এ বড়ো আঁধার ঘেরা সময় – স্মরণে জীবনানন্দ দাশ

জীবনানন্দ দাস
জীবনানন্দ দাসফাইল ছবি সংগৃহীত
Published on

আমি চলে যাবো তবু জীবন অগাধ/তোমারে রাখিবে ধরে সেইদিন পৃথিবীর ‘পরে/আমার সকল গান তবুও তোমারে লক্ষ্য করে!

রবীন্দ্রোত্তর যুগের সুরিয়ালিস্টিক এই কবিকে স্মরণ করতে গিয়ে দেখি ঝরা পালক এর মতো ১১৯ বছর উড়ে গেছে। তবুও অমলিন রয়ে গেছে ধূসর পান্ডুলিপি।সময় শিকার করেছে কেবল নশ্বর আকৃতি। যাঁর চোখে রূপসী হয়েছে বাংলা, আবার ফিরে আসার দ্যোতনায় অন্ধকারেই যাঁর পথ হাঁটা, সাতটি তারার তিমির জুড়ে লিখে যান একটি কবিতা, মহাপৃথিবীতে আলোকপত্র নিয়ে সেদিন এ ধরণীর বুকে জন্ম নিয়েছেন তিনি।আমাদের প্রিয় সাহিত্যিক জীবনানন্দ দাশ।

যে কবি পেয়েছে শুধু যন্ত্রণার বিষ শুধু জেনেছে বিষাদ/মাটি আর রক্তের কর্কশ স্বাদ,/যে বুঝেছে,প্রলাপের ঘোরে/যে বকেছে,সেও যাবে সরে/একে একে সবি ডুবে যাবে;

জগত ও জীবনের নিরমম সত্যের স্বীকারোকতি স্বীকারোক্তি,নৈরাশ্য ফল্গুর মতো বয়ে গেছে তাঁর বেশিরভাগ সৃষ্টিতে। হেমন্তের ঝড়ে আমি ঝরিব যখন,পথের পাতার মত তুমিও তখন,আমার বুকের পরে শুয়ে রবে?

এই বেদনাবোধ সমস্ত শিল্পমনের প্রশ্ন।কিন্তু কবি উত্তরসন্ধানী হতে গিয়ে হৃদয় মন্থন করে তৈরি করেছেন নতুন কোনো হোঁচট।বাংলা কাব্যের ইতিহাসে স্বয়ম্ভূ এই কবির সৃষ্টির ছত্রে মৃত্যুর ছায়া পড়েছে বার বার।মাকড়সা যেমন তার লালায় জাল বিস্তার করে বেঁচে থাকতে ভালোবাসে অনেকের মতে কবিও তাঁর তৃতীয় নেত্র ও ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে রহস্যলোক সৃষ্টি করে জীবনযাপন করতে পছন্দ করতেন। জগদীশ ভট্টাচার্যর মতে ইন্দ্রিবোধের অতীত এমন এক রহস্যময় প্রেমাবেশের ভেতর কেটেছে তাঁর জীবন।এই অর্থেই তিনি প্রেম ও প্রকৃতির কবি।ধূসর পান্ডুলিপিতে প্রতিদান প্রত্যাশাহীন প্রেমচেতনায় আবিষ্ট কবিসত্তার দিকটি আমরা লক্ষ্য করি।ভাষা সৃষ্টির ক্ষেত্রেও কবিস্বাতন্ত্র্য লক্ষনীয়। বর্ণবৈভব, ধ্বনি মাধুর্য, উপমা অলঙ্কার এবং ভাষার অর্থদ্যোতনা অতুলনীয়।

কবি বরিশালের সন্তান। কৈশোর ও প্রথম যৌবন সেখানেই কেটেছে। মা কুসুমকুমারীর সাহিত্য পরিচর্যায় কেটেছে শিশুকাল। তাঁর ছোটবেলা ছিল প্রকৃতির সাথে মিলেমিশে, জল কাদা গাছগাছালি ফুল পাখি ও সরলতা কল্পনার আবহে। ইংরেজী সাহিত্যের ছাত্র ও অধ্যাপক এই কবি আঠারো বছর বয়স থেকে আমৃত্যু কলকাতাবাসী হয়ে যান।

অবশ্য শুধু জল কাদা গাছ গাছালিতেই আটকে থাকেননি কবি। লিখে গেছেন সমাজ এর কাহিনীও। যা আজ বড়ো, বড়ো বেশি প্রাসঙ্গিক… অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে এ পৃথিবীতে আজ/যারা অন্ধ সবচেয়ে বেশি আজ চোখে দ্যাখে তারা/যাদের হৃদয়ে কোনো প্রেম নেই – প্রীতি নেই – করুণার আলোড়ন নেই/পৃথিবী অচল আজ তাদের সুপরামর্শ ছাড়া।”যারা অন্ধ সবচেয়ে বেশি চোখে দেখে তারা। সত্যিই তো এ বড়ো অদ্ভুত আঁধার ঘেরা সময়। কবি মানসচক্ষে দেখতে পেয়েছিলেন বহু আগেই।

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in