'দ্য কাশ্মীর ফাইলস' নিয়ে সওয়াল প্রধানমন্ত্রীর, পাল্টা নেটিজেনরা মনে করালেন 'পারজানিয়া', 'শিকারা'

'দ্য কাশ্মীর ফাইলস' সিনেমার সুনামহানি করা হচ্ছে। যারা সবসময় বাক-স্বাধীনতা কথা বলেন, তারাই ছবিটির সুনাম নষ্ট করছে। মঙ্গলবার বিজেপির সংসদীয় দলের বৈঠকে এমনটাই অভিযোগ করলেন প্রধানমন্ত্রী।
'দ্য কাশ্মীর ফাইলস' নিয়ে সওয়াল প্রধানমন্ত্রীর
'দ্য কাশ্মীর ফাইলস' নিয়ে সওয়াল প্রধানমন্ত্রীরছবি সংগৃহীত

'দ্য কাশ্মীর ফাইলস' ছবিটি নিয়ে যথেষ্ট শোরগোল পড়েছে গোটা দেশেই। এবার সিনেমাটি নিয়ে আসরে নামলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এই সিনেমার সুনামহানি করা হচ্ছে। যারা সবসময় বাক-স্বাধীনতা কথা বলেন, তারাই ছবিটির সুনাম নষ্ট করছে। মঙ্গলবার বিজেপির সংসদীয় দলের বৈঠকে এমনটাই অভিযোগ করলেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি তিনি পরামর্শ দিলেন, যাদের এই ছবিটি ঠিক নয় বলে মনে হবে, তারা নিজেদের কথা তুলে ছবি বানান।

প্রধানমন্ত্রীর এই ভাষণের পর স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে যে গুজরাট দাঙ্গা নিয়ে গঠিত সিনেমা 'পারজানিয়া'কে কার্যত নিষিদ্ধ এবং 'ফিরাক'কে সরকারিভাবে কেন নিষিদ্ধ করা হয়েছিল গুজরাটে?

নয়ের দশকে উগ্রপন্থা ছড়িয়ে পড়লে কাশ্মীরি পণ্ডিতদের উপত্যকা ছেড়ে আসার মতো সংবেদনশীল বিষয় নিয়ে 'দ্য কাশ্মীর ফাইলস' সিনেমাটি তৈরি হয়েছে। এই ছবিটি যে মোদি এবং বিজেপির এজেন্ডা হয়ে উঠেছে তা এদিনের বৈঠক ও প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে স্পষ্ট। ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের ভিডিও ক্লিপ সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করতে শুরু করেছেন নেতা-মন্ত্রীরা।

ইতিমধ্যেই বিজেপি শাসিত রাজ্য উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, কর্ণাটক, গুজরাট, হরিয়ানা, অসম, ত্রিপুরা-সহ আরও কয়েকটি রাজ্যে ছবিটিকে করমুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। ছবিটি দেখতে যাওয়ার জন্য সরকারি কর্মচারীদের অর্ধ দিবস ছুটি দিয়েছে আসাম সরকার। মধ্যপ্রদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নরোত্তম মিশ্র সেরাজ্যের পুলিশ কর্মীদের এই ছবি দেখার জন্য ছুটি মঞ্জুর করেছেন।

এর আগে কাশ্মীর নিয়ে অনেক ছবিই হয়েছে। বিশিষ্ট প্রযোজক পরিচালক ও কাশ্মীরি পন্ডিত বিধু বিনোদ চোপড়া 'শিকারা' ছবি তৈরি করেন। সেই ছবির মূল বিষয় ছিল কাশ্মীরি পণ্ডিত। কিন্তু এই ছবি হিন্দু-মুসলিম বিদ্বেষ তৈরি করতে দেয়নি। তাই কেন্দ্রের পক্ষ থেকেও কেউ কোনও টুঁ-শব্দ করেনি।

প্রসঙ্গত, ২০০২ সালে গুজরাট গণহত্যায় হারিয়ে যাওয়া ছেলেকে খুঁজে পাচ্ছেন না পার্সি দম্পতি। এই বাস্তব ঘটনার উপর নির্ভর করে রাহুল ঢোলাকিয়া তৈরি করেছিলেন 'পারজানিয়া' সিনেমা। কিন্তু ছবির সম্প্রচারে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছিল। নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গুজরাটের মাল্টিপ্লেক্স মালিক সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বজরং দলের অনুমতি ছাড়া এই ছবির প্রদর্শন হবে না। তখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। নেটিজেনদের প্রশ্ন, 'দ্য কাশ্মীর ফাইলস'-এর প্রচার করা নরেন্দ্র মোদি 'পারজানিয়া'কে কেন নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রীর থাকাকালীন। গুজরাটে সংখ্যালঘু গণহত্যায় কীভাবে আমজনতার জীবন বদলে গিয়েছিল, তা তুলে ধরা হয়েছিল 'ফিরাক'-এ। নন্দিতা দাশ পরিচালিত সেই ছবিও নিষিদ্ধ হয়ে যায়।

এক নেটিজেন লিখেছেন, কাশ্মীর ফাইলস কোথাও নিষিদ্ধ হোক আমি চাই না, কিন্তু 'পারজানিয়া' কেন নিষিদ্ধ হয়েছিল গুজরাটে? একটি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর আক্রমণ গ্রহণযোগ্য, আরেকটি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর আক্রমণ নিন্দাজনক, এই মনোভাবের জন্য?

কেন্দ্রে মোদি সরকার আসার পর বহু ছবির ক্ষেত্রে হিন্দুত্ববাদীরা হিংসার আশ্রয় নিয়েছেন। হল ভাঙচুর থেকে শুরু করে অভিনেত্রীকে ধর্ষণের হুমকি দেওয়া হয়েছে। সেই সময় বাক-স্বাধীনতা নিয়ে একটিও কথা বলেনি প্রধানমন্ত্রী। হঠাৎ এখন কেন, উঠছে প্রশ্ন।

'দ্য কাশ্মীর ফাইলস' নিয়ে সওয়াল প্রধানমন্ত্রীর
Budget Session: কতজন কাশ্মীরি পণ্ডিতকে জম্মু-কাশ্মীরে ফেরাল কেন্দ্র, প্রশ্ন বিরোধীদের

GOOGLE NEWS-এ Telegram-এ আমাদের ফলো করুন। YouTube -এ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন।

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in