একটি মৃতপ্রায় শিল্প - ফিরছে হাতে লেখা চিঠি

হাতে লেখা চিঠি আজকের প্রজন্মের কাছে অদ্ভুত, আশ্চর্য বা প্রয়োজনাতিরিক্ত মনে হতে পারে। যদিও একটু চিন্তা করলে দেখা যাবে, ‘হাতে লেখা চিঠি’–র মতো আত্মিক যোগাযোগের ভাষা আর কিছু নেই।
চলছে হাতে লেখা
চলছে হাতে লেখাছবি - ইঙ্ক অ্যান্ড ব্লিস ট্যুইটার হ্যান্ডেলের সৌজন্যে
Published on

মনের ভাব প্রকাশ করার মাধ্যম হল ভাষা। ভাষাই মানুষকে মানুষের সামনে প্রকাশ করার একমাত্র পদ্ধতি। আজকের ডিজিটাল যুগের ভাষার বিবর্তন কিভাবে ‘হাতে লেখা চিঠি’ থেকে টেক্সট, ইমেইল, হোয়াটস্যাপে এসে মিশেছে তা কারও কাছে অজানা নয়। ব্যস্ত মানুষের ব্যস্ত জীবনে এই উপায়গুলি হয়তো প্রচণ্ড কার্যকরী ও গুরুত্বপূর্ণ। প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে এই মাধ্যমগুলি কম সময়ে অনেক বেশি কাজ করতে সক্ষম, সেই বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। যদিও এই চাপের সামনে নতি স্বীকার করে হারিয়ে যেতে বসেছে হাতে লেখা চিঠি।

যে ডিজিটাল অভ্যাসের মধ্যে আমরা ঢুকেছি, তাতে যোগাযোগের পদ্ধতি হয়তো সহজ হয়েছে। কিন্তু সেই যোগাযোগ নিতান্তই বাহ্যিক, যাতে আত্মিকতার কোনও ছোঁয়া নেই, থাকা সম্ভব নয়। যার একমাত্র কারণ এই টেক্সট, ইমেইল বা হোয়াটস্যাপের মাধ্যমে যে যোগাযোগ পদ্ধতি তা আসলে খুব ক্ষণস্থায়ী।

হাতে লেখা চিঠি আজকের প্রজন্মের কাছে অদ্ভুত, আশ্চর্য বা প্রয়োজনাতিরিক্ত মনে হতে পারে, কারণ এই প্রজন্মের এই বিষয়ে অজ্ঞতা। যদিও একটু চিন্তা করলে দেখা যাবে, ‘হাতে লেখা চিঠি’–র মতো আত্মিক যোগাযোগের ভাষা আর কিছু নেই। ভেবে দেখা যেতে পারে এই সময় যদি হাতে লেখা চিঠি কাউকে পাঠানো হয় তবে তা প্রেরক ও গ্রাহককে কতটা আত্মিক আনন্দ দিতে সক্ষম। এতে একদিকে যেমন রয়েছে নস্টালজিয়ার ছোঁয়া তেমনি অন্যদিকে হাতে লেখা চিঠি নিজেকে প্রকাশ করার একটি দুর্দান্ত উপায়। যা ইমেইল বা টেক্সটের চেয়ে অনেক বেশি অর্থবহ৷ প্রেরকের আবেগ এবং হৃদয়গ্রাহী বার্তা প্রকাশ করার জন্য হাতে লেখা চিঠি হল সবচেয়ে অন্তরঙ্গ উপায়।

এ প্রসঙ্গে, মুম্বাইয়ের ক্যালিগ্রাফি এবং ডিজাইন স্টুডিও, ‘ইঙ্ক এন ব্লিস’-এর প্রতিষ্ঠাতা পুজা ভাগবত বলেন, "আমরা বিশ্বাস করি, আপনজনের সাথে আত্মিকতা স্থাপনে ‘হাতে লেখা চিঠি’ নিয়ে মানুষ আগের চেয়ে এখন অনেক বেশি উৎসাহী। হাতে লেখা চিঠি যে কোনও বিশেষ অনুষ্ঠানের জন্য আদর্শ।” পুজা আরও বলেন, “আমি নিজের হাতে সব লিখি এবং ডিজাইন করি, যা করে আমি প্রচণ্ড খুশি। এরকম একটা নস্টালজিয়াকে উসকে দেওয়াই ‘ইঙ্ক এন ব্লিস’-এর মূল উদ্দেশ্য। পুজা ক্যালিগ্রাফিতে পটু। তিনি বলেন, ক্যালিগ্রাফি করতে অনেক ধৈর্যের প্রয়োজন। ক্যালিগ্রাফি করে চিঠি তৈরি করা ও নিজের ভাবকে অন্যের ভাবের সাথে মিশিয়ে তার জন্য চিঠি তৈরি করা –পুরো বিষয়টিই আসলে অত্যন্ত নতুন।”

পুজার সংস্থা তাদের কাজের ধরণ নিয়ে খুবই উচ্চাকাঙ্ক্ষী। 'ইঙ্ক এন ব্লিস'কে চিঠি পাঠান অনেকে, তাঁরা সেই চিঠিগুলি নিজের মনের মতো সাজিয়ে তোলেন। চিঠিগুলি অন্য মাত্রা পায় পুজার হাতের লেখনিতে। তিনি তাদের এক ক্লায়েন্টের কথা উল্লেখ করে বলেন, সম্প্রতি ৮১ বছর বয়সী স্ত্রীর কাছে তাঁর স্বামীর হয়ে একটি আন্তরিক প্রেমের চিঠি লেখার সুযোগ পেয়েছিল ‘ইঙ্ক এন ব্লিস’। প্রথমবারের মতো, কাউকে ৮১ তম জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে পেরে তারা খুবই খুশি। এই চিঠিটি পড়ে, লেখার সময় হৃদয় ভালবাসায় ভরে গিয়েছিল। তাঁরা এই কাজ করতে পেরে ধন্য।

‘ইঙ্ক এন ব্লিস’ আসলে চিঠি লেখার কাজ করে থাকে যা আসলে খুবই প্রাচীন কাজ। আবার একই সাথে অত্যাধুনিকও। এই হোয়াটস্যাপের যুগে চিঠি লিখে দেবার মতো একটা সংস্থা আসলে মানুষের পুরনো অভ্যাসকে মনে করানোরই চেষ্টা।

- with inputs from IANS

SUPPORT PEOPLE'S REPORTER

ভারতের প্রয়োজন নিরপেক্ষ এবং প্রশ্নমুখী সাংবাদিকতা — যা আপনার সামনে সঠিক খবর পরিবেশন করে। পিপলস রিপোর্টার তার প্রতিবেদক, কলাম লেখক এবং সম্পাদকদের মাধ্যমে বিগত ১০ বছর ধরে সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে। এই কাজকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন আপনাদের মতো পাঠকদের সহায়তা। আপনি ভারতে থাকুন বা দেশের বাইরে — নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে একটি পেইড সাবস্ক্রিপশন নিতে পারেন। স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in