Bangladesh: ব্যাপক বিদ্যুৎ সংকট - দেশব্যাপী শিডিউল করে লোডশেডিং, সপ্তাহে একদিন বন্ধ পেট্রোলপাম্প

বিদ্যুৎ খাতে সাশ্রয়ী হতে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। অফিস-আদালতে কিংবা বাসায় এসি ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে রাখতে হবে, মসজিদ সহ অন্যান্য উপাসনালয়ে এসি চালানো যাবে না।
ব্যাপক বিদ্যুৎ সংকটে বাংলাদেশ
ব্যাপক বিদ্যুৎ সংকটে বাংলাদেশগ্রাফিক্স - নিজস্ব
Published on

বাংলাদেশে গত প্রায় এক মাস ধরে নজির বিহীন বিদ্যুৎ সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। দেশের সর্বত্র দিনে অন্তত ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা করে চলছে লোডশেডিং। দেশের শিল্প কারখানায় বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে বিদ্যুৎ বিভাগ।

কর্তৃপক্ষ বলছে, করোনার পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায়, খরচ মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সরকারকে। এর ফলে জ্বালানি খাতে ব্যাপক লোকসানের শিকার হতে হচ্ছে তাই লোকসান কমিয়ে বিদ্যুৎ খাতে সাশ্রয়ী হতে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

সিদ্ধান্তগুলো হচ্ছে - শিডিউল করে সারাদেশে এলাকাভিত্তিক দৈনিক ২ ঘণ্টা লোডশেডিং করা। সাময়িক লোডশেডিং চলার সময় সপ্তাহে একদিন পেট্রোল পাম্প বন্ধ রাখা। এ ছাড়া অফিসের সময় কমানো যায় কিনা, সে বিষয়টিও পর্যালোচনা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে দেশে ডিজেলে চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর উৎপাদনও স্থগিতের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।

সোমবার (১৮ জুলাই) বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয়ে এক সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। উক্ত সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী জানান, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানি তেলের বাজারে যে অস্থিরতা চলছে তার আঁচ পড়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে, বাদ যায়নি বাংলাদেশও। এমন অবস্থায় মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) থেকে সারাদেশে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং শুরু হবে।

এলাকাভিত্তিক লোডশেডিংয়ের সিদ্ধান্ত বিষয়ে তৌফিক-ই-এলাহী বলেন, জ্বালানি তেলের লোকসান কমাতে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যেসব এলাকায় লোডশেডিং থাকবে তা আগে থেকেই গ্রাহকদের জানিয়ে দেওয়া হবে। দিনে অন্তত এক থেকে দুই ঘণ্টা লোডশেডিং থাকবে।

এছাড়াও সভায় আরও সিদ্ধান্ত হয়েছে যে,

১. রাত ৮টার পর দোকানপাট, বিপণিবিতান বন্ধ রাখার পুরনো সিদ্ধান্ত কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা হবে।

২. গাড়িতে তেল কম ব্যবহার কমাতেও পদক্ষেপ আসছে, প্রজ্ঞাপন দিয়ে জানানো হবে।

৩. অফিস-আদালতে কিংবা বাসায় এসি ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে রাখতে হবে, মসজিদ সহ অন্যান্য উপাসনালয়ে এসি চালানো যাবে না।

৪. কাজ ঠিক রেখে অফিসের কর্মঘণ্টা ১ থেকে ২ ঘণ্টা কমানোর পরিকল্পনা।

৫. সরকারি বেসরকারি অফিসের সভা করতে হবে ভার্চুয়ালি।

এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং শুরু

এদিকে সরকার ঘোষিত শিডিউল ভিত্তিক লোডশেডিং বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি)-এর পক্ষ থেকে রাজধানী ঢাকাসহ আশেপাশের ৩৬টি এলাকায় দৈনিক দু’দফায় দুই ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের শিডিউল প্রকাশ করা হয়েছে। সকালে রাজধানীর বনশ্রী-আজিমপুরসহ বেশ কিছু এলাকায় লোডশেডিংয়ের মাধ্যমে শুরু হয় এই প্রক্রিয়া।

এ সময় তীব্র গরম থেকে বাঁচতে অনেকে রাস্তায় নামেন। তাদের কেউ কেউ গরমে কষ্টের কথাও জানান। তবে কেউ কেউ আবার সরকারের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।

মানুষের যাতে সমস্যা কম হয় সেজন্য সময়সূচি করে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং করে বিদ্যুৎ বিতরণ করা হচ্ছে। কখন কোথায় বিদ্যুৎ থাকবে না, তা ওয়েবসাইটে প্রকাশের মাধ্যমে জানিয়ে দিচ্ছে বিতরণী সংস্থাগুলো।

