নাট্যাচার্য গিরিশ চন্দ্র ঘোষ

নাট্যাচার্য গিরিশ চন্দ্র ঘোষ
নাট্যাচার্য গিরিশ চন্দ্র ঘোষফাইল ছবি সংগৃহীত

বাংলা থিয়েটারের স্বর্ণযুগের প্রাণপুরুষ, বাংলা থিয়েটারের জনক গিরিশ চন্দ্র ঘোষের আজ ১৭৪তম জন্মদিবস। ১৮৪৪ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় তাঁর জন্ম।

তিনি ছিলেন একাধারে সঙ্গীতজ্ঞ, কবি, নাট্যকার, ঔপন্যাসিক, মঞ্চনাট্য নির্দেশক এবং অভিনেতা।

১৮৬৭ সালে মাইকেল মধুসূদন রচিত ‘শর্মিষ্ঠা’ নাটকের গীতিকার হিসেবে নাট্যজগতে তাঁর প্রথম জীবন শুরু হয়েছিল। এর ঠিক দু’বছর পরে দীনবন্ধু মিত্রের ‘সধবার একাদশী’ নাটকে অভিনয় করে সুনাম অর্জন করেন। ১৮৭২ সালে তিনিই প্রথম বাংলায় পেশাদার নাট্য কোম্পানি ন্যাশনাল থিয়েটার প্রতিষ্ঠা করেন।

১৮৭৭ সালে মেঘনাদ বধ কাব্যে রামচন্দ্র ও মেঘনাদ উভয় ক্ষেত্রে অভিনয়ের জন্য সাধারণী পত্রিকার সম্পাদক অক্ষয়চন্দ্র সরকার তাঁকে “বঙ্গের গ্যারিক” আখ্যায় ভূষিত করেন। এরপর ১৮৮৪ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ‘নটী বিনোদিনী’কে নিয়ে স্টার থিয়েটারে ‘চৈতন্যলীলা’ নাটকটি মঞ্চস্থ করেছিলেন। এই নাটকটি দেখে রামকৃষ্ণদেব মুগ্ধ হয়ে বিনোদিনীকে আশীর্বাদ করেছিলেন। এরপর গিরিশ ঘোষ রামকৃষ্ণদেবের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। রামকৃষ্ণদেবের শিষ্যত্ব গ্রহণের পর গিরিশ ঘোষের মধ্যে পরিবর্তন আসে। এইসময় ধর্ম প্রভাবে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি একাধিক পৌরাণিক ও ভক্তিমূলক নাটক রচনা করেন।

গিরিশ চন্দ্র ঘোষ পৌরাণিক, ভক্তিমূলক, সামাজিক ও ঐতিহাসিক বিষয় নিয়ে মোট ৪০ টি নাটক রচনা করেছিলেন। উল্লেখযোগ্য পৌরাণিক নাটকগুলির মধ্যে ‘রাবণবধ’, ‘অভিমুন্যবধ’, “সীতার বনবাস’, ‘বিল্বমঙ্গল’, ‘অজ্ঞাতবাস’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। “অশোক”,”সিরাজউদ্দৌলা”, “মীরকাশিম”, “ছত্রপতি শিবাজী” ইত্যাদি তাঁর রচিত প্রসিদ্ধ ঐতিহাসিক নাটক। তাঁর রচিত সামাজিক নাটকগুলি হলো প্রফুল্ল, হারানিধি, মায়াবসান, বলিদান ইত্যাদি। আবার “মুকুল মঞ্জরা” ও “আবুহোসেন” এর মতো কিছু রোমান্টিক নাটকও তিনি রচনা ক‍রেছেন। এছাড়া নাট্যকার গিরিশচন্দ্র সপ্তমীতে বিসর্জন, বেল্লিক বাজার, বড়দিনের বকশিশ, সভ্যতার পান্ডা ও য্যায়সা কি ত্যায়সা নামে কিছু প্রহসন রচনা করেছিলেন।

১৮৮৩-১৯০৭ সাল পর্যন্ত এই ২৪ বছর ধরে তিনি স্টার, এমারেল্ড, মিনার্ভা, ক্লাসিক ও কোহিনুর প্রভৃতি মঞ্চগুলি পরিচালনা করেন। এইভাবে নাট্যকার গিরিশ ঘোষ সারাজীবন বিভিন্ন রঙ্গালয়ে নাট্যকার ও পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। বাংলা নাটক ও অভিনয় জগতের উন্নতি সাধনে তাঁঁর অবদান অনস্বীকার্য। বাংলার সর্বাধিক সংখ্যক নাটক রচয়িতা গিরিশচন্দ্র অসাধারণ ব্যক্তিত্ব ও অভিনয় প্রতিভাবলে তাঁর জীবদ্দশাতেই কিংবদন্তীতে পরিণত হন।

১৯১২ সালের ৮ ই ফেব্রুয়ারি ৬৮ বছর বয়সে নাট্যকার গিরিশচন্দ্র ঘোষের মৃত্যু হয়।

GOOGLE NEWS-এ Telegram-এ আমাদের ফলো করুন। YouTube -এ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন।

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in