
আপাতত বিতর্ক থাক। কোন রাজনৈতিক দল ভেঙেছে বা কাদের প্ররোচনা – থাক সে বিতর্কও। মূর্তিটা ভাঙ্গা হয়েছে এটা যেমন সত্যি, তেমনই এটাও সত্যি - ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়কে অত সহজে ভাঙ্গা যায় না। তিনি যে সময়ে এই বাংলার বুকে এর চেয়ে ঢের বেশি প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে একের পর এক লড়াই জিতেছিলেন তার তুলনায় এ তো কোন ছার। তাই এই ঘটনায় পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের কিছু যায় আসে না।
তবু আলোচনা চলবে। চলবে কাটাছেঁড়া। তুই খারাপ না মুই খারাপের আরও একদফা কাদা ছোড়াছুঁড়ি। এই ঘটনায় কে লাভের ফসল ঘরে তুলবে আর কে ব্যাকফুটে যাবে তা নিয়ে হয়তো বেশ কয়েক ঘণ্টার প্রাইম টাইমের চর্বিত চর্বণ।
দুটো রাজনৈতিক দল। একদল নাকি জিতে বসে আছে। আরেক দল জেতার অপেক্ষায় আছে। ২৩ থেকে ৪২-এর দড়ি টানাটানি। ‘দেখে নেব’ আর ‘দেখিয়ে দেব’-র লড়াইয়ে ছড়িয়ে পড়ছে সর্বগ্রাসী আতঙ্ক। বিনা যুদ্ধে কেউ কাউকে সূচ্যগ্র মেদিনী দিতে রাজি নয়। তা সে মেদিনীপুর হোক কিংবা ঘাটাল। কে কার মা আর কে কার মেয়ে, গণতান্ত্রিক চড় বনাম বাৎসরিক কুর্তা উপহারের ছায়াযুদ্ধে বিষাক্ত হয়ে উঠেছে বাংলার পরিমণ্ডল।
এ সবের কাছে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর তো তুচ্ছ। একটা মূর্তি ভাঙ্গা হয়েছে, আরেকটা বানিয়ে দেওয়া যাবে। হয়তো সেই মূর্তির তলায় মূর্তির চেয়েও বড়ো একটা নামফলক সেঁটে থাকবে উন্নয়নের বার্তা বুকে নিয়ে।
একটা লোকসভা কেন্দ্রের জন্য, এক রাজনৈতিক দলের সামান্য এক রোড শো সফল করতে যখন গুজরাট, বিহার, উত্তরপ্রদেশ থেকে লোক আনতে হয় আর সব আসনের দাবিদার অন্য রাজনৈতিক দল যখন সেই রোড শো আটকাতে কোমরে গামছা বেঁধে রাস্তায় নেমে পড়ে তখন উৎকট গোপন আঁতাতের দুর্গন্ধ ছাড়া আর কিছু বেরোয় না।
প্রায় ৪৯ বছর আগেও তাঁর মূর্তি ভেঙে গেণ্ডুয়া খেলার চেষ্টা হয়েছিলো, তাতেও যেমন ‘যশুরে কৈ’-এর কিছু আসে যায়নি এবারে ৪৯ বছর পরেও ‘গুটখা’ বনাম ‘গুন্ডা’ সংস্কৃতির মেকি যুদ্ধ তাঁর টিকিটিও ছুঁতে পারবে না। বিদ্যাসাগর আমাদের মননে, বোধে, চিন্তায়, সংস্কৃতিতে। সে সংস্কৃতি বহু কষ্টে অর্জিত। মানুষই সে সংস্কৃতি রক্ষা করবে…
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন