‘মানুষই দেবতা গড়ে’

‘মানুষই দেবতা গড়ে’
প্রতীকী কার্টুন সংগৃহীত
Published on

‘মানুষই দেবতা গড়ে’/তাহার পিতার পরে/করে দেবমহিমা নির্ভর’। বটেই তো। শিব্রাম চক্রবর্তী লিখলেন কেমন ভাবে দেবতার জন্ম হয়।

তারাশঙ্করও ‘হাঁসুলী বাঁকের উপকথা’য় লিখলেন, বনোয়ারি করালির কাছে পরাজিত হয়ে সম্ভ্রমে মুগ্ধতায় তাকে দেখেছিলো যেমনটা অযত্নে পথপার্শ্বে রয়ে যাওয়া নুড়ি পাথরটাকে কুড়িয়ে দেবতার আসনে বসালে তারই দিকে মানুষ মুগ্ধ বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে। সাহিত্যের অন্দরে এত ঘোরাফেরা করার কারণ দেবতার নির্মাণ। এখন মিডিয়া দেবতা গড়ে। মিডিয়াই তো সব গড়ে। দেবতা, বাঁদর, ভিলেন…

লন্ডন কাঁপিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ধন্য করলেন মারগারেট এলিজাবেথ নোবেলকে। নিবেদিতা। সিস্টার নিবেদিতা। লন্ডনের প্রাসাদোপম বাড়িটি ‘বুল প্লাক’ হবার দৌলতে দেখা গেল। বাগবাজারের অতি সাধারণ গৃহখানি এতদিন আমবাঙালির চোখে ধরা ছিলো। আর বইটি বুকের কাছে ধরার ভঙ্গিতে, উঁচু করে বাঁধা চুলের খোঁপায়, গলার মুক্তো মালায় কী স্নিগ্ধতা! আভিজাত্যের কী মনোরম ছাপ! জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন নিবেদিতার আলোকময় উপস্থিতি ঘিরে নিজের মুগ্ধতার কথা। কোথাও নিজেকে সাধারণ বলে জাহির করার কোনও সস্তা প্রচেষ্টা নেই।

মিডিয়া হামলে পড়ছে। তাঁদের দৌলতে সারা বিশ্ব জানতে পারছে তিনি এলেন। বিশ্বের তত আদিখ্যেতা নেই সেকথা বলে নেওয়াই ভালো। কিন্তু ওই যে, বিশ্ববাংলা! বাংলাই তো এখন বিশ্ব! মালিকানা কার তাতে কী যায় আসে! ধম্মং শরণং গচ্ছামি। তিনি বললেন, নিবেদিতার জন্ম লন্ডনে। বিশ্ববাংলা জানলো সে সব অমূল্য কথন। মিডিয়া বলল নিবেদিতা এক লড়াকু মেয়ে। তিনিও অবশ্যই তাই। মিডিয়া বলল নিবেদিতা মানে কলকাতা। মিডিয়া আরো বলল কলকাতা মানে বাংলা, মানে মুখ্যমন্ত্রী। মানেটা কী দাঁড়ালো! এক যোগ চার = পাঁচ, দুই যোগ তিন = পাঁচ। পাঁচ = পাঁচ।ধম্মং শরণং গচ্ছামি। ব্রিটিশ পুলিশ হাঁ হাঁ করে উঠলো। ডোন্ট ক্রস দ্য রোড। স্টপ…। তাতে কী! মানুষই দেবতা গড়ে।

গানওয়ালা একদা বলেছিলেন, একদিন তিনি পূজিত হবেন বাঙ্গালীর গৃহকোণে রাখা দেবতার থানে। তেত্রিশ কোটি দুই। হাইরোডের ধারে লরি চালক পেন্নামি দিয়ে ভক্তিভরে তেত্রিশ কোটি এক তম দেবতার শরণ নিয়ে বলে যায় যাতায়াতের পথে ‘জয় বাবা হাইরোডেশ্বর।’ চাঁদ সদাগরের ইগো তো সহজে দেবীকে মানেনি। দেবী মনসা তাও একটু একটু করে শাস্তি দিতে দিতে শেষ অবধি বাঁ হাতে একটা ফুল নিজের উদ্দেশ্যে ফেলিয়ে নিলেন। তেত্রিশ কোটি দুই নম্বর দেবী স্বমহিমায় উচ্ছ্বাস বিলিয়ে যান, উন্নয়ন বিলিয়ে যান। বিশ্ব বাংলা বিগলিত। চাঁদ সদাগর উঠে দাঁড়িয়ে পেন্নাম ঠুকেই জানতে চায়, সারের দাম কেন বাড়ছে। তেত্রিশ কোটি দুই। দেবতার চোখ ভুল করেনা অসুর চিনতে। মাওবাদী চিনে নেয় অভিজ্ঞ দেবোপম চোখ। জয় বাবা হাইরোডেশ্বর। বাংলার পথ পরিক্রমা এমনই নিরাপদ হোক।

টিভির পর্দায় লন্ডনের আকাশটা কী ঝকঝকে লাগছিলো। আর পথঘাট কেমন আলো আলো। বিশ্ব বাংলাও আলোকময়। নীলে সাদায় সেজে থাকে বাগবাজারে নিবেদিতার ভগ্নপ্রায় বাড়ির দুদিকের ল্যাম্পপোস্ট। উদ্বোধন শেষ। ঐশব্রজ, গর্ব, প্রচার – নিবেদিতার নব জন্মের নানাদিক এবার ব্যানারে হোর্ডিং-এ কলকাতার পথচারী, বাসচারী, হলদে বা নীল সাদা ট্যাক্সিচারী, ট্রামচারী, রিকশাচারী এবং অবশ্যই অ্যাম্বুলেন্সচারী জনগণমনকে উদ্বুদ্ধ করে তুলবে। সেই সঙ্গে তেত্রিশ কোটি দুই এর হাস্যমুখের প্রেরণা। সব একাকার হয়ে যায়। যাবে। দেবতার জন্ম গল্পটি লিখেছিলেন শিব্রাম। ‘তোরা সব জয়ধ্বনি কর’, তোরা শব জয়ধ্বনি কর।

SUPPORT PEOPLE'S REPORTER

ভারতের প্রয়োজন নিরপেক্ষ এবং প্রশ্নমুখী সাংবাদিকতা — যা আপনার সামনে সঠিক খবর পরিবেশন করে। পিপলস রিপোর্টার তার প্রতিবেদক, কলাম লেখক এবং সম্পাদকদের মাধ্যমে বিগত ১০ বছর ধরে সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে। এই কাজকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন আপনাদের মতো পাঠকদের সহায়তা। আপনি ভারতে থাকুন বা দেশের বাইরে — নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে একটি পেইড সাবস্ক্রিপশন নিতে পারেন। স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in