বোধোদয়

ছবি প্রতীকী সংগৃহীত
ছবি প্রতীকী সংগৃহীত

তিনিও ফাইল দেখিয়েছিলেন, ইনিও ফাইল দেখালেন। তাঁর দেখানো ফাইলে কী ছিলো আজও জানে না পশ্চিমবঙ্গবাসী, এঁর দেখানো ফাইলে কী আছে তা দেখার জন্য নাকি ১০ তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

এহ বাহ্য। অপেক্ষা করতে অসুবিধা নেই। ধৈর্য তো মানুষের কম নয়। এতদিন যখন অপেক্ষা করা গেছে, নাহয়, আরও কিছুদিন অপেক্ষা করা যাক।

আসলে বেড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধা কিংবা ঝুলি থেকে বেড়াল বের করার গল্পে যেহেতু একটা মুচমুচে ভাব থাকে তাই তার জন্য মানুষের অপেক্ষার কোনও নির্ধারিত সময়সীমা থাকে না। তবে ফসলের দাম পাবে আশা করতে করতে শেষমেশ সেই চাষাকেই আত্মাহুতি দিতে হয়। ট্র্যাজেডি সেখানেই।

ভনিতা ছেড়ে আসল কথায় আসা যাক।ছেঁড়া উত্তরীয় গলায় জড়িয়ে খোদ দেশের আইনমন্ত্রীকে পাশে বসিয়ে দলবদলের খেলা যখন খেলা হয় তখন প্রথমেই বুড়ো আঙ্গুল দেখানো হয় আইনকেই।কারণ চিটফান্ড কান্ডে অভিযুক্ত, নারদ কান্ডে জড়িত কাউকে দলে ঠাই দিতে গেলে আইনের ঢাল আজ না লাগুক, আগামীতে লাগতেই পারে। আর আইন যে হাতের মুঠোয় নিয়েই খেলা শুরু হল, তা বুঝিয়ে দেবার জন্য দলবদলের মঞ্চে হাজির খোদ আইনমন্ত্রী।একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, যার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ করে থাকে বিরোধী দল, তাঁকে দলে জায়গা করে দিতে হলে এটুকু কৌশল তো নিতেই হয়! যদিও বাংলার মানুষের কানে কিন্তু এখনো বাজে সেই আহ্বান – ‘ভাগ মুকুল ভাগ।’

জ্ঞানচক্ষু মানুষের থাকেনা। বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে তার উন্মীলন ঘটে। কারো বা দল বদলানোর পর, কারো আবার ঢোঁক গিলে।গতকালের ভাগাতে চাওয়া ‘আপাদমস্তক দুর্নীতিগ্রস্ত’মানুষটিকে যখন কোলে বসিয়ে আপ্যায়ন করে ‘সম্পদ’বলে বর্ণনা করতে হয়, তখন সেই ঢোঁক গেলা এবং গলাধঃকরণের পর পরিতৃপ্তির ঢেঁকুর উঠবে কীনা সে সন্দেহ থেকেই যায়।একইভাবে দল বদলানোর পরই ‘বুদ্ধবাবুর চারটে ফোনই ট্যাপ করা হত’কিংবা ‘বিগত সময়ে রাজ্যে কোনও ভোট হয়নি’অথবা ‘আচ্ছা আপনি কি মনে করেন মন্তেশ্বরে আমাদের এক লাখে জেতা সম্ভব?!আপনি কি মনে করেন দুর্গাপুরে সত্যি কোনো পুর ভোট হয়েছে?!’ কিংবা ‘তৃণমূল সব ভোটই রিগিং করে জিতেছে’ গোছের বোধোদয় ঠিক কী কারণে সে সন্দেহও দানা বাঁধে।কদিন আগেই যে দল ‘ঘোরতর সাম্প্রদায়িক’ছিলো আজ রাতারাতি সেই দলকে ‘সাম্প্রদায়িক মনে করি না’টাও ভীষণ শিশুসুলভ। বড় ভয় লাগে। ভবিষ্যতে আবার যদি দল বদলানোর প্রয়োজন হয় এবং আবারও একবার যদি বোধের উদয় ঘটে তখন যে আবার কী কী বাক্যবন্ধ ধেয়ে আসবে তা ভেবেই শঙ্কা জাগে।

আজ যে শত্রু কাল সে মিত্র কিংবা শত্রুর শত্রু আমার মিত্র – রাজনীতিতে সবই নাকি চলে। তবে ঠিক কোন সমীকরণে ‘মাসতুতো ভাইদের’যাতায়াতে রাজ্যের বর্তমান পালাগান রচিত হচ্ছে তা আদৌ স্পষ্ট নয়।

GOOGLE NEWS-এ Telegram-এ আমাদের ফলো করুন। YouTube -এ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন।

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in