প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ–বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক–ই–এলাহী চৌধুরী জানিয়েছেন, দেশজুড়ে যে লোডশেডিং চলছে,তা সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলতে পারে।

বিদ্যুৎ সংকট সমাধানে সরকারের আরো কিছু সিদ্ধান্ত

এর আগে গত ৬ জুলাই দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের লক্ষ্যে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান, বিয়ের অনুষ্ঠান, কমিউনিটি সেন্টার, বিপণিবিতান, দোকানপাট, অফিস-আদালত এবং বাড়িঘরে আলোকসজ্জা না করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

সোমবার সচিবালয়ে দেশে বিদ্যুৎ সাশ্রয় ইস্যুতে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ রাত ৮টার পর দোকানপাট, শপিংমল খোলা থাকলে তাদের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হবে বলে সতর্ক করেছেন।

তিনি বলেন, রাত ৮টা থেকে কোনোরকম দোকানপাট, শপিংমল খোলা থাকবে না। আলোকসজ্জা সব বন্ধ থাকবে। বিশেষ করে বিদ্যুৎ বিভাগকে বলা হয়েছে, তারা খুব কঠিনভাবে এ বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করবে। যদি কেউ অমান্য করেন তাদের বিদ্যুতের লাইন আমরা বিচ্ছিন্ন করে দেব।

বিদ্যুৎ বিভাগের হিসাব মতে বাংলাদেশে বর্তমানে ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ ২৫ হাজার ৫৬৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে। তবে সর্বশেষ গত ১৬ এপ্রিল দিনে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে ১৪ হাজার ৭৮২ মেগাওয়াটের মতো। বর্তমানে তা নেমে এসেছে ১২ থেকে ১৩ হাজার মেগাওয়াটে। যার ফলে দৈনিক এ থেকে এক থেকে দেড় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি দেখা দিচ্ছে।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের হিসাব অনুযায়ী, এখন কয়লা থেকে ৭ দশমিক ৮৯ শতাংশ, গ্যাস থেকে ৫০ দশমিক ৮৪ শতাংশ, ফার্নেস অয়েল থেকে ২৮ শতাংশ এবং ডিজেল থেকে ৬ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। এ অবস্থায় জ্বালানি সাশ্রয় নীতির কারণে দিনে এক থেকে দেড় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। যা মোকাবিলায় সরকার এসব উদ্যোগ নিচ্ছে।

ডলার সংকট; জ্বালানি নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় বিপিসি

জ্বালানির উচ্চ মূল্যের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ডলার–সংকট। আমদানি কমলে সামনে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হবে। শুধু বিদ্যুৎ নয়, পরিবহন খাতও চাপে পড়বে। বড় ধরনের বিপর্যয় এড়াতে হলে তেলের দাম পরিশোধে ডলার দিতেই হবে।

বাংলাদেশে বর্তমানে ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে দাঁড়িয়েছে ৩৯ বিলিয়ন ডলার। তবে কাগজে-কলমে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ ৩৯ বিলিয়ন ডলার দাবি করা হলেও এই হিসাব নিয়ে বিতর্ক আছে বিশেষজ্ঞ মহলে। বলা হচ্ছে প্রকৃত রিজার্ভের অংক ৩২ বিলিয়ন ডলার। এর পেছনে যুক্তি হচ্ছে, ৭ বিলিয়ন ডলারের রফতানি উন্নয়ন তহবিল বা ইডিএফ ফান্ড এবং সবুজ রূপান্তর তহবিল বা জিটিএফ ও শ্রীলঙ্কার ঋণ বাদ দিলে প্রকৃত রিজার্ভ দাঁড়ায় ৩২ বিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার ৩৪ শতাংশ জ্বালানি তেলের ওপর নির্ভর করে। আর পরিবহন খাতের ৯০ শতাংশের বেশি নির্ভর করে জ্বালানি তেলের ওপর।

ব্যাংকে রিজার্ভ সংকটের জন্য জ্বালানি তেল আমদানি করতে ব্যাংকে ঋণপত্র খোলা যাচ্ছে না। এর ফলে পাওনা পরিশোধে চাপ প্রয়োগ করলেও তেল সরবরাহকারী বিদেশি সংস্থার পাওনা পরিশোধ হচ্ছে না নিয়মিত। ব্যাংক বলছে, তাদের কাছে পর্যাপ্ত ডলার নেই। এতে জ্বালানি তেল আমদানি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)।

দফায় দফায় চিঠি দিয়েও সমাধান পাচ্ছে না বিপিসি। পরিস্থিতি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, অর্থ বিভাগ ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) ৫ জুলাই একটি চিঠি দিয়েছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ।

দেশে ৩৫ থেকে ৪০ দিনের জ্বালানি তেল মজুত করতে পারে বিপিসি। ঋণপত্র খোলা না গেলে নতুন করে জ্বালানি তেলের ক্রয়াদেশ দেওয়া যাবে না। এতে করে তেল আমদানি কমে যাবে। আর তাহলে সামনে সরবরাহ–সংকট তৈরি হতে পারে।

‘বিষয়টি অতীব জরুরি’ উল্লেখ করে জ্বালানি তেল আমদানির জন্য ঋণপত্র খোলায় সৃষ্ট জটিলতা ও প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রাসংকটের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হয় চিঠিতে। ওই চিঠিতে আরও বলা হয়, দেশের চাহিদার প্রায় শতভাগ জ্বালানি তেল বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। পর্যাপ্ত পরিমাণ ডলারের সংস্থান ও ঋণপত্র খোলার বিষয়ে সহযোগিতা চেয়ে ইতিমধ্যে একাধিকবার বাংলাদেশ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

জ্বালানি বিভাগের চিঠিতে বলা হয়, জ্বালানি তেল আমদানিতে প্রতি মাসে ১৬ থেকে ১৭টি আমদানি ঋণপত্র খুলতে হয়। অভ্যন্তরীণ বাজারে ডলারের ঘাটতি রয়েছে জানিয়ে ব্যাংকগুলো চাহিদা অনুযায়ী ঋণপত্র খুলতে প্রায়ই অপারগতা প্রকাশ করছে।

বিপিসি সূত্র বলছে, গত এপ্রিলের শুরু থেকেই ঋণপত্র খোলা ও তেলের দাম পরিশোধ নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়। মন্ত্রণালয় থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি পাঠানো হলে কিছু ডলার ছাড় করা হয়। এরপর আবার ব্যাংকগুলো অস্বীকৃতি জানাতে থাকলে গত ১৭ মে ও ২৩ জুন দুই দফায় জ্বালানি বিভাগে চিঠি পাঠায় বিপিসি।

যা বলছেন বিশেষজ্ঞরা

চলমান জ্বালানি সংকটের জন্য সরকারের অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও অপখরচেকে দায়ী করছেন অনেক বিশেষজ্ঞ। অতিরিক্ত আমদানিনির্ভরতাই দেশের বর্তমান বিদ্যুৎ ও জ্বালানিসংকটের বড় কারণ। প্রাকৃতিক গ্যাসের সরবরাহে সমস্যা এবং এর মূল্য বৃদ্ধির কারণেই বিশ্বব্যাপী এখন জ্বালানিসংকট দেখা দিয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এ সংকট আরও প্রকট হয়েছে।

এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার জ্বালানিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ড. ম. তামিম ডয়েচ ভেলেকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকালে বলেছেন, রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বা তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো যখন স্থাপন করা হয়েছে, তখন দ্রুততম সময়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করার জন্য সেগুলো দরকার ছিল। রামপালের মতো কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী চালু হয়ে গেলে এখন বিদ্যুৎ সংকট সৃষ্টি হতো না।

“মূল সমস্যা আমাদের জ্বালানি। জ্বালানি খাতকে যদি আমরা উন্নয়ন না করি, তাহলে বিদ্যুৎ আসবে কোথা থেকে? বিদ্যুৎকেন্দ্র তো আমাদের বসে আছে। এটা আমরা আগেই বলেছি, প্রাথমিক জ্বালানি যদি আমরা সরবরাহ করতে না পারি, তাহলে হাজার হাজার বিদ্যুৎকেন্দ্র করে কোনো লাভ নেই।”

সরকারের ভ্রান্ত নীতির ফলে বিদ্যুৎ নিয়ে বর্তমান সংকট তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন ভূতত্ত্ববিদ বদরূল ইমাম।

তিনি বলেন, ২০১৭ সাল ছিল গ্যাস উৎপাদনের সর্বোচ্চ সময়। এরপর কমতে শুরু করে। ২৭০ কোটি ঘনফুট থেকে ২৩০ কোটি ঘনফুটে নেমে এসেছে। ২০৩০ সালে ১৫০ কোটি ঘনফুটের নিচে নেমে আসবে এটা।

সরকার গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধি ও নতুন গ্যাস ক্ষেত্র অনুসন্ধানের চেয়ে আমদানি নির্ভরতা দিকে বেশি ঝুঁকছে দাবি করে তিনি বলেন, সরকার তিনটি ভুল করেছে গ্যাস খাতে। গ্যাসের উৎপাদন কমার প্রক্ষেপণ ছিল পেট্রোবাংলার, কিন্তু গ্যাস অনুসন্ধান করা হয়নি। অথচ সারা বিশ্ব এটাই করে, এটাই নিয়ম। এখন তড়িঘড়ি করছে। উৎপাদন না বাড়িয়ে ২০১৮ থেকে এলএনজি আমদানি শুরু করে সরকার। এখন ৪০ ডলার দাম এলএনজির। দেশীয় গ্যাসের খরচ এক ডলারের কম। আর দীর্ঘমেয়াদি আমদানিতে এলএনজি ১০ ডলার। রাশিয়া গ্যাস দেবে না, তাই ইউরোপ এলএনজি আমদানি বাড়াবে, তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাংলাদেশ কিনতে পারবে না। সামনে আরও সংকট হবে।

বদরূল ইমাম আরও বলেন, দেশের ৫০ শতাংশ গ্যাস শেভরনের ওপর নির্ভর করে আছে। কয়েক বছরের মধ্যে তাদের পরিচালিত গ্যাসক্ষেত্র বিবিয়ানায় ধস নামতে পারে। এ নির্ভরশীলতা ভালো নয়। এখন জোড়াতালি দিয়ে সমস্যা সমাধান হবে না। আর সাগরে মিয়ানমার গ্যাস তুলছে। একই সীমানায় বাংলাদেশ একটা অনুসন্ধান কূপ খনন করতে পারেনি। সব মিলিয়েও বিশ্বের সবচেয়ে কম গ্যাস অনুসন্ধান হয়েছে বাংলাদেশে। গ্যাস অনুসন্ধান করে না পেলে আমদানিতে যাওয়া উচিত ছিল। এখন সংকট গভীরে চলে গেছে। উত্তরণের রাস্তা একটাই, তা হলো গ্যাস অনুসন্ধান করে দেশীয় গ্যাস আবিষ্কার করা।

চলমান বিদ্যুৎ সংকটের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবের কথা বলা হলেও তা মানতে নারাজ অনেক বিশেষজ্ঞ।

এবিষয়ে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ–বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সাবেক সদস্যসচিব ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সঙ্গে দেশের জ্বালানিসংকটের আসলে তেমন সম্পর্ক নেই, এটাকে স্রেফ অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। বিভিন্ন দেশ এখন এটা করছে, বাংলাদেশ একটু বেশি করে করছে। ইউক্রেন যুদ্ধ না থাকলেও বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের এই সংকট সামনে আসতই। যুদ্ধ শুধু এটাকে ত্বরান্বিত করেছে। যুদ্ধ না বাধলে হয়তো কিছুদিন পরে হতো এবং সামনে এ সংকট আরও ভয়াবহ হবে।

তিনি বলেন, সংকটের মূলে হচ্ছে বিদ্যুৎ খাতে সরকারের মহাপরিকল্পনা। এর বাইরে সরকারের সব নীতিমালা, কর্মসূচিও একই রকম। এ মহাপরিকল্পনা করেছেন বিদেশিরা এবং এর পুরোটাই ঋণনির্ভর ও আমদানিনির্ভর। এক দিকে বিদেশি ঋণ ও বিদেশি কোম্পানি, আরেক দিকে কয়লা ও পারমাণবিক বিদ্যুৎ। পাশাপাশি গ্যাসের কথা যা বলা হয়েছে, তা হলো তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি); এটাও আমদানি করতে হবে। কয়লা ও পারমাণবিক দুটোই হচ্ছে বাংলাদেশের জন্য ভয়াবহ বিপর্যয়ের।

ব্যাপক বিদ্যুৎ সংকটে বাংলাদেশ
Bangladesh: শ্রম অধিকার রক্ষার নিরিখে বিশ্বের খারাপ ১০টি দেশের অন্যতম বাংলাদেশ

SUPPORT PEOPLE'S REPORTER

ভারতের প্রয়োজন নিরপেক্ষ এবং প্রশ্নমুখী সাংবাদিকতা — যা আপনার সামনে সঠিক খবর পরিবেশন করে। পিপলস রিপোর্টার তার প্রতিবেদক, কলাম লেখক এবং সম্পাদকদের মাধ্যমে বিগত ১০ বছর ধরে সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে। এই কাজকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন আপনাদের মতো পাঠকদের সহায়তা। আপনি ভারতে থাকুন বা দেশের বাইরে — নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে একটি পেইড সাবস্ক্রিপশন নিতে পারেন। স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in