
সোমবার সন্ধ্যায় গুয়াহাটির সরুসজাই স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে আসামের বিখ্যাত ঝুমুর নৃত্য। আসামের ২০০ বছরের চা জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি গোটা বিশ্বের সামনে প্রদর্শনের জন্য এই অয়োজন। ঝুমুর নাচ উপলক্ষ্যে এদিন সরুসজাই স্টেডিয়ামে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
জানা যাচ্ছে, সোমবার সন্ধ্যায় ঝুমুর নাচে অংশ নেবেন ৮,৬০০ জন শিল্পী ও কলাকুশলি। শনিবার গোটা ব্যবস্থাপনা প্রত্যক্ষ করতে সরুসজাই স্টেডিয়ামে যান আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী সঙ্গে ৬০ জন মিশন প্রধান এবং বিভিন্ন রাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতেরা এই ঐতিহাসিক মুহুর্ত প্রত্যক্ষ করবেন”।
চা উপজাতিদের কাছে ঝুমুর নাচ একটি অতি জনপ্রিয় শৈলী। আসুন জেনে নেই চা উপজাতি এবং ঝুমুর নাচ সম্পর্কে কিছু কথা –
‘চা উপজাতি’ বলতে চা বাগানের শ্রমিক এবং তাঁদের বংশধরদের বহু-সাংস্কৃতিক ও বহু-জাতিগত সম্প্রদায়কে বোঝায়। এরা মধ্য ভারত তথা বর্তমান ঝাড়খন্ড, ওড়িশা, ছত্তিশগড় এবং পশ্চিমবঙ্গ থেকে আসামে আসে। ১৯ শতকে আসামে বসতি স্থাপন করেন। সেই সময়কালে তাঁরা ব্রিটিশদের তৈরি চা বাগানগুলিতে কাজ করতেন।
ভারতে ব্রিটিশরাজ চলাকালীন এই উপজাতিদের উপর প্রবল অত্যাচার করত ব্রিটিশরা। শুধু কম বেতনে কাজ করানো নয়, কোনও চা শ্রমিক স্বাধীন ছিলেন না। কেউ যদি পালানোর চেষ্টা করতেন, তাঁদের নির্মম ভাবে হত্যা করত ব্রিটিশরা। বর্তমানে এই উপজাতির বংশধরেরা উত্তর আসামের তিনসুকিয়া, ডিব্রুগড়, শিবসাগর, চরাইদেও, গোলাঘাট, লখিমপুর, সোনিতপুর, উদালগুড়ি এবং বরাক উপত্যকার কাছাড় ও করিমগঞ্জে ছড়িয়ে আছেন।
বর্তমানে এই উপজাতিদের অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণী (ওবিসি) –র মর্যাদা দেওয়া হলেও, এঁরা দীর্ঘদিন ধরে তফসিলি উপজাতি (এসটি) –র মর্যাদার জন্য লড়াই করছে। আসামের চা উপজাতি ও আদিবাসী কল্যাণ অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট অনুসারে, রাজ্যের জনসংখ্যার একটি বড় অংশ এই সম্প্রদায়ের মানুষ। রাজ্যের চা উৎপাদনেও এঁদের বড়ো ভূমিকা রয়েছে।
এই চা উপজাতিদের একটি ঐতিহ্যবাহী লোকনৃত্য হল ঝুমুর নাচ। যা ঝুমুরাই নামেও পরিচিত। ঝুমুর আসলে ছোটনাগপুর অঞ্চলের ‘সাদন’ গোষ্ঠীর লোকনৃত্য। যা বর্তমানে চা শ্রমিকদের উৎসবে পরিণত হয়েছে। ঝুমুর নাচের অন্যতম বিশেষত্ব হলো এর রঙিন পোশাক, অভিব্যক্তিপূর্ণ অঙ্গভঙ্গি, এবং ছন্দময় গতিবিধি।
ঝুমুর নাচে শিল্পীরা হাত ধরে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে, আঞ্চলিক ভাষায় গান গান। পুরুষরা মাদল, ঢোল, করতাল, বাঁশি এবং শেহনাইয়ের মতো ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্র বাজান এবং মহিলারা সেই তালে তাল মিলিয়ে নাচ করেন ও গান করেন। পোশাক সম্প্রদায়ভেদে ভিন্ন হলেও, লাল এবং সাদা শাড়ি মহিলাদের মধ্যে বিশেষভাবে জনপ্রিয়। এই নাচ আসাম ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, বিহার, ওড়িশা এবং ছত্তিশগড়ের কিছু অংশের চা উপজাতিদের মধ্যে প্রচলিত।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন