

১৬ মার্চ লোকসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার অনেক আগে থেকেই পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার ডায়মন্ডহারবার কেন্দ্রটি রাজ্যের সবচেয়ে আলোচিত আসন হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া সাত ধাপের নির্বাচনের শেষ দিন ১ জুন এই কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ।
এই আসন নিয়ে জনসাধারণের আগ্রহের প্রধান কারণ হল এই কেন্দ্রের দু’বারের সাংসদ এবং তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো অভিষেক ব্যানার্জি, যিনি এবারেও তৃণমূল প্রার্থী।
প্রাথমিকভাবে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় অল ইন্ডিয়া সেক্যুলার ফ্রন্ট (এআইএসএফ) এর একমাত্র প্রতিনিধি নওসাদ সিদ্দিকি এই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ইচ্ছা প্রকাশ করার পর বছরের শুরু থেকেই ডায়মন্ডহারবার শিরোনামে আসে।
নওশাদ সিদ্দিকী রাজ্যের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর মধ্যে একটি জনপ্রিয় মুখ এবং তিনি এই কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন এই ধারণা তৈরি হবার পর এই কেন্দ্র নিয়ে মানুষের আগ্রহ আরও বেড়েছিল। রাজনৈতিক মহল মনে করেছিল তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে অভিষেক ব্যানার্জিকে কঠিন লড়াইয়ের মুখে ঠেলে দিতে পারেন। যদিও শেষ মুহূর্তে নওশাদ সিদ্দিকি এই কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার সিদ্ধান্ত নেন।
অন্যদিকে বিজেপিও এই কেন্দ্রে প্রার্থী ঘোষণা নিয়ে টালবাহানা করে। রাজ্যের অন্যান্য ৪১টি লোকসভা কেন্দ্রের জন্য মনোনীত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হলেও এই কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী ঘোষণা করেনি। শেষ পর্যন্ত গত মঙ্গলবার বিজেপি অভিজিৎ দাস ববি-র নাম এই কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছে। ডায়মন্ডহারবারের সাথে ববির দীর্ঘদিনের সম্পর্ক থাকলেও নামের বিচারে তিনি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বা প্রতীক-উর রহমানের মত আলোচিত নাম নন। বরং তাঁর নাম প্রার্থী হিসেবে ঘোষিত হবার পর ঠারে ঠোরে অনেকেই বলার চেষ্টা করেছেন বিজেপি এই আসনে ওয়াক ওভার দিল।
২০১৪ সালে ডায়মন্ড হারবার থেকে অভিষেক ব্যানার্জির বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার পাশাপাশি, ববি বেশ কিছুদিন ধরে বিজেপির সাংগঠনিক জেলা সভাপতি ছিলেন। দলের রাজ্য নির্বাচন পরিচালনা দলের সহ-আহ্বায়ক হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতাও রয়েছে তাঁর।
অন্যদিকে সিপিআই-এম তরুণ মুখ এবং ছাত্র নেতা প্রতীক-উর রহমান এলাকায় পরিচিত নাম। গত বিধানসভা নির্বাচনেও তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। ছাত্র জীবন এবং ছাত্র সংগঠন করার সময় থেকেই তিনি এই অঞ্চলের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
এবারের প্রচারেও রহমান বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের সঙ্গে দেখা করছেন। সাধারণ মানুষের সামনে দুর্নীতির বিষয়গুলি তুলে ধরছেন, বিশেষ করে রাজ্যে বহু-কোটি টাকার স্কুল শিক্ষক নিয়োগ কেলেঙ্কারির বিষয়টি তাঁর কথায় ঘুরেফিরে আসছে।
২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচন সহ সাম্প্রতিক নির্বাচনী ইতিহাসের দিকে তাকালে, ডায়মন্ডহারবার ২০০৯ সাল থেকে তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি হয়ে উঠেছে। সেবারই প্রবীণ রাজনীতিবিদ প্রয়াত সোমেন মিত্র এখান থেকে তৃণমূলের প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করেন। তার আগে পর্যন্ত এই কেন্দ্রে সিপিআইএম-এর একাধিপত্য ছিল।
২০১৯-এর শেষ লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্র থেকে অভিষেক ব্যানার্জি ৩.২০ লক্ষ ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত হন। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে, তৃণমূল ডায়মন্ডহারবার লোকসভা কেন্দ্রের অধীনে সাতটি আসনেই জয়লাভ করেছিল।
এক বুথ-ভিত্তিক বিশ্লেষণ অনুসারে ২০১৯ এবং ২০২১ - দুই ক্ষেত্রেই তৃণমূলের পক্ষে সংখ্যালঘু ভোট একত্রিত করতে সক্ষম হওয়ায় শাসক দলের এই কেন্দ্রে বড়ো জয় পেয়েছিল। যদিও এবার অবস্থা কিছুটা অন্যরকম।
ডায়মন্ডহারবার ঐতিহ্যগতভাবে ১৯৬৭ থেকে ২০০৯ সালের আগে পর্যন্ত বাম ঘাঁটি হিসেবেই দেখা হত। এই কেন্দ্রে সিপিআই-এম ১৩ বার জয়লাভ করে।
অতীতে এই আসন থেকেই লোকসভায় প্রতিনিধিত্ব করেছেন প্রয়াত জ্যোতির্ময় বসু, অমল দত্ত এবং শমীক লাহিড়ির মত সম্মানীয় সাংসদ।
যদিও সেই ঐতিহ্য ভেঙে ২০০৯ সালে এই কেন্দ্রে থেকে তৃণমূলের মনোনয়নে জয়ী হন সোমেন মিত্র। তখন থেকেই সেই ধারা অপরিবর্তিত আছে। ২০১৪ এবং ২০১৯-এর নির্বাচনে এই কেন্দ্র থেকে অভিষেক ব্যানার্জী জয়লাভ করেছেন।
- With Agency Inputs
ভারতের প্রয়োজন নিরপেক্ষ এবং প্রশ্নমুখী সাংবাদিকতা — যা আপনার সামনে সঠিক খবর পরিবেশন করে। পিপলস রিপোর্টার তার প্রতিবেদক, কলাম লেখক এবং সম্পাদকদের মাধ্যমে বিগত ১০ বছর ধরে সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে। এই কাজকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন আপনাদের মতো পাঠকদের সহায়তা। আপনি ভারতে থাকুন বা দেশের বাইরে — নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে একটি পেইড সাবস্ক্রিপশন নিতে পারেন। স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন