প্রবাদপ্রতিম সঙ্গীত পরিচালক খৈয়ামের প্রয়াণে শোকস্তব্ধ বলিউড

সঙ্গীত পরিচালক খৈয়াম
সঙ্গীত পরিচালক খৈয়ামফাইল ছবি সংগৃহীত

পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলায় সেনা মৃত্যুর পর তিনি তাঁর জন্মদিনের অনুষ্ঠান পালন করতে অস্বীকার করেছিলেন। বাতিল করে দিয়েছিলেন সব আয়োজন। যদিও এটাই তাঁর একমাত্র পরিচয় ছিলো না। একাধারে কবি, সঙ্গীত পরিচালক এই মানুষটি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত নিজেকে সৃষ্টির সঙ্গে যুক্ত রেখেছিলেন। সোমবার রাত সাড়ে ৯টায় শেষ হয়ে গেল সেই গৌরবোজ্জ্বল যাত্রাপথ। যে পথের দুধারে পড়ে রইলো অজস্র মণিমুক্তো। চলে গেলেন প্রবাদপ্রতিম সঙ্গীতস্রষ্টা খৈয়াম।

যার পোষাকী নাম মুহম্মদ জহুর খৈয়াম। মাত্র ১৭ বছর বয়সে যে স্রষ্টার যাত্রা শুরু হয়েছিলো তা থেমে গেল সোমবার ৯২ বছর বয়সে। মুম্বাইয়ের জুহুতে সুজয় হাসপাতালে। জুলাই মাসের ২৮ তারিখে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার কারণে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিলো। সোমবার রাত সাড়ে ৯টায় সেখানেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মঙ্গলবার তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে।

১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯২৭ সালে অবিভক্ত পাঞ্জাবের রাহোনে জন্ম হয় খৈয়ামের। ছোটোবেলাতেই সঙ্গীতের আকর্ষণে ঘর ছাড়া এই স্রষ্টা দিল্লী, লাহোর হয়ে ফের থিতু হন দিল্লীতেই। বাবা চিস্তি, পণ্ডিত অমরনাথের হাত ধরে তাঁর সঙ্গীত শিক্ষা। বিখ্যাত পাঞ্জাবী সঙ্গীত পরিচালক বাবা চিস্তির সহকারী হিসেবেই মাত্র ১৭ বছর বয়সে তিনি সঙ্গীত জগতে পা রাখেন। ১৯৪৮-এ হীর রাঞ্ঝা চলচ্চিত্রে শর্মাজী নামে শর্মাজী-ভারমাজীর যৌথ সুরে তাঁর সঙ্গীত পরিচালনা শুরু। যদিও শোলা আউর শবনম চলচ্চিত্রই তাঁকে প্রথম খ্যাতি এনে দেয় ১৯৬১ সালে। তার আগে ১৯৫৩ তে ফুটপাথ, ১৯৫৪ তে গুল বাহার, ১৯৫৮ তে ফির সুভা হোগী ও লালা রুখ ছবিতে একক ভাবে সঙ্গীত পরিচালকের দায়িত্ব সামলেছেন।

জীবদ্দশায় প্রায় ৩৫ টি ছবিতে তিনি সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন। যার মধ্যে শেষ ছবি গুলাম বন্ধু (২০১৬)। নিজের জীবনের ৮৯ তম জন্মদিনে খৈয়াম তাঁর যাবতীয় সম্পত্তি দিয়ে খৈয়াম জগজিৎ কাউর কেপিজি চ্যারিটেবল ট্রাস্ট তৈরি করেন সংগীত শিল্পী এবং যন্ত্রানুসঙ্গীদের জন্য। ওই সময় ট্রাস্টের হাতে তিনি তুলে দেন তাঁর জীবনের পুরো সম্পদ। যার মূল্য সেই সময় ছিলো ১০ কোটি টাকা।

তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে এক ট্যুইট বার্তায় অমিতাভ বচ্চন জানিয়েছেন - এক প্রবাদপ্রতিম সঙ্গীত পরিচালক - যিনি বহু ছবিতে সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন, যার মধ্যে বেশ কিছু আমার জন্যও খুবই মুল্যবান ... তাঁর স্মৃতিতে গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করি।

দীর্ঘ সঙ্গীত জীবনে জয় করেছেন একাধিক পুরষ্কার। ১৯৭৭-এ কভি কভি এবং ১৯৮২ তে উমরাওজান ছবির জন্য সেরা সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে পেয়েছেন ফিল্মফেয়ার পুরষ্কার। ১৯৮২ তেই উমরাওজান -এর জন্য জাতীয় পুরষ্কার। ২০০৭-এ সঙ্গীত নাটক আকাদেমি পুরষ্কার। ২০১০-এ ফিল্মফেয়ার লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট। ২০১১ তে পদ্মভূষণ এবং ২০১৮তে হৃদয় নাথ মঙ্গেশকর পুরষ্কার।

তাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে সঙ্গীত সম্রাজ্ঞী লতা মুঙ্গেশকর এক ট্যুইট বার্তায় জানিয়েছেন – মহান সঙ্গীত পরিচালক এবং ভালো মানুষ খৈয়াম সাব আর আমাদের মধ্যে নেই এই কথা শুনে এত দুঃখ পেয়েছি যা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। খৈয়াম সাব-এর সঙ্গে সঙ্গীতের এক যুগের অবসান হল। আমি তাঁকে আমার অন্তরের গভীর শ্রদ্ধা জানাই।

GOOGLE NEWS-এ Telegram-এ আমাদের ফলো করুন। YouTube -এ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন।

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in