ব্যস্ত কলকাতা। মহাত্মা গান্ধী রোড ও চিত্তরঞ্জন এভিনিউর সংযোগস্থল। সন্ধ্যে নেমেছে। অস্ত সূর্যের আলো মেঘের গায়ে মায়ার আস্তরণ জড়িয়ে দিচ্ছে।
রবীন্দ্রনাথের বধূ কবিতায় যে আকাশ দেখে বালিকা বধূটির মনে পড়ে গিয়েছিলো সখীদের ডাক, “বেলা যে পড়ে এলো জলকে চল”।
সুভাষ মুখোপাধ্যায় অনেকটা সময় পরে সে ব্যাকুল ডাক শুনলেন বুকের খাঁজ থেকে। “কোথা সে ছায়া সখী/কোথা সে জল/জানিস যদি তুই/আমায় বল।”
ইতিহাস থমকে আছে কালো আস্তরণে। পুরোনো বাড়ির ছাদে দিনশেষে ঘরমুখী কাকেরা পুরোনো বাড়ির ভাঙা কার্নিশে বসেছে। অথবা অসময়ের কিছু ওড়াউড়ি।
কলকাতার আকাশ লাল রঙের ছটায় কিছু অন্যরকম কি! “কে যেন ক্ষুব্ধ ভোমরার চাকে ছুঁড়েছে ঢিল/তাইতো দগ্ধ ভগ্ন পুরনো পথ বাতিল”। নতুন কালের ইঙ্গিত পুরোনো কলকাতার মজ্জায়!
“হঠাৎ চমকে ওঠে হাওয়া/সেদিন আর নেই/নেই আর সূর্যবিকিরণ/আমার জীবনে তাই ব্যর্থ হলো বাসন্তী মরণ” ইতিহাস কী এমনই! এত তার বাঁক বদল!
ঘোড়ায় টানা জুরিগাড়ির দরজা ঠেলে নামলেন ফিনফিনে ধুতি পরা ঘোষবাবু। একটুখানি বৈঠকখানায় বসে তারপর অন্দরে। সেখানে তখন চূড়ান্ত ব্যস্ততা। নুচি নরম ফুলকো না হলে বাবুর মন ফুরফুরে থাকবেনা।
তারপরে ঘোড়ায় ট্রাম টেনে নিয়ে গেলো। বাড়ির মেয়েরা অসীম কৌতূহলে দেখেছে সেন্ট্রাল এভিনিউর ওপরের টানা বারান্দার ওপার থেকে।
একটু দূরেই সিংহীবাগান। পাশে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের খবর তো সেভাবে এসে পৌঁছোচ্ছিল না!
গোবিন্দর মার সেজো জা জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে কাজ করে। তার মুখেই শোনা গেছে ওবাড়িতে অন্দরমহলের মেয়েরা সবার সামনে নাটক করছে মঞ্চে উঠে।
গোবিন্দর মা হাত নেড়ে বলে যায় সেসব অসম্ভব গল্প। শ্রোতা এবাড়ির অন্দরের মেয়েরা। তিনটে বাড়ি পরে দত্তগিন্নির ছোটছেলের মেজমেয়ে যেদিন বেথুন ইস্কুলে গেলো পড়তে, দত্তগিন্নি সেই শোকে অন্নজল ত্যাগ করেছিলেন টানা দুদিন। শুধু ফল আর দুধটুকু খেয়ে।
মেহবুব ব্যান্ডের ইয়াসিন এসব গল্প জানেনা।
স্টাইলো টেলারের রাকিবদাও জানেনা। যেখানে কাপড় সেলাই করে ওস্তাগার ভাই, সেখানে একসময় মল্লিকবাড়ির ঘোড়াশাল ছিল। একশো আঠারো নম্বর মহাত্মা গান্ধী রোড সেসব গল্প মনে রাখেনি। শুধু সেই বাড়িগুলোর পুরোনো ছাদে নামছে অলৌকিক সন্ধ্যা।
GOOGLE NEWS-এ Telegram-এ আমাদের ফলো করুন। YouTube -এ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন।