'আমি দেশাচারের নিতান্ত দাস নহি" - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর?

তিনি কেন একথা বলেছিলেন?
পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরফাইল ছবি সংগৃহীত
Published on

“আমি দেশাচারের নিতান্ত দাস নহি; নিজের বা সমাজের মঙ্গলের নিমিত্ত যাহা উচিত বা আবশ্যক বোধ হইবে তাহা করিব; লোকের বা কুটুম্বের ভয়ে কদাচ সঙ্কুচিত হইব না।” বাঙলা ১২৭৭-এর ৩১ শ্রাবণ বিদ্যাসাগর এই চিঠি লিখেছিলেন ভাই শম্ভুচন্দ্রকে। এই চিঠির পেছনে ছিলো এক বড় ঘটনা। ওই বছরেরই ২৭ শ্রাবণ তাঁর ছেলে নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায় বিধবা বিবাহ করেন। সেই সময় যা নিয়ে আলোড়ন উঠলেও বিদ্যাসাগর নিজের অবস্থানে অনড় ছিলেন।

ওই চিঠিতেই তিনি আরও লেখেন – “বিধবাবিবাহ-প্রবর্তন আমার জীবনের সর্বপ্রধান সৎকর্ম। এজন্মে যে ইহা অপেক্ষা অধিকতর আর কোন সৎকর্ম করিতে পারিব, তাহার সম্ভাবনা নাই। এ বিষয়ের জন্য সর্বস্বান্ত হইয়াছি এবং আবশ্যক হইলে প্রাণান্ত স্বীকারেও পরাঙ্মুখ নহি।”

ঊনবিংশ শতকের এই বিশিষ্ট বাঙ্গালী শিক্ষাবিদ, সমাজ সংস্কারক ও গদ্যকার সম্পর্কে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ বলেছেন— ‘তাঁহার মহৎ চরিত্রের যে অক্ষয়বট তিনি বঙ্গভূমিতে রোপণ করিয়া গিয়াছেন তাহার তলদেশ জাতির তীর্থস্থান হইয়াছে।‘ তাঁর প্রকৃত নাম ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। সংস্কৃত ভাষায় অগাধ পাণ্ডিত্যের জন্য ১৮৪১ সালে তিনি ‘বিদ্যাসাগর’ উপাধিতে ভূষিত হন।

১৮২০ সালের ২৬শে সেপ্টেম্বর তৎকালীন হুগলী জেলা, বর্তমান পশ্চিম মেদিনীপুরের বীরসিংহ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁদের আদিবাস ছিলো হুগলী জেলার বনমালীপুর। আজ তাঁর ২০১ তম জন্মদিবস।

বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর একজন দার্শনিক, শিক্ষাবিদ, লেখক, অনুবাদক, প্রকাশক এবং ভাষাবিদ ছিলেন। অন্যদিকে তিনি ছিলেন একজন সমাজ সংস্কারক, বিধবা বিবাহ, স্ত্রী শিক্ষা প্রচলন, বহু বিবাহ এবং বাল্য বিবাহের মতো সামাজিক অভিশাপ দূরীকরণে তাঁর অক্লান্ত সংগ্রাম আজও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরিত হয়। নারী মুক্তির বার্তা ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে, বিভিন্ন জেলাতে বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেছিলেন।

বাঙ্গালার নবজাগরণের এক পুরোধা ব্যক্তিত্ত্ব দেশের আপামর জনগণের কাছে দয়ার সাগর নামে পরিচিত ছিলেন। যে লোকাচার ধর্মের নামে সমাজে প্রচলিত, আসলে তা ধর্ম বহির্ভূত স্থবিরতার আচার মাত্র। হিন্দু শাস্ত্রবিদ হয়েও, ধর্মকে শিক্ষাক্ষেত্র থেকে নির্বাসিত করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধাবোধ করেন নি।

১৮৯১ সালের ২৯ সে জুলাই কলকাতার বাদুড়বাগানের বাসভবনে লিভার ক্যানসারে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন আমাদের প্রাতঃস্মরণীয় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।

SUPPORT PEOPLE'S REPORTER

ভারতের প্রয়োজন নিরপেক্ষ এবং প্রশ্নমুখী সাংবাদিকতা — যা আপনার সামনে সঠিক খবর পরিবেশন করে। পিপলস রিপোর্টার তার প্রতিবেদক, কলাম লেখক এবং সম্পাদকদের মাধ্যমে বিগত ১০ বছর ধরে সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে। এই কাজকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন আপনাদের মতো পাঠকদের সহায়তা। আপনি ভারতে থাকুন বা দেশের বাইরে — নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে একটি পেইড সাবস্ক্রিপশন নিতে পারেন। স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in