের মাধ্যমে আমাদের দেশ অর্জন করেছি। আমরা কারও হস্তক্ষেপের কাছে মাথা নত করব না। এটা আমাদের সিদ্ধান্ত।'

রবিবার (১৮ জুন) বাংলাদেশের বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) ৩৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আয়োজিত বিশেষ অনুষ্ঠানে বক্তব্য পেশ করার সময়ে শেখ হাসিনা এই কথা বলেন।

বর্তমানে বাংলাদেশ সরকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রণীত ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব এবং কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ নীতি অনুসরণ করছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, 'সরকার গুরুত্বপূর্ণদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে কাজ করছে। দেশের উন্নয়নে যা যা প্রয়োজন তা করছে। অনেক বাধা ও ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং এগিয়ে যাবে।'

বাংলাদেশ বারবার প্রতিবন্ধকতা ও ষড়যন্ত্রের মুখোমুখি হয়েছে, কিন্তু সাফল্যের সঙ্গে সেগুলো কাটিয়ে উঠেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, 'এখনও অনেক বাধা এবং ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। কারণ একটি দেশ যখন দ্রুত অগ্রগতি করে, তখন অনেকেই তা সহ্য করতে পারে না। তারা বিভিন্ন ঝামেলা শুরু করে।'

একটি স্বাধীন ও বিজয়ী জাতি হিসেবে বিশ্বমঞ্চে মাথা উঁচু করে দেশের সব মানুষকে আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদা নিয়ে চলার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছেন, ‘এগুলো (বাধা-বিপত্তি) নিয়ে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই।’

গণতন্ত্র ও মানবাধিকার ইস্যুতে যেসব চাপে রয়েছে বাংলাদেশ:

বাংলাদেশে বর্তমান সরকারের টানা তিন মেয়াদের প্রায় ১৫ বছরের শাসনকালে দেশটিতে ব্যাপকভাবে গণতান্ত্রিক অধিকার ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে গুম, খুনসহ বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ উঠেছে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মহলে। এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক পশ্চিমা দেশের চাপের মুখে রয়েছে বর্তমান বাংলাদেশ সরকার।

ইতোমধ্যে ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বরে বিচার বর্হিভূত হত্যাকাণ্ডের জেরে মানবাধিকার লঙ্ঘনে অভিযোগে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর এলিট ফোর্স র‍্যাব (র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ান) এবং বাহিনীটির সাবেক-বর্তমান ৭ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

এছাড়াও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সরকারের উপরে বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করতে শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গত ৩ মে বাংলাদেশের উপরে নতুন ভিসানীতি আরোপের ঘোষণা করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এক বিবৃতিতে বলেছেন, বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে একটি নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। নতুন নীতির আওতায় বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বাংলাদেশিদের ভিসা দেবে না যুক্তরাষ্ট্র।

যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ন্যাশনালিটি অ্যাক্টের কয়েকটি ধারা অনুযায়ী নতুন যে ভিসা নীতি ঘোষণা করা হয়েছে, তাতে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত ব্যক্তিদের মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তা, সরকার সমর্থক এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার বিভাগ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন।

সম্প্রতি বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রকে কার্যকর ভূমিকা নেওয়ার জন্য দুই দফা চিঠি দিয়ে আহ্বান জানিয়েছে দেশটির একডজন কংগ্রেস সদস্য।

গত ২৫ মে বাংলাদেশের সরকার কর্তৃক 'মানবাধিকার লঙ্ঘনের' ঘটনা বন্ধে এবং 'বাংলাদেশের জনগণকে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সর্বোত্তম সুযোগ করে দিতে' জরুরি উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে চিঠি দিয়েছেন মার্কিন কংগ্রেসের ৬ সদস্য।

কংগ্রেসের সেই চিঠিতে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, ফ্রিডম হাউস ও জাতিসংঘের প্রতিবেদনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বাংলাদেশে 'গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ক্রমাগত প্রত্যাখান করে আসা', বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়ন, বাক স্বাধীনতার জায়গা সংকুচিত হয়ে আসা এবং শান্তিপূর্ণ উপায়ে বিক্ষোভ প্রদর্শনকারীদের ওপর হামলার মতো বিষয়গুলোর কথা বলেছেন।

এর পাশাপাশি তারা চিঠিতে আগামী নির্বাচনে বাংলাদেশের মানুষ যাতে অবাধে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন।

চিঠিতে কংগ্রেস সদস্যরা বলেছেন, বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন এগিয়ে আসায় মানবাধিকার পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটছে। এটি নিয়ে তাঁরা উদ্বিগ্ন। বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় জবাবদিহি নিশ্চিতে ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর ও অন্যান্য সংস্থার প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন তাঁরা।

যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার ইস্যুতে সোচ্চার হয়েছে ইউরোপিয়ন ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্যরাও। গত ১২ জুন ইইউ পার্লামেন্ট সদস্য জোটটির পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেলকে বাংলাদেশের বিষয়ে একটি চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে তারা জোসেপ বোরেলকে জানিয়েছেন, বাংলাদেশে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ সাধারণ নির্বাচন নিশ্চিত করতে অবদান রাখতে অনুরোধ করছি এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের অবসান ঘটাতে হবে।

এছাড়াও সম্প্রতি বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে রাষ্ট্রসঙ্ঘে চিঠি দিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন।

গণতন্ত্র ও মানবাধিকার ইস্যুতে পশ্চিমাদের এসব চাপের মুখে রয়েছে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীনরা। তবে এসব চাপে প্রকাশ্যে বেশি একটা আমলে নিচ্ছে না সরকার। দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কণ্ঠে সেই সুরই শোনা যাচ্ছে। পার্লামেন্টে দাঁড়িয়েও যুক্তরাষ্টসহ পশ্চিমাদের এসব চাপের বিরুদ্ধে জোর কণ্ঠে কথা বলেছেন শেখ হাসিনা।

প্রকাশ্যে পশ্চিমিদের বিরোধীতায় শেখ হাসিনা এবার পাশে পাচ্ছে চিনকে। পশ্চিমিদের এইসব তৎপরতাকে ঘিরে সম্প্রতি বাংলাদেশের পক্ষে নিজেদের অবস্থান জানান দিয়েছে চিন।

সম্প্রতি চিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবস্থানের প্রতি দৃঢ় সমর্থন জানিয়েছেন। এছাড়া সব ধরনের আধিপত্যবাদ ও ক্ষমতার রাজনীতির বিরুদ্ধে বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে কাজ করতে নিজেদের প্রস্তুতির কথাও জানিয়েছে দেশটি।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
Bangladesh: এক দশক পর প্রকাশ্যে রাজনীতির মাঠে জামায়াতে ইসলামী; কী প্রতিক্রিয়া সরকার ও বিরোধী দলগুলোর

GOOGLE NEWS-এ Telegram-এ আমাদের ফলো করুন। YouTube -এ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন।

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in