
কেরল জুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছে প্রাইমারি অ্যামিবিক মেনিনগোএনসেফেলাইটিস (PAM) নামের বিরল অথচ ভয়ঙ্কর মস্তিষ্কজনিত সংক্রমণ। এর মূল কারণ নেগলারিয়া ফাওলেরি (Naegleria fowleri), যাকে সাধারণভাবে বলা হয় ‘ব্রেন-ইটিং অ্যামিবা’। রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৬৯টি নিশ্চিত আক্রান্তের মধ্যে ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতেই বেশির ভাগ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
স্বাস্থ্য দফতরের সতর্কবার্তা
কেরলের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বীণা জর্জ জানিয়েছেন, রাজ্য এক কঠিন জনস্বাস্থ্য সমস্যার মুখোমুখি। গত বছর সংক্রমণ মূলত কোঝিকোড ও মালাপ্পুরম জেলার কিছু জায়গায় সীমাবদ্ধ থাকলেও এ বার ছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন জেলায়। আক্রান্তদের মধ্যে তিন মাস বয়সী শিশু থেকে শুরু করে ৯১ বছর বয়সি বৃদ্ধও রয়েছেন। মন্ত্রীর কথায়, “এ বছর সংক্রমণ একক ও বিচ্ছিন্নভাবে ঘটছে। কোনও নির্দিষ্ট জলকে কেন্দ্র করে নয়। ফলে রোগতত্ত্ব অনুসন্ধান আরও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
রোগ কীভাবে ছড়ায়?
সরকারি নথি অনুযায়ী, PAM মূলত মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রকে আক্রমণ করে এবং দ্রুত মস্তিষ্কের টিস্যু ধ্বংস করে ফেলে। এর ফলেই মারাত্মক মস্তিষ্কফুলে যাওয়া ও মৃত্যু হয়। উষ্ণ, বিশেষ করে স্থির মিঠে পানিতে এই অ্যামিবার উপস্থিতি বেশি। নাকের ভেতর দিয়ে শরীরে প্রবেশ করেই এটি মস্তিষ্কে পৌঁছায়। তবে দূষিত জল খাওয়ার মাধ্যমে সংক্রমণের ঝুঁকি নেই। তাই সাঁতার, ডুব দেওয়া বা স্থির জলে স্নান করাই সবচেয়ে বড় বিপদ। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পানির তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে এ রোগের ঝুঁকিও বাড়ছে।
উপসর্গ কী কী?
রোগটি শনাক্ত করা কঠিন, কারণ উপসর্গ অনেকটাই ব্যাকটেরিয়াল মেনিনজাইটিসের মতো। মাথাব্যথা, জ্বর, বমি বমি ভাব, বমি — এগুলো প্রথমদিকে দেখা যায়। দ্রুত অবস্থার অবনতি ঘটে এবং অল্প সময়ের মধ্যেই স্নায়বিক সমস্যার লক্ষণ দেখা দেয়। সাধারণত সংক্রমণের এক থেকে নয় দিনের মধ্যে উপসর্গ শুরু হয়। অনেক ক্ষেত্রে কয়েক ঘণ্টা থেকে এক-দু’দিনের মধ্যেই তীব্র আকার নেয়।
চিকিৎসা কতটা সম্ভব?
বিশেষজ্ঞদের মতে, PAM-এ মৃত্যুহার অত্যন্ত বেশি। এখন পর্যন্ত যারা বেঁচে ফিরেছেন, তাদের বেশিরভাগকেই সংক্রমণের একেবারে শুরুর দিকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছিল। আগেভাগে নির্ণয় এবং একাধিক অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ওষুধের সমন্বিত ব্যবহারই একমাত্র উপায়। তবে রোগের বিরলতা, দ্রুত ছড়িয়ে পড়া এবং নির্ভরযোগ্য পরীক্ষার অভাব চিকিৎসাকে কঠিন করে তুলেছে।
প্রতিরোধে করণীয়
স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, স্থির বা অপরিশোধিত মিঠে জলে সাঁতার, ডুব বা স্নান এড়িয়ে চলতে হবে। সাঁতার কাটলে নাক ক্লিপ ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কূপ বা ট্যাঙ্কের জল নিয়মিত পরিষ্কার ও ক্লোরিন মেশানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কেউ যদি সম্প্রতি এ ধরনের জলে গিয়েও জ্বর, মাথাব্যথা বা বমি-জাতীয় উপসর্গে ভোগেন, তবে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে বলা হয়েছে।
পরিস্থিতি কতটা উদ্বেগজনক?
২০১৬ সালে কেরলে প্রথমবার এই রোগ ধরা পড়েছিল। ২০২৩ পর্যন্ত রাজ্যে মোট ৮টি আক্রান্তের ঘটনা সামনে এসেছিল। কিন্তু গত বছর হঠাৎ বেড়ে দাঁড়ায় ৩৬টি আক্রান্ত ও ৯টি মৃত্যুতে। এ বছর সেই সংখ্যাই দ্বিগুণ হয়েছে—৬১ আক্রান্ত, ১৯ মৃত্যু। স্বাস্থ্য দফতর এনসিডিসি-র (National Centre for Disease Control) সহযোগিতায় পরিবেশগত পরীক্ষা চালাচ্ছে, যাতে সম্ভাব্য দূষিত জল চিহ্নিত করা যায়।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন