প্রয়াত হলেন প্রখ্যাত প্রতিবাদী গণশিল্পী গদ্দর। পোশাকি নাম গুম্মাদি ভিট্টাল রাও হলেও তিনি ‘গদ্দর’ নামেই জনপ্রিয় ছিলেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর। গত ২০ জুলাই থেকে হৃদযন্ত্রজনিত সমস্যার কারণে তিনি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। গত ৩ আগস্ট তাঁর বাইপাস সার্জারি করা হয়। আজ সোমবার তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে।
গতকাল হায়দারাবাদের এক বেসরকারি হাসপাতালে বিকেল ৩টে নাগাদ তাঁর মৃত্যু হয়। হাসপাতালের বিবৃতি অনুসারে, “রবিবার বিকেল ৩টে নাগাদ মৃত্যু হয়েছে গদ্দরের। তিনি হৃদযন্ত্রজনিত একাধিক সমস্যার কারণে গত ২০ জুলাই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন এবং গত ৩ আগস্ট তাঁর বাইপাস সার্জারি করা হয়। তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠছিলেন। যদিও বয়সজনিত কারণে তাঁর শরীরে অন্যান্য সমস্যাও ছিল।”
গদ্দর মূলত পরিচিত ছিলেন তাঁর প্রতিবাদী গণসঙ্গীতের জন্য। সংযুক্ত অন্ধ্রপ্রদেশের বিভিন্ন গণসংগ্রামে তাঁর সক্রিয় ভূমিকা তাঁকে জনমানসে আরও পরিচিত করে তোলে। তেলেঙ্গানা সংগ্রামের সময় তাঁর ‘পদুস্তান্না পোদ্দু মীদা নাদুস্তান্না কালামা পোরু তেলেঙ্গানামা’ গান তাঁকে আরও বিখ্যাত করে তোলে। ওই সময় প্রতিটি সভা সমাবেশে প্রথম এই গান গাওয়া হত।
মাওবাদী রাজনীতিতে যোগ দিয়ে জীবনের একটা বড়ো সময় তিনি আত্মগোপন করে ছিলেন। যদিও অন্ধ্রপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী চেন্না রেড্ডি পিপলস ওয়ার গ্রুপের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলে তিনি প্রকাশ্যে আসেন। ১৯৯৭ সালে নিজের বাড়িতেই তাঁর ওপর চালানো প্রাণঘাতী হামলা থেকে তিনি অল্পের জন্য রক্ষা পান।
১৯৪৯ সালে মেডাকের টুপরানে এক দলিত পরিবারে জন্ম হয় গুম্মাদি ভিট্টাল রাওয়ের। কানাড়া ব্যাঙ্কের সঙ্গে কর্মসূত্রে জড়িত থাকতে থাকতেই ১৯৮০ সাল নাগাদ মাওবাদী ভাবধারার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তিনি সিপিআই-এমএল (পিপলস ওয়ার) গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত হন এবং আত্মগোপন করেন। তিনি পিপলস ওয়ার গ্রুপের সাংস্কৃতিক শাখা জননাট্য মণ্ডলীর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। পরবর্তী সময়ে তিনি এই গোষ্ঠী কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া (মাওয়িস্ট)-এ পরিণত হয়।
দীর্ঘদিন উগ্র বাম রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও ২০১৭ সাল নাগাদ তিনি প্রকাশ্যে মাওবাদীদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিন্ন করেন এবং নিজেকে ‘আম্বেদকারাইট’ বলে ঘোষণা করেন। এরপর ২০১৮ সালের নির্বাচনে প্রথম ভোট দেন গদ্দর। এই বছরের জুন মাসে তিনি তাঁর নতুন রাজনৈতিক দল গদ্দর প্রজা পার্টির সূচনা করেন। সম্প্রতি কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর ভারত জোড়ো যাত্রাতেও অংশ নিয়েছিলেন গদ্দর। এছাড়াও খাম্মামে তেলেঙ্গানা কংগ্রেসের জনসভায় তিনি যোগ দিয়েছিলেন।
তাঁর মৃত্যুতে তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রশেখর রাও, কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন