Zakir Hussain: স্তব্ধ হল তবলায় জাদুস্পর্শ, প্রয়াত শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের তালপুরুষ জাকির হোসেন

People's Reporter: রবিবার আমেরিকার সান ফ্রান্সিসকোর এক হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৭৩।
জাকির হোসেন
জাকির হোসেনছবি সংগৃহীত
Published on

স্তব্ধ হল তবলায় জাদুস্পর্শ। প্রয়াত উস্তাদ জাকির হোসেন। রবিবার আমেরিকার সান ফ্রান্সিসকোর এক হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। সংবাদ সংস্থা পিটিআই তাঁর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৭৩।

দীর্ঘ দিন ধরেই রক্তচাপজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন কিংবদন্তী তবলাবাদক। সম্প্রতি হৃদ্‌যন্ত্রে সমস্যা দেখা দেওয়ায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। আইসিইউতে চলছিল চিকিৎসা। কিন্তু রক্তচাপ ও হৃদযন্ত্রের সমস্যার কোনও উন্নতি হয়নি। চিকিৎসকদের সমস্ত প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিয়ে রবিবার তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

তবলায় জাকির হোসেন মানেই ম্যাজিক। তাল তরঙ্গের মূর্ছনায় ভেসে যাওয়া। শুধুমাত্র তাঁর তবলা শুনতেই হাজার হাজার মানুষ লাইন দিয়ে টিকিট কেটেছেন। টিকিট না পেয়ে শীতের রাতে নজরুল মঞ্চের মূল প্রেক্ষাগৃহের বাইরে লাগানো বড় জায়ান্ট স্ক্রিনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে বাজনা শুনছেন তাঁর অনুরাগীরা – এমন দৃশ্যও দেখেছে কলকাতাবাসী। শেষবার ২০২২ সালে কলকাতায় এসে অনুষ্ঠান করেন তিনি।

১৯৫১ সালে মুম্বইয়ে জন্ম জাকিরের। তাঁর পিতা উস্তাদ আল্লারাখাও ছিলেন প্রখ্যাত তবলাবাদক। তিনি জাকিরের গুরুও ছিলেন। শোনা যায়, উস্তাদ বড়ে গুলাম আলি খাঁ-সাহিব জাকিরের নামকরণ করেছিলেন। তিন বছর বয়স থেকেই তবলা বাজানো শুরু করেন জাকির। সাত বছর বয়স থেকে মঞ্চে একক অনুষ্ঠান করেছেন তিনি। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, “আমি এমন বাড়িতে জন্মেছিলাম, যেখানে জন্মানোর পর থেকেই তবলা শুনছি। একজন শিল্পীর বাড়িতে আমার জন্ম। ফলে নার্সিং হোম থেকে আসা ইস্তক আমার শিক্ষা শুরু। আমার কাছে তো অন্য কোনও বিকল্প ছিল না। ফলে আমার শিক্ষা শুরু হয়েছিল কথা বলতে পারার আগে থেকেই।”

পন্ডিত রবিশঙ্কর, উস্তাদ আমজাদ আলি খান, জর্জ হ্যারিসনের মতো দিকপালদের তবলায় সঙ্গ দিয়েছেন জাকির। সঙ্গীতপ্রেমীদের মনের মণিকোঠায় থেকে গেল সন্তুরের জাদুকর প্রয়াত শিবকুমার শর্মার সাথে তাঁর যুগলবন্দী। ভারত সরকারের তরফ থেকে ১৯৮৮ সালে পদ্মশ্রী, ২০০২ সালে পদ্মভূষণ, এবং ২০০৩ সালে পদ্মবিভূষণ সম্মান দেওয়া হয়েছে তাঁকে। ২০২৪ সালে ৬৬ তম গ্র্যামি পুরস্কারের মঞ্চেও জয়জয়কার হয়েছিল উস্তাদ জাকির হুসেনের। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ‘বেস্ট গ্লোবাল মিউজ়িক অ্যালবাম’ হিসাবে পুরস্কৃত হয়েছিল ভারতীয় ব্যান্ড ‘শক্তি’র গানের অ্যালবাম ‘দিস মোমেন্ট’। ‘শক্তি’ ব্যান্ডের প্রধান কণ্ঠশিল্পী শঙ্কর মহাদেবন। তবলাবাদক ছিলেন জাকির। পাশাপাশি 'পশতু' (Pashto) গানের জন্যও ওইবছর গ্র্যামি জিতেছেন তিনি। মোট তিনটি গ্র্যামি জিতেছিলেন তিনি।

কিংবদন্তীর প্রয়াণে শোকস্তদ্ধ সঙ্গীত জগত থেকে শুরু করে রাজনৈতিক ও অভিনয় দুনিয়া। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শোকপ্রকাশ করে এক্স-এ লেখেন, “সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ তবলাবাদক উস্তাদ জাকির হুসেনের মৃত্যুতে গভীর ভাবে মর্মাহত। দেশের এবং তাঁর লক্ষ লক্ষ ভক্তদের জন্য চরম ক্ষতি। জ়াকির হুসেনের পরিবার এবং তাঁর ভক্তদের আমি আমার আন্তরিক সমবেদনা জানাই।”

শোকপ্রকাশ করেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, কংগ্রেস সাংসদ প্রিয়াঙ্কা গান্ধী, অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা, আদিত্য ঠাকরে, হরদীপ সিং পুরীর মতো রাজনীতিবিদরা। হর্ষ গোয়েঙ্কা, অনন্ত মাহিন্দ্রা, এ আর রহমান, কমল হাসান, অক্ষয় কুমার, করিনা কাপুর, রনবীর সিং, ভূমি পেডনেকররাও সোশ্যাল মিডিয়ায় জাকির হোসেনের প্রয়াণে শোকপ্রকাশ করেছেন।

বাড়িতে দেবী সরস্বতীর বন্দনা করার পাশাপাশি কোরানও পাঠ করতেন জাকির হুসেন। আবার স্কুলে গিয়ে চার্চে প্রার্থনাও করতেন তিনি। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, “এই সমস্ত প্রতিষ্ঠান কোনও কিছু আমার উপর চাপিয়ে দেয়নি। বাড়িতে দেবী সরস্বতী, কৃষ্ণের কথা শোনা, মাদ্রাসায় গিয়ে কোরান পাঠ তার অব্যবহিত পরই চার্চে গিয়ে প্রার্থনা— এই সবই আমার কাছে ছিল স্বাভাবিক এবং দৈনন্দিনের অঙ্গ।” এই কারণেই হয়তো তিনি দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিশ্বনাগরিক হতে পেরেছেন।

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in