ভারতে সংখ্যালঘুদের অবস্থা নিয়ে আবার উদ্বেগ প্রকাশ করলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বৃহস্পতিবার, মার্কিন কংগ্রেসে 'আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা, ২০২১’ নিয়ে একটি রিপোর্ট পেশ করেছেন মার্কিন বিদেশ মন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। তাতেই উঠে এসেছে উদ্বেগের কাহিনী।
জানা যাচ্ছে, মার্কিন বিদেশমন্ত্রীর পেশ করা রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০২১ সালে সারা বছর ধরে ভারতে সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। হত্যা, মারধর করা, হুমকি দেওয়া, ভয় দেখানো, হেনস্থা করা ইত্যাদি ঘটনা ঘটেছে। রিপোর্টে গোমাংস নিয়ে অহিন্দুদের উপর স্বঘোষিত গোরক্ষকদের হামলার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।
কোনো দেশে ধর্মীয় স্বাধীনতা কতটা সুরক্ষিত, তা নিয়ে প্রতি বছরই রিপোর্ট প্রকাশ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। চলতি বছরেও বিশদে সেই রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। আর তাতেই ভারতের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ ধরা পড়েছে।
এ নিয়ে পরপর চার বছর ভারতে সংখ্যালঘুদের নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তবে, এর আগে মার্কিন কংগ্রেসে পেশ হওয়া এই সংক্রান্ত রিপোর্টগুলি খারিজ করে দিয়েছিল নয়াদিল্লি। অন্য দেশের সরকার কখনোই ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে মন্তব্য করতে পারে না বলে জানিয়েছিল ভারত সরকার।
ভারতে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মর্যাদা নিয়ে কোনও মতামত প্রকাশ করা হয়নি রিপোর্টে। তবে, রিপোর্টে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং সরকারের বিভিন্ন তথ্য পেশ করা হয়েছে। যেখানে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং সংখ্যালঘুদের দ্বারা পরিচালিত সংস্থার উপর কিভাবে আক্রমণ করা হয়েছে, তা তুলে ধরা হয়েছে। এমনকি এই আক্রমণ নিয়ে তদন্ত রিপোর্ট এবং কোনও প্রতিক্রিয়া জানানোর ক্ষেত্রে ভারত সরকার নীরব থেকেছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে রিপোর্টে।
ওই রিপোর্টে রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘ বা আরএসএস প্রধান মোহন ভগবতের মন্তব্য তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে 'দেশের শাসকদল বিজেপি-র আদর্শের ভিত্তি যে সংঘ, সেই আরএসএস প্রধান মোহন ভগবত ২০২১-এর জুলাই মাসে হিন্দু-মুসলিম ডিএনএ-তে কোনও ফারাক নেই বলে মন্তব্য করেছিলেন। ধর্মের নিরিখে দুই সম্প্রদায়কে আলাদা করা উচিত নয় বলে জানান তিনি।'
রিপোর্টে উঠে এসেছে যোগী আদিত্যনাথের কথাও, যিনি ওই বছর ১২ সেপ্টেম্বর পূর্বতন সরকারের বিরুদ্ধে মুসলিম তোষণের অভিযোগ তোলেন।
মার্কিন কংগ্রেসে জমা পড়া রিপোর্টে আরও বলা হয়ছে, 'সোশ্যাল মিডিয়ায় অহিন্দুরা কিছু লিখলে, পুলিশ তাদের গ্রেফতার করতে পিছপা হয় না। তাঁদের সমস্ত মন্তব্যকে হিন্দু বিরোধী বলে দাগিয়ে দেওয়ার প্রবণতা দেখা গিয়েছে।'
শুধু তাই নয়, বিদেশি আইনে সংশোধন করে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, বিশেষ করে ধর্মীয় সংগঠনগুলির উপর লাগাম শক্ত করেছে সরকার। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘২০২০ সালে ভারত সরকারের আনা বিদেশী অনুদান নিয়ন্ত্রণ আইন (FCRA)-এর তীব্র সমালোচনা করেছে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাসহ ধর্মীয় সংস্থাগুলি। এই আইনের মাধ্যমে বিদেশী তহবিলের পরিমাণ হ্রাস করার যে চেষ্টা করেছে ভারত সরকার, তা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলি।’
এদিন রিপোর্ট পেশ করার সময় মার্কিন বিদেশমন্ত্রী ব্লিংকেন বলেন, 'বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশ ভারতেও আমরা ধর্মীয় উপাসনালয়ে হামলা হতে দেখছি।' এরপরেই তিনি যোগ করেন, 'যখন কোনো সরকার তার নাগরিকদের অধিকার ও সুরক্ষা দেয় না, তখন সেখানে অস্থিরতা, অস্থিতিশীলতা দেখা দেয়। বিশ্বের অনেক দেশের সরকার তাদের নাগরিকদের ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষা করতে পারছে না।'
GOOGLE NEWS-এ Telegram-এ আমাদের ফলো করুন। YouTube -এ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন।