‘বাক স্বাধীনতা’, ‘মত প্রকাশের স্বাধীনতা’ শব্দবন্ধগুলো কি শুধুই গালভরা? শুধুমাত্র শোভা বর্ধনকারী হিসেবেই তাদের পরিচিতি? নাকি এই শব্দগুলোর গভীরতা আরও অনেক বেশি। ঘটনা পরম্পরায় জটিল এইসব প্রশ্ন মাঝে মাঝে ঢেউ তোলে। আবার চাপা পড়ে যায়। মেকি স্বাচ্ছন্দবোধ অবচেতনে কেমনভাবে যেন বুঝিয়ে দেয়, এই বেশ ভালো আছি।
ভালো আছি, নাকি মন্দ - তার নিজস্ব কিছু মাপকাঠি থাকে। মানুষ ভেদে সেই মাপকাঠির বদলও ঘটতে পারে। যদিও কী বলব, কতটা বলব, কতটা বলতে পারা আমার অধিকারের মধ্যে পড়ে প্রশ্ন সেখানেও। এক্ষেত্রে দেশের সংবিধান যদিও কথা বলার স্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষেই মত দেয় কিন্তু কিছু কিছু ঘটনা আমাদের কান ধরে বুঝিয়ে দেয় যে, ওহে বাপু, তোমার এক্তিয়ার এটুকুই। দেশের দন্ডমুন্ডের কর্তাদের ‘না পসন্দ’ কথা বলা মোটেই তোমার এক্তিয়ারের মধ্যে নয়। অতএব হাতে পেন্সিল পড়ে থাকলেও লেখা আর হয়ে ওঠে না।
স্ট্যান্ডআপ কমেডিয়ান কুণাল কামরা তাঁর কমেডি শো-তে যা যা বলেছেন তাতে কার কতটা হাড়ে কাঁপন লেগেছে তা স্টুডিও ভাঙচুরের ঘটনাতেই স্পষ্ট। দেশের এক রাজনীতিবিদকে নাম না করে ‘গদ্দার’ বলার পরের ওই আক্রমণ বোধহয় কমেডি শোতে ব্যাঙ্গের ছলে বলা কামরা-র কথাকেই সত্যি বলে প্রমাণ করে দিয়েছে।
বিজ্ঞানের সূত্র মেনে ক্রিয়া এবং প্রতিক্রিয়া দেখে চলতেই আমরা অভ্যস্ত। এখন যদিও ক্রিয়ার অনুপাতে প্রতিক্রিয়ার ঘটনা বেশি। যে কোনও বিষয় নিয়েই সেই প্রতিক্রিয়া হতে পারে। উদাহরণ দিয়ে লেখার শব্দসংখ্যা বাড়িয়ে লাভ নেই। দেশের দৈনন্দিন খবরাখবর যারা রাখেন তাঁরা জানেন, কীভাবে কোথা থেকে কোন প্রতিক্রিয়া খুঁড়ে বের করার চেষ্টা চালানো হয় দিনরাত।
কমেডি মানে আকথা-কুকথা নয়। লঘু কোনও বিষয়ও নয়। বরং বেশ গভীর বিষয়। আমাদের চারপাশের বিভিন্ন খামতিকে অন্য মোড়কে সাধারণের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা। যার জন্য মেধা লাগে, ধৈর্য লাগে, চর্চা লাগে। যা সকলের কম্ম নয়। সেই হাস্যরস বোধগম্য না হলে অথবা সেই হাস্যরসে লক্ষ্যবস্তুর গায়ে ছেঁকা লাগলে বুঝতে হবে কমেডিয়ানের প্রচেষ্টা সার্থক। তিনি আসলে ব্যাঙ্গের আড়ালে সত্যিটাকেই উলঙ্গ করে দিয়েছেন।
দেশের সাধারণ মানুষের মত প্রকাশের অধিকার বা কথা বলার অধিকার সংবিধান স্বীকৃত। সেখানে কোনও লক্ষণগণ্ডী গায়ের জোরে বা সংখ্যার জোরে টানার চেষ্টা কিসের প্রবণতা তা নিয়ে বিতর্ক হতেই পারে। হওয়া উচিতও। কারণ এই অধিকার বোধহয় কারোর দানের নয়, বরং অর্জিত অধিকার। তাই সেই অধিকার রক্ষার লড়াই চলাটাই কাম্য। সেখানে শিরদাঁড়া সোজা থাকাটাও বাঞ্ছনীয়।
ভারতীয় সংবিধানের ধারা ১৯(১)(এ) জানাচ্ছে সকল নাগরিকের স্বাধীনভাবে তাদের মতামত প্রকাশের অধিকার রয়েছে। যা শুধুমাত্র মুখের কথাই নয়। যাতে লেখা, ছবি, চলচ্চিত্র, ব্যানার ইত্যাদির মাধ্যমে বক্তৃতাও অন্তর্গত। অতএব...
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন