Afghanistan: তালিবান সরকারের ফতোয়া - আফগান বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ হচ্ছে মহিলাদের লেখা বই

People's Reporter: তালিবান সরকারের নির্দেশের পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শারিয়া এবং প্রশাসনিক নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এরকম ১৮টি বিষয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্য তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে।
ছবি প্রতীকী
ছবি প্রতীকী ছবি - ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক ব্লগ থেকে সংগৃহীত
Published on

আফগানিস্তানের তালিবান সরকারের নির্দেশে সে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠক্রম থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে মহিলাদের লেখা বই। এর পাশাপাশি শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে মানবাধিকার এবং যৌন হেনস্থার মত বিষয়। সম্প্রতি বিবিসি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে একথা জানানো হয়েছে। মহিলাদের শিক্ষায় নিষেধাজ্ঞা জারি ছাড়াও গত সপ্তাহেই দেশের দশ রাজ্যে ফাইবার অপটিক ইন্টারনেট নিষিদ্ধ করে তালিবান সরকার।

তালিবান সরকারের সাম্প্রতিক এক নির্দেশের পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শারিয়া এবং প্রশাসনিক নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এরকম ১৮টি বিষয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্য তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে। বিবিসি-র প্রতিবেদন অনুসারে, আগস্ট মাসের শেষে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

“শরিয়া বিরোধী এবং তালেবান নীতির” কাছে “উদ্বেগজনক” বলে মনে হওয়ার কারণে মোট ৬৮০টি বইয়ের মধ্যে "রাসায়নিক পরীক্ষাগারে নিরাপত্তা" এর মতো শিরোনাম সহ মহিলাদের লেখা প্রায় ১৪০টি বই বাদের তালিকায় আছে। এ ছাড়াও তালিবান সরকারের পক্ষ থেকে ইরানে প্রকাশিত বেশ কিছু বই নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে নিষিদ্ধ বইয়ের ৫০ পাতার যে তালিকা পাঠানো হয়েছে সেই তালিকায় ৩১০টি গ্রন্থের লেখক ইরানের অথবা বইগুলি ইরান থেকে প্রকাশিত।

তালিবান সরকারের এই নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে প্রাক্তন সরকারের প্রাক্তন উপ-বিচারমন্ত্রী জাকিয়া আদেলি জানিয়েছেন, “গত চার বছরে তালিবানরা যা করেছে তার ভিত্তিতে, তাদের কাছ থেকে পাঠ্যক্রমের ওপর এই পরিবর্তন অপ্রত্যাশিত কোনও ঘটনা নয়।”

তিনি আরও বলেন, “তালিবানদের মহিলা বিদ্বেষী মানসিকতা এবং নীতির ভিত্তিতে, এটা খুব স্বাভাবিক যে এখানে মহিলাদের পড়াশোনা করারই অনুমতি দেওয়া হয় না। তাদের মতামত, ধারণা এবং লেখালেখিও দমন করা হয়।”

শুধু লেখাপড়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা বা বই-এর ওপর নিষেধাজ্ঞা নয়, চলতি মাসের প্রথম দিকে আফগানিস্তানের কুনার প্রদেশে ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর ধ্বংসস্তূপের মধ্যে আটকে থাকা মহিলাদেরও উদ্ধার করা হয়নি বলে বিভিন্ন সংবাদ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, মহিলাদের স্পর্শ করা যাবেনা বলে ফতোয়া জারি করেছিল তালিবান সরকার। এই ফতোয়ার ফলে উদ্ধারকারীরা মহিলাদের ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করেনি। মহিলাদের ফেলে রেখে শুধুমাত্র পুরুষদের উদ্ধার করা হয়। এই ভূমিকম্পে মৃত্যু হয়েছিল প্রায় ২২০০ মানুষের।

চার বছর আগে ২০২১ সালের ১৫ আগস্ট আফগানিস্তান থেকে আমেরিকান বাহিনী প্রত্যাহার করে নেবার পরেই ক্ষমতা দখল করে তালিবানরা। এরপর থেকেই বারেবারে মহিলাদের শিক্ষার ওপর একাধিক বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।

তালিবানরা শাসন ক্ষমতা দখল করার পর থেকেই দফায় দফায় মহিলাদের শিক্ষার ওপর বাধা শুরু হয়। ক্ষমতা দখলের বছরে সেপ্টেম্বর মাসে আফগানিস্তানের শিক্ষামন্ত্রক থেকে জানানো হয়, উচ্চ বিদ্যালয়ে আর পড়তে পারবে না মেয়েরা। ওই বছরেরই ডিসেম্বর মাসে মেয়েদের কলেজ শিক্ষাতেও নিষেধাজ্ঞা জারি করে তালিবান সরকার। ২০২১ সালের আগস্ট মাসের পর থেকে মহিলাদের পার্ক, জিম, মেলা, পার্লারে যাওয়ার মতো অতি সাধারণ অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়। এমনকি অসংখ্য মহিলাকে তাদের সরকারি চাকরি থেকেও বরখাস্ত করে দেওয়া হয়।

এরপর ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে এক নির্দেশ জারি করে জানানো হয়, ১০ বছর বয়স হয়ে গেলে মেয়েদের যেন স্কুলে না পাঠানো হয়। পাশাপাশি, স্কুলগুলিকেও বার্তা দেওয়া হয় যাতে ১০ বছর বয়সী মেয়েদের যেন আর স্কুলে ভর্তি করা না হয়। ওই বছরেরই সেপ্টেম্বর মাসে দেশের মহিলা স্কলারদের দেশের বাইরে গিয়ে পড়াশোনা করার ওপরেও নিষেধাজ্ঞা জারি করে তালিবান সরকার।

২০২২ সালে আফগানিস্তানে মহিলাদের শিক্ষায় এই চূড়ান্ত বাধানিষেধের তীব্র নিন্দা করে রাষ্ট্রপুঞ্জ। যদিও রাষ্ট্রপুঞ্জের নিন্দার পরেও সে দেশের তালিবান প্রশাসন তাতে কোনও গুরুত্ব দেয়নি।

ছবি প্রতীকী
Afghanistan: আলাদা বসা এবং ইসলামী পোশাক বাধ‍্যতামূলক, মহিলাদের উচ্চশিক্ষায় তালিবানি ফতোয়া
ছবি প্রতীকী
Afghanistan: তালিবানি নীতির বিরুদ্ধে পথে আফগান মহিলারা

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in