ওড়িশার ভাষা বিশেষজ্ঞরা অ-হিন্দিভাষী রাজ্যগুলিতে হিন্দি ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার বিষয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বিতর্কিত বক্তব্যের বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিবাদ জানালেন।
সম্প্রতি নয়াদিল্লিতে সংসদীয় সরকারী ভাষা কমিটির ৩৭ তম বৈঠকে সভাপতিত্ব করে শাহ বলেন, ভারতীয়দের মধ্যে যোগাযোগের জন্য হিন্দি ভাষা ইংরেজির বিকল্প হওয়া উচিত। যে মন্তব্য সকলের ক্ষোভের সৃষ্টি করে।
শাহের মতো একজন প্রথম সারির নেতার এই বিবৃতি ওড়িশার জনগণকে উদ্বিগ্ন করেছে। কারণ তাঁদের ওড়িয়া ভাষার সাথে একটি মানসিক সংযুক্তি রয়েছে এবং তাঁরা এই ভাষা নিয়ে গর্বিত।
ওড়িয়া ভাষা থেকে ওড়িশার শিকড় শুরু হয়েছে। উড়িষ্যাকে ১ এপ্রিল, ১৯৩৬ (প্রাক-স্বাধীন) ভাষার জন্য একটি পৃথক রাজ্য হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে, ওড়িশা হল প্রথম রাজ্য, যা ভাষাগত ভিত্তিতে একটি পৃথক প্রদেশ হিসাবে ঘোষণা করা হয়।
ওড়িশা গঠনের পেছনে প্রধান ভূমিকা থাকা উৎকল সম্মিলনীর দিলীপ দাশশর্মা বলেন, "আমরা আমাদের উপর জোর করে হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার তীব্র বিরোধিতা করি। আমরা অতীতে আমাদের আওয়াজ তুলেছিলাম এবং আমরা কখনই ওড়িয়াবাসীদের উপর হিন্দি ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার অনুমতি দেব না।"
জাতীয় শিক্ষা নীতিতে (এনইপি) কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছে, প্রাথমিক স্তরে পাঠদানের মাধ্যম হবে মাতৃভাষায়। তবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য এই নীতির বিরোধী বলেও তিনি জানান।
একইভাবে, ওড়িশার প্রাক্তন সাংসদ তথাগত সৎপতিও শাহের এই বক্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেছেন। তার ইংরেজি দৈনিক পত্রিকা ওড়িশা পোস্টে "হিন্দি আবার" শিরোনামের একটি সম্পাদকীয় লিখে, সৎপতি বলেন, জোর করে হিন্দি চাপিয়ে দেওয়া হলে তা অন্যান্য আঞ্চলিক ভাষাগুলিকে সংকুচিত করবে এবং সম্ভবত বর্তমান রাজনৈতিক নেতৃত্ব আশা করে যে সাবলীল হিন্দিভাষী নেতারা তখন সারা দেশের ভোটারদের কাছে আরও আকর্ষণীয় বলে মনে হবে।
প্রাক্তন সাংসদ আরও বলেন, "যোগাযোগের ভাষা কী হওয়া উচিত সেই সিদ্ধান্ত রাজ্যগুলির উপর ছাড়া উচিৎ। ইংরেজি ব্যবহার না করার জন্য কেন্দ্রের কাছ থেকে কোনও আদেশ আসতে পারে না। এতে কোন সন্দেহ নেই যে ইংরেজি একটি বিদেশী ভাষা তবে এটি সমস্ত নাগরিকের জন্য সমানভাবে বিদেশী।"
ভারতও এক বৈচিত্র্যময় দেশ উল্লেখ করে, তিনি বলেন আজ যেকোনও শক্তি প্রয়োগের ফল আগামীকাল অনাকাঙ্খিত বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
ওড়িশা সাহিত্য আকাদেমির সভাপতি হৃষিকেশ মল্লিকও শাহের বিতর্কিত বক্তব্যে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। মল্লিক বলেন, তিনি হিন্দি ভাষার বিরুদ্ধে নন। তবে এটা জোর করে সবার ওপর চাপিয়ে দেওয়া উচিত বলে জানান তিনি।
"হিন্দি একটি ঐচ্ছিক ভাষা হওয়া উচিত। ওড়িশার মাতৃভাষা ওড়িয়া। সেই ভাষাই আমাদের রাজ্যের জনগণের প্রথম ভাষা হতে হবে।"
GOOGLE NEWS-এ Telegram-এ আমাদের ফলো করুন। YouTube -এ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন।