
হায় বীর! হায় ভারতবর্ষ! হায় ‘নানা ভাষা নানা মত নানা পরিধান’-এর দেশ’!
এতক্ষণে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যাওয়া ভিডিও নিশ্চই অনেকেই দেখে ফেলেছেন। কীভাবে ধবধবে সাদা প্যান্ট, সাদা জুতো পরে সুন্দর ইন করা গোলাপি শার্ট সহযোগে কুড়ুল দিয়ে একজন মানুষকে কুপিয়ে কুপিয়ে খুন করতে হয় সেটাও জানা হয়ে গেছে। এবং তারপর অত্যন্ত ঠান্ডামাথায় ‘লাভ জিহাদ’-এর বয়ান। পুরো ঘটনাটাই ভিডিও করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়া। সবটুকুই।
যে সরকারের এক মন্ত্রী ঘটনাটাকে ‘নৃশংস’ বলেছেন সেই সরকারেরই এক মন্ত্রী অতি সম্প্রতি রাজস্থানে এক মেলায় সমস্ত স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিত হবার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। যে মেলায় এক ধর্মীয় সংগঠনের পক্ষ থেকে ‘লাভ জিহাদ’ সংক্রান্ত লিফলেট বিলি করা হয়েছিলো। না, রাজস্থান সরকার সেই ধর্মীয় সংগঠনের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
৫১ বছর বয়সী আফরাজুল মা, স্ত্রী, কন্যাদের রেখে কাজের খোঁজে রাজস্থান গেছিলো। আর পাঁচজন পরিযায়ী শ্রমিকের মতই। গায়ে একের পর এক কুড়ুলের ঘা পরার সময়ও আফরাজুল আকুতি নিয়ে বাঁচতে চেয়েছিলো। যদিও ‘বীর’ শম্ভুলাল তাতে কান দেয়নি। তার মাথায় তো তখন ‘লাভ জিহাদ’-এর অজুহাত। হাতের সামনে অসহায় শিকার। কোনও পার্থক্য নেই ১৯৯২, ২০০২-এর সঙ্গে। পরিকল্পনা করে তালিকা ধরে ধরে বেছে বেছে বিধর্মী