

ইসলামি সংগঠনের চাপের কারণে পশ্চিমবঙ্গে উর্দু অ্যাকাডেমির চারদিন ব্যাপী সাহিত্য অনুষ্ঠান স্থগিত করা হয়েছে। রবিবার থেকে ‘হিন্দি সিনেমায় উর্দুর অবদান’ শীর্ষক অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কথা ছিল। যেখানে উর্দু কবি ও গীতিকার জাভেদ আখতারের আমন্ত্রণের বিরোধিতা জানায় কিছু ইসলামিক সংগঠন। যার জেরে শনিবার আকস্মিক স্থগিত করে দেওয়া হয় অনুষ্ঠান।
শনিবার দুপুরে অ্যাকাডেমির সচিব নুজহাত জাইনাব সোশ্যাল মিডিয়ায় জানান, “অপরিহার্য কারণবশত আমরা এই আয়োজনকে পেছাতে বাধ্য হয়েছি।”
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, জামিয়ত উলামা-ই-হিন্দ ও ওহাইয়াইন ফাউন্ডেশন নামের দুটি ইসলামি সংগঠন জাভেদ আখতারের আমন্ত্রণকে কেন্দ্র করে আপত্তি জানায়। জানা যায়, তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর কিছু অনুগামী এবং জামিয়ত উলামা-ই-হিন্দের কলকাতার কিছু সংগঠক আপত্তি জানিয়ে উর্দু অ্যাকাডেমিকে চিঠি দেয়।
হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছিল, "জাভেদ আখতার নাস্তিক। ইসলাম ও আল্লাহর বিরোধী, তাই তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো চলবে না। উর্দু সাহিত্য জগতে আরও অনেক ভালো লেখব, কবি রয়েছেন, তাঁদের আমন্ত্রণ জানানো যেতে পারে, কিন্তু জাভেদ আখতার নয়"। এরপরেই অ্যাকাডেমির পক্ষ থেকে আচমকাই অনুষ্ঠান স্থগিত করে দেওয়া হয়।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, কোনও ধরনের উত্তেজনা ও বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে অ্যাকডেমি, বিশেষ করে আগামী বিধানসভা নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে কোনো অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটার আশঙ্কায়। তবে সরকার চেয়েছিল জাভেদ আখতারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেই পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণভাবে সামলাতে। সেকারণেই আপাতত স্থগিত করা হয়েছে অনুষ্ঠান।
অ্যাকাডেমির গভর্নিং বডির সদস্য ও এই উৎসবের অন্যতম আয়োজক গজালা ইয়াসমিন বলেন, “আমরা দীর্ঘ সময় ধরে এই আয়োজনের প্রস্তুতি নিয়েছিলাম, হঠাৎ এই অবস্থা আমাদের জন্য খুবই হতাশাজনক। তবে আমি বিশ্বাস করি আগামীতে আরও বৃহৎ পরিসরে উর্দু ভাষার এই সাংস্কৃতিক আয়োজন সফলভাবে সম্পন্ন হবে।”
তিনি আরও বলেন, “উর্দু ভাষা কোনো এক ধর্মের সীমানায় সীমাবদ্ধ নয়। এটি একটি সমৃদ্ধ ভারতীয় ভাষা, যা তার সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জন্য উদযাপন করা উচিত। আশা করি ভবিষ্যতে এই ভাষার প্রতি যে সংকীর্ণ ধর্মীয় মনোভাব কাজ করছে, তা কাটিয়ে উঠতে পারব।”
এদিকে, জাভেদ আখতারের মতো একজন ব্যক্তিত্বকে নিয়ে কলকাতার মতো প্রগতিশীল ঐতিহ্যসম্পন্ন শহরে এমন ঘটনায় নিন্দার ঝড় উঠেছে সর্বত্র।
ভারতের প্রয়োজন নিরপেক্ষ এবং প্রশ্নমুখী সাংবাদিকতা — যা আপনার সামনে সঠিক খবর পরিবেশন করে। পিপলস রিপোর্টার তার প্রতিবেদক, কলাম লেখক এবং সম্পাদকদের মাধ্যমে বিগত ১০ বছর ধরে সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে। এই কাজকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন আপনাদের মতো পাঠকদের সহায়তা। আপনি ভারতে থাকুন বা দেশের বাইরে — নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে একটি পেইড সাবস্ক্রিপশন নিতে পারেন। স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন