প্রশাসন কি শুধুই শাসকের?

ছবি প্রতীকী সংগৃহীত
ছবি প্রতীকী সংগৃহীত

দক্ষিণ কলকাতার আলিপুর থানায় ঢুকে পুলিশের ওপর বেপরোয়া আক্রমণ চালিয়েছিলো রাজ্যের শাসকদল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা।

অভিযোগ উঠেছিলো রাজ্যের এক মন্ত্রীর বিরুদ্ধে। যে ঘটনায় ধরা পড়েছিলো ফাইলের আড়ালে পুলিশের লুকোনোর ছবি। মিডিয়ায় বহুল প্রচারিত সেই ছবি প্রশ্ন তুলেছিলো পুলিশের ভূমিকা নিয়ে।

সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশের ওপর আক্রমণ এই প্রথম নয়। এর আগেও একাধিকবার কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ – রাজ্যের কোথাও না কোথাও পুলিশকে শাসকদলের অনুগামীদের আক্রমণের শিকার হতে হয়েছে।

পুলিশের মেরুদন্ড ভাঙ্গার শুরু অবশ্য আরও আগে। ৭ নভেম্বর, ২০১১। যেদিন ভবানীপুর থানায় সটান হাজির হয়ে দলের দুই কর্মীকে ছাড়িয়ে নিয়ে গেছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। জগদ্ধাত্রী পুজোর বিসর্জনে পুলিশি নিয়মের তোয়াক্কা না করে হাসপাতালের সামনে ডিজে বাজানো, বাজি ফাটানোর সেই ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপে থমকেছিলো পুলিশ।

এরপর থেকে একাধিক ঘটনা ঘটেছে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে। কখনও পুলিশের মাথা ফেটেছে, কখনও শাসকদলের বাহিনী এসে থানায় হামলা করেছে, কখনও আবার থানায় বসে পুলিশকে কাঁদতেও দেখেছে রাজ্যের তথা দেশের মানুষ। আর তাপস চৌধুরীরা তো নিজের অমূল্য প্রাণটাই দিয়ে ফেলেছেন কলেজ নির্বাচনের হাঙ্গামা থামাতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে।

যে প্রসঙ্গে এতগুলো কথা বলতে হল সেটা অবশ্যই গতকালের বীরভূমের ঘটনা। গতকাল মিডিয়ার দৌলতে আবারও রাজ্য তথা দেশের মানুষ দেখেছেন একজন রাজনৈতিক নেতা কীভাবে পুলিশকে ধমকাতে পারেন, হুমকি দিতে পারেন এবং মাথা নিচু করে ডি এস পি পদমর্যাদার পুলিশ সেই ধমকানি, হুমকি হজম করেন।

শাসকদলের যে নেতা ওই ধমক দিচ্ছিলেন, হুমকি দিচ্ছিলেন তিনি কোনও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি নন। শুধুমাত্র রাজ্যের শাসকদলের একজন জেলাস্তরের নেতা। যিনি এর আগেও প্রকাশ্যে পুলিশকে বোম মারার নির্দেশ দিয়েছিলেন তাঁর দলীয় কর্মীদের।

এক্ষেত্রে শাসকদলের নেতা যাই বলুন না কেন প্রশ্ন উঠবে পুলিশের ভূমিকা নিয়েই। সাধারণ মানুষ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী হিসেবে যাদের ওপর এখনও ভরসা করেন তার নাম পুলিশ। সেই পুলিশকেই যখন সাধারণ মানুষ বাধ্য ছাত্রের মত মাথা নিচু করে কোন রাজনৈতিক নেতার হুমকি শুনতে দেখে তার পরেও সেই বাহিনীর ওপর তাঁরা ভরসা রাখতে পারবে তো? নাকি পুলিশকে সামনে দাঁড় করিয়ে নিজের হাতে আইন তুলে নেওয়ার এই হুমকির মাধ্যমে রাজ্যবাসীকেই প্রচ্ছন্ন হুমকি দেবার এও এক নতুন কৌশল?

অথচ পুলিশ যে পারেনা এমনটা কিন্তু নয়। সাম্প্রতিক সময়ে রাজ্যের বিরোধীদলের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে পুলিশের অতি সক্রিয়তাও দেখেছে এই রাজ্যের মানুষই। প্রশাসনিক নিয়ম কি তবে শাসকের জন্য একরকম আর বিরোধীদের জন্য অন্য?

GOOGLE NEWS-এ Telegram-এ আমাদের ফলো করুন। YouTube -এ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন।

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in