আগামী লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ভোট লড়বার অঙ্গীকার টিকলো না ৯ দিনও। ১৯ জানুয়ারি ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে ২৩ দলের হাত ধরাধরি করে লড়াইয়ের আহ্বানকে সার্কাসে পরিণত করে দিলো ওই সভার আয়োজক তৃণমূল কংগ্রেস নিজেই। যে সভায় কংগ্রেসের দুই প্রথম সারির নেতা অন্যান্য আরও ২১টি দলের সঙ্গে মঞ্চ আলো করে তৃণমূল কংগ্রেসের হাত ধরে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়বার কথা বলেছিলেন, খোদ তৃণমূল কংগ্রেস, কংগ্রেস দলে ভাঙন ধরিয়ে দেখিয়ে দিলো, সেই আস্ফালন আদ্যন্তই মেকি।পারস্পরিক বিশ্বাসের রাজনীতি আর যে দলই করুক, তৃণমূল কংগ্রেস করে না। সৌহার্দ্যের রাজনীতিও নয়।
রাজ্য রাজনীতিতে প্রভাব ফেলার জন্য কোনও রাজনীতিকের যে ক্যারিশমার দরকার হয়, সেই ক্যারিশমা কংগ্রেসের ধারে ও ভারে জিতে আসা সদ্য কংগ্রেস ত্যাগী সাংসদের নেই। সুতরাং, তাঁর দল পাল্টানোতে কংগ্রেসের খুব একটা ক্ষতি হবেনা একথা সত্যি। কিন্তু, বিধানসভা, পঞ্চায়েত, কর্পোরেশন থেকে বিদ্যালয় পরিচালন সমিতি বা সমবায় সমিতি – সর্বত্র, সর্বগ্রাসী রাজনীতির যে খেলা তৃণমূল কংগ্রেস বিগত ৭ বছর ধরে খেলে চলেছে, বামেরা বিগত ৩৪ বছরের শাসনকালে তার চারআনাও যে কখনো খেলেনি, তা বামফ্রন্টের অতি বড় সমালোচকও স্বীকার করতে দ্বিধা করবেন না।
আগামী নির্বাচনের পর বিজেপির দিল্লীর মসনদে ফেরার সম্ভাবনা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্রমশ ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হচ্ছে। এই অবস্থায় ভবিষ্যৎ সরকারে দর কষাকষি করার জন্য বেশী আসন দরকার প্রায় সব বিরোধী দলের। তৃণমূল কংগ্রেসও তার ব্যাতিক্রম নয়। এখন বলে নয়, ঢের আগে থেকে তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো দাবী করে আসছেন আগামী লোকসভা নির্বাচনে ১০০ শতাংশ আসনে জয়ী হবে তৃণমূল। অর্থাৎ রাজ্যের প্রতিটি প্রান্তে সজ্ঞানে তিনি এই বার্তা পৌঁছে দিতে চাইছেন যে রাজ্যে বিরোধী বলে কেউ থাকবে না। বিরোধী রাজনীতির অস্তিত্ব তিনি স্বীকার করেন না। যে মনোভাব স্বৈরতন্ত্রের পক্ষে সুখকর হলেও গণতন্ত্রের পক্ষে বিপজ্জনক।
রাজ্যে যে কাজ তৃণমূল কংগ্রেস করছে প্রায় সেই একই কাজ কেন্দ্রে বসে করে চলেছে কেন্দ্রের শাসক দল। তাদেরও লক্ষ্য এক। দেশকে বিরোধী শূন্য করা। তাই একাধিক রাজ্যে ক্ষমতায় আসার মত আসন না জিতেও স্রেফ বিধায়ক বেচা কেনা করে ক্ষমতা দখল করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা দেখা যায়নি তাদের মধ্যে। পশ্চিমবঙ্গের মডেলে হেঁটে ত্রিপুরায় পঞ্চায়েতে ৯৬ শতাংশ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ের নজির তো আছেই।
রাজনীতিকে নীতিহীন করে, যেন তেন প্রকারেণ ক্ষমতা দখল অতীতে যারা করেছেন তাদের ভবিষ্যৎ খুব একটা সুখকর হয়নি। ক্ষমতার দম্ভের ফানুস কত সহজে ফাটে তার উদাহরণ তো চার্লি চ্যাপলিন দেখিয়ে গেছেন দি গ্রেট ডিক্টেটরে। ইতিহাস কাউকে যেমন ক্ষমা করেনা, তেমনই ইতিহাস ফিরে ফিরেও আসে। সর্বগ্রাসী, নীতিহীন রাজনীতির পতন অনিবার্য - একথা আমাদের দেশের রাজনীতিকরা যত তাড়াতাড়ি উপলব্ধি করবেন ততই মঙ্গল।
GOOGLE NEWS-এ Telegram-এ আমাদের ফলো করুন। YouTube -এ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন।