
প্রয়াত পদ্মশ্রী প্রাপক ভারতের বিখ্যাত নাট্যকার এবং নাট্য পরিচালক রতন থিয়াম (Ratan Thiyam)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৭। বুধবার রাত ১টা ৩০ মিনিট নাগাদ ইম্ফলের রিজিওনাল ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। শারীরিক অসুস্থতার কারণে বেশ কয়েকদিন ধরে সেখানেই চিকিৎসাধীনে ছিলেন থিয়াম।
সমসাময়িক ভারতীয় থিয়েটারের একজন উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব ছিলেন রতন থিয়াম। গত কয়েক দশকের কর্মজীবনে তাঁর স্বতন্ত্র নাট্যশৈলীর জন্য ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছেন তিনি। মণিপুরের জাতি সংঘর্ষ রতন থিয়ামের কাজ এবং নাটককে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল। ১৯৯২ সালে জাতি দাঙ্গা তীব্র আকার ধারণ করার পর থেকে নাগা এবং কুকি উপজাতির মধ্যে দ্বন্দ্ব রাজ্যে দীর্ঘস্থায়ী হিংসার সৃষ্টি করেছে। দীর্ঘসময় ধরে চলা এই হিংসায় হাজার হাজার মানুষ নিহত এবং ৫০,০০০ এরও বেশি মানুষ গৃহহীন হয়েছে। যা গভীরভাবে তাঁকে প্রভাবিত করে। এই প্রেক্ষাপটে বিষয়টির সমাধানের চেষ্টা, চেতনা বৃদ্ধি এবং সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যম হিসেবে তিনি নাটককে বেছে নেন। যা বারবার এই অঞ্চলের সমসাময়িক আলোচনার ক্ষেত্রে উঠে এসেছে।
একজন প্রকৃত যুদ্ধবিরোধী মানুষ, রতন থিয়াম যে কোনো যুদ্ধের ক্ষেত্রে ভয়াবহ সত্য, অনুভূতিগুলিকে বারবার তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। তিনি বলেছিলেন, “যুদ্ধ শিশুদের প্রভাবিত করে। যুদ্ধ নারীদের প্রভাবিত করে; যুদ্ধ পতিতা তৈরি করে। এগুলো কোনোটাই স্বাভাবিক নয়।” তাঁর মতে, যুদ্ধের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধ জারি রাখতে হবে, যতক্ষণ না সাধারণ মানুষের ক্ষমতা উন্মুক্ত হয়। যারা মানব সভ্যতা এবং এই সুন্দর পৃথিবীকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য যথেষ্ট হিংস্র তাঁদের বিরুদ্ধে লড়াই জারি রাখতে হবে। 'থিয়েটার অফ রুটস' আন্দোনলের পথিকৃৎ ছিলেন তিনি।
ভারতীয় থিয়েটারে তাঁর অবদান জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে অসংখ্য প্রশংসা এনে দিয়েছে তাঁকে। ১৯৮৪ সালে ইন্দো-গ্রীক বন্ধুত্ব পুরস্কার দিয়ে তাঁর সম্মাননার দীর্ঘ তালিকা শুরু হয়। এরপর ১৯৮৭ সালে তিনি এডবার্গ আন্তর্জাতিক উৎসবে মর্যাদাপূর্ণ সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি পুরস্কার এবং ফ্রিঞ্জ ফার্স্টস পুরস্কার উভয়ই জিতেছিলেন।
ভারতীয় নাটকে অবদানের জন্য ১৯৮৯ সালে ভারত সরকার তাঁকে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করে। এর এক বছর পরে ১৯৯০ সালে মেক্সিকোতে ডিপ্লোমা অফ দ্য সার্ভান্টিনো ইন্টারন্যাশনাল ফেস্টিভ্যাল স্বীকৃতি লাভ করেন তিনি।
এরপর ২০০৫ সালে তাঁকে কালিদাস সম্মানে ভূষিত করা হয়। ২০০৮ সালে ডি. রকফেলার পুরস্কার পান তিনি। এরপর ২০১১ সালে ভারত মুনি সম্মান এবং ২০১২ সালে সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি ফেলোশিপ (অ্যাকাডেমি রত্ন) লাভ করেন। ২০১৩ সালে ভূপেন হাজারিকা ফাউন্ডেশন পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি।
রতন থিয়ামের মৃত্যতে দেশের নাট্যজগতে বিরাট শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তাঁর মৃত্যতে শোকপ্রকাশ করেছেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। এক্সে পোস্ট করে তিনি লিখেছেন, "থিয়াম মণিপুর এবং উত্তর-পূর্বের সমৃদ্ধ সংস্কৃতির একজন উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন। মানুষের আবেগ এবং আকাঙ্ক্ষা প্রকাশের জন্য শিল্পকে বাহন হিসেবে ব্যবহার করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে গভীর সমবেদনা জানাই"।
অন্যদিকে থিয়ামের মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন মণিপুরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং। তিনি এক্সে লিখেছেন, "তাঁর কাজ মণিপুরের আত্মা, মণিপুরের সংগ্রামকে বহন করে। আমরা সকলেই যেন আমাদের সাংস্কৃতিক ভূদৃশ্যে তাঁর অপরিসীম অবদান স্মরণ করার শক্তি খুঁজে পাই"।
রতন থিয়াম ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামার প্রাক্তন চেয়ারপার্সন হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ভারতীয় থিয়েটার জগতে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন