
ধস ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানালি পরিদর্শনে গিয়ে স্থানীয়দের বিক্ষোভের মুখে পড়লেন মাণ্ডির সাংসদ তথা অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাউত। তাঁকে দেখে দেওয়া হল 'গো ব্যাক' স্লোগান। স্থানীয়দের অভিযোগ, "সাংসদ আসতে বড্ড দেরি করে ফেলেছেন"। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে নিজের রেস্তোরাঁর লোকসানের কথা তুলে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন অভিনেত্রী।
জানা গেছে, সম্প্রতি মানালির একাধিক বন্যাবিধ্বস্ত এলাকা পরিদর্শনে যান মাণ্ডির সাংসদ। সেখানে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির সঙ্গে দেখা করেন তিনি। তাঁর সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় বিধায়ক, বিজেপি নেতা এবং কর্মী-সমর্থকরা। কোথায় কতটা ক্ষতি হয়েছে, তাঁরাই সাংসদকে সমস্ত খতিয়ান দিচ্ছিলেন এবং ঘুরে দেখাচ্ছিলেন। সেই সময় অভিনেত্রীকে ঘিরে 'গো ব্যাক' স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন স্থানীয়রা। তাঁদের অভিযোগ, "সাংসদ অনেক দেরিতে এসেছেন।" কারও বা কটুক্তি, "এতদিন কোথায় ছিলেন?"
বিক্ষোভের মুখে পড়ে নিজের ব্যক্তিগত ক্ষয়ক্ষতির কথা তুলে ধরেন সাংসদ। তিনি বলেন, “আমার বাড়ি এখানে, রেস্তোরাঁও আছে। গতকাল রেস্তোরাঁয় মাত্র ৫০ টাকার ব্যবসা হয়েছে, অথচ ১৫ লক্ষ টাকা বেতন দিতে হয়। আমি একা মহিলা, সংসার চালাতে হয়। আমাকে প্রশ্ন করুন, কিন্তু শত্রুর মতো আচরণ করবেন না। আমার দুঃখ বোঝার চেষ্টা করুন। আমি এখানে রানি হয়ে আসিনি, আমিও হিমাচলি মেয়ে।”
এরপরেই তিনি দাবি করেন, কেন্দ্র ইতিমধ্যেই হিমাচল প্রদেশকে ১০ হাজার কোটি টাকা সাহায্য দিয়েছে এবং রাজ্য সরকার সে অর্থ কতটা সঠিকভাবে ব্যবহার করেছে, সেটাই তিনি দেখতে এসেছেন।
তবে হিমাচলের কংগ্রেস সরকারের দাবি, কঙ্গনার তথ্য ভ্রান্ত। মুখ্যমন্ত্রীর প্রধান মিডিয়া উপদেষ্টা নরেশ চৌহান বলেন, “এখন রাজ্যজুড়ে প্রশাসন ত্রাণ বণ্টন ও পুনর্গঠনে ব্যস্ত। বিজেপি শুধু বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। কঙ্গনা রানাউত যেটা বলেছেন, তার কোনও প্রমাণ নেই। বাস্তবে কেন্দ্র থেকে বড় অঙ্কের সাহায্যের স্পষ্ট ঘোষণা এখনো আসেনি।”
চৌহান আরও জানান, রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই নিজস্ব তহবিল থেকে ৩৯৭ কোটি টাকা দিয়েছে এবং পুনর্বাসনের কাজে আরও ১৪০ কোটি বরাদ্দ করা হয়েছে। নতুন ক্ষতিপূরণ নীতিতে গৃহহারা বা ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্তদের আগের তুলনায় বহু গুণ বেশি অর্থ দেওয়া হচ্ছে।
অন্যদিকে, কঙ্গনা রানাউত তাঁর সফরকালে কংগ্রেস নেতাদের এলাকায় দেখা যায়না বলে কটাক্ষ করেছেন। তাঁর অভিযোগ, রাজ্যের পিডব্লিউডি দফতরের কোনও ভূমিকা চোখে পড়ছে না।
সম্প্রতি টানা বৃষ্টিতে কুল্লু-মানালি জুড়ে প্রবল ধস ও বন্যা দেখা দেয়। বিয়াস নদীর উথাল জলে একটি বহুতল হোটেল ও একাধিক দোকান ভেসে যায়। মানালি–চণ্ডীগড় জাতীয় সড়ক এবং মানালি–লেহ সড়কের বড় অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শুধু কুল্লুতেই বাড়িঘর ভেঙে পড়া, মাছের খামার ও দোকানপাট ধ্বংস হওয়ার বহু খবর পাওয়া গেছে। সরকারি হিসেবে, এখনও পর্যন্ত ৪১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ক্ষতির অঙ্ক প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা ছুঁয়েছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন