
৩০ তম বর্ষে পড়তে চলেছে কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। আগামী ৪ ডিসেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে এই উৎসব। কিন্তু টলিপাড়ার অন্দর সূত্রে খবর, এবারের চলচ্চিত্র উৎসব বয়কট করেছে ইন্ডাস্ট্রির একটা বড়ো অংশ। পাশাপাশি, তিন দশক পূর্তির মতো চাকচিক্যও নেই এবারের উৎসবে। কিন্ত হঠাৎ কেন এই বয়কট? যা নিয়ে উঠেছে নানা মত।
আগামী ৪ ডিসেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। হাতে মাত্র আর চার দিন। কিন্তু নন্দন চত্বরে উৎসবের প্রস্তুতি নেই সেই গতিতে। জানা যাচ্ছে, এবারে আমন্ত্রণ পত্রও নাকি ছাপা হয়েছে দেরিতে। এবং সেই আমন্ত্রণ পত্র পাঠানো হবে টলিউডের নির্দিষ্ট বৃত্তের মধ্যে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পরিচালক জানিয়েছেন, ‘যা খবর পেয়েছি, এই বছর উৎসবে টলিউডের প্রায় কেউই থাকবে না।‘ অন্য আরেক সদস্যের কথায়, ‘টলিপাড়ার একটা বড় অংশই তো সরে এসেছে। এটা এখন শুধুই সরকারি উৎসব। তাঁরা যা ভাল বুঝছেন, সেই ভাবেই আয়োজন করা হচ্ছে।‘
গত কয়েক মাসে টলিপাড়ার সঙ্গে একাধিক সংঘাত বেঁধেছে রাজ্যের শাসক দলের। পরিচালক রাহুল মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে টলিউডের ফেডারেশন বনাম পরিচালক সংঘাত পৌঁছায় মুখ্যমন্ত্রী পর্যন্ত। এছাড়া আর জি কর ইস্যু নিয়ে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে পথে নেমেছে টলিপাড়ার একটা বড় অংশ। টলিপাড়ার একাংশের মতে, আর জি কর ইস্যু নিয়ে যে দুরত্ব তৈরি হয়েছিল ফেডারেশন বনাম পরিচালক সংঘাত সেই দূরত্বে আরও আগুনে ঘি ঢালার মতো কাজ করেছে।
নন্দন চত্বরে প্রত্যেক বছর মুক্ত মঞ্চে সান্ধ্য আড্ডার দায়িত্বে থাকেন ফেডারেশনের সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস, যিনি মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের ভাই। গত কয়েক মাসে ইন্ডাস্ট্রিতে কাজের পরিসর, নারী সুরক্ষা নিয়ে ফেডারেশনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন শিল্পীরা। স্বাভাবিক ভাবে এতে ক্ষুব্ধ স্বরূপ বিশ্বাস। অন্যদিকে, ফেডারেশন সভাপতি দাবি করেছিলেন, ইন্ডাস্ট্রিতে নারী সুরক্ষা ব্যাহত হওয়ার নেপথ্যে পরিচালকদের একটা বড় অংশ দায়ী। দু’পক্ষের মধ্যে ক্রমবর্ধমান অসন্তোষের প্রভাব পড়তে পারে চলচ্চিত্র উৎসবে বলে মনে করছেন অনেকে।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক টলিপাড়ার এক পরিচালকের কথায়, ‘সব কিছুর সীমা আছে। অনেক দিনের জমা ক্ষোভ প্রকাশ পেয়েছে। ইন্ডাস্ট্রির সদস্যেরা নিজেরাই দূরত্ব তৈরি করে নিয়েছেন।’
গত কয়েক বছর ধরে চলচ্চিত্র উৎসবের চেয়ারপার্সনের দায়িত্ব পালন করছেন পরিচালক রাজ চক্রবর্তী। তবে চলতি বছর সেই দায়িত্ব সামলাবেন পরিচালক গৌতম ঘোষ। উৎসবের পরিচালন সমিতির এক সদস্যের কথায়, ‘এখানে অনেক রকমের জটিলতা এবং পক্ষপাত রয়েছে। ইন্ডাস্ট্রির শিল্পীদের উপরে উৎসবের ছোট-বড় নানা দায়িত্ব দেওয়া হয়, কারণ তাঁরা অভিনেতা এবং সিনেমা বিষয়টা ভাল বোঝেন। এ বার অভিনেতারাই না থাকলে কী হতে পারে তা বোঝাই যাচ্ছে। মোদ্দা কথা, শিক্ষিত মানুষদের তো দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে উৎসবেও তার প্রভাব দেখা যাবে।’
এছাড়া আরও জানা গেছে, এবারে চলচ্চিত্র অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের বদলে আয়োজন করা হয়েছে ধনধান্য প্রেক্ষাগৃহে। টলিপাড়ার এক সূত্রের দাবি, প্রতি বছর নেতাজি ইন্ডোরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে সরকারের প্রায় ৮০ লক্ষ থেকে ১ কোটি টাকা খরচ হত। কিন্তু এ বার টলিউডের একটা বড় অংশই চলচ্চিত্র উৎসবে থাকতে রাজি নয়। তাই হয়তো উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পরিধি কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, এবারেও গত বারের মতো অমিতাভ বচ্চন, শাহরুখ খান-সহ বলিউড তারকারা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আসতে রাজি হননি। জানা যাচ্ছে, এবারের চলচ্চিত্র অনুষ্ঠানে থাকছে না কোনও বড়ো তারকা।
তবে চলচ্চচিত্র উৎসবের চাকচিক্য কম, প্রচার কম এটা মানতে নারাজ পরিচালক কমিটির এক সদস্য। তাঁর দাবি, উৎসবের প্রচারের জন্য যা যা প্রয়োজন তা ইতিমধ্যেই করা হয়েছে। উৎসবের মূল আকর্ষণ দেশ-বিদেশের ভাল ছবি। সেখানে কোনও রকম আপোষ করা হচ্ছে না।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন