
কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়ার সার শহরে কপিল শর্মার (Kapil Sharma) নতুন রেস্তরাঁয় চলল এলোপাথাড়ি গুলি। তবে এই ঘটনায় কোনও হতাহতের খবর নেই। হামলার দায় স্বীকার করেছেন হরজিৎ সিং লাড্ডি, যিনি খালিস্তানি জঙ্গি সংগঠন বাব্বর খালসা ইন্টারন্যাশনাল (বিকেআই)-এর সঙ্গে যুক্ত।
সদ্য নতুন রেস্তরাঁর ব্যবসা শুরু করেছিলেন ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় কৌতুকশিল্পী কপিল শর্মা। কানাডায় 'ক্যাপস ক্যাফে' নামক একটি ক্যাফে চালু করেছেন তিনি। যার দেখভাল করেন তাঁর স্ত্রী গিনি। জানা গেছে, কানাডার স্থানীয় সময় অনুযায়ী বুধবার ভোরের দিকে সবে ক্যাফে খুলেছে, গাড়ি করে কয়েকজন দুষ্কৃতী এসে বাইরে থেকে এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে থাকে ক্যাফে উদ্দেশ্য করে। মোট ৯ রাউন্ড গুলি চলেছে।
এই ঘটনার দায় স্বীকার করেছেন হরজিৎ সিং লাড্ডি। সমাজ মাধ্যমে পোস্ট করে তিনি জানিয়েছেন, তিনি এবং বিকেআই -এর সঙ্গে যুক্ত তুফান সিং বুধবার রাতে কপিলের ক্যাফেতে হামলা চালান। তিনি জানিয়েছেন, কপিল শর্মা তাঁর শো 'কমেডি উইথ কপিল শর্মা'তে সম্প্রদায় নিহং শিখদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক এবং আচরণ সম্পর্কে কিছু 'হাস্যকর' মন্তব্য করেছিলেন। যা ওই সম্প্রদায়ের ভাবাবেগে আঘাত করেছে।
হরজিৎ জানিয়েছেন, "শো-তে একটি চরিত্রকে নিহং শিখ পোশাক পরে থাকতে দেখা গেছে। তাদের আচরণ সম্পর্কে কিছু হাস্যকর মন্তব্য করা হয়েছে। এগুলিকে আপত্তিকর এবং সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছে। কোনও ধর্ম বা আধ্যাত্মিক পরিচয়কে কৌতুকের আড়ালে উপহাস করা যাবে না"।
উল্লেখ্য, নিহং শিখরা শিখ ধর্মের মধ্যে একটি স্বতন্ত্র এবং ঐতিহ্যবাহী সামরিক গোষ্ঠী, যারা তাদের স্বতন্ত্র নীল পোশাক, ঐতিহ্যবাহী অস্ত্র এবং ঐতিহ্যবাহী শিখ সামরিক অনুশীলনের জন্য পরিচিত।
হরজিৎ জানিয়েছেন, কপিল শর্মাকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে বলার জন্য তাঁর ম্যানেজারকে বহুবার ফোন করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি ফোন তোলেননি। ফলে এই হামলা। ওই খালিস্তানী জঙ্গি জনিয়েছেন, "এটা শুধু সাবধানবাণী।"
প্রসঙ্গত, পাঞ্জাবের নওয়াংশহরের বাসিন্দা হরজিৎ সিং লাড্ডি ‘বব্বর খালসা ইন্টারন্যাশনাল’ (BKI)-এর সক্রিয় সদস্য। ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা (NIA) তাকে মোস্ট ওয়ান্টেড জঙ্গিদের তালিকায় রেখেছে। অন্যদিকে, কানাডিয়ান সরকার বিকেআইকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
অন্যদিকে, এই ঘটনার পর কপিল শর্মার পরিবারের পক্ষ থেকে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে কপিলের টিমের তরফে বিবৃতি জারি করা হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “এখনও ধাক্কা সামলে উঠতে পারিনি, তবে হাল ছাড়ছি না"।
আরও জানানো হয়েছে, "আমরা ক্যাপস ক্যাফে খুলেছিলাম গরম কফির মাধ্যমে উষ্ণ অভ্যর্থনা পরিবেশন করব বলে। আশা ছিল বন্ধুত্বপূর্ণ কথোপকথনের মধ্য দিয়ে আমাদের বিদেশি পরিবারের সকলকে নিয়ে একটা জমাটি আড্ডা হবে। আমরা স্বপ্ন দেখেছিলাম, এই ক্যাফেতে আগত অতিথিদের জীবনে আনন্দঘন মুহূর্ত তৈরি করব। কিন্তু এহেন হিংসামূলক ঘটনা ঘটিয়ে আমাদের এই স্বপ্নভঙ্গ করা ভীষণই হৃদয়বিদারক। আমরা এখনও ধাক্কা সামলে যাচ্ছি, তবে হাল ছাড়ছি না"।
পাশাপাশি শুভানুধ্যায়ীদের ধন্যবাদ জানিয়ে কপিলের ক্যাফের তরফে সংযোজন, "আপনাদের সহানুভূতি, প্রার্থনা এবং আমাদের ক্যাফের যত স্মৃতি, আপনারা আমাদের সঙ্গে ভাগ করে নিয়ে যেভাবে পাশে থেকেছেন, সকলকে ধন্যবাদ। আপনাদের বিশ্বাস, ভালোবাসার পাশাপাশি আমাদের যৌথ প্রচেষ্টায় এই ক্যাফে দাঁড়িয়ে রয়েছে। চলুন, আমরা সকলে হিংসার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই এবং এটা নিশ্চিত করি যে এই ক্যাপস ক্যাফে আবারও আগের মতো উষ্ণ অভ্যর্থনা এবং খাঁটি বন্ধুত্বের জায়গা হিসেবে উঠে দাঁড়াবে"।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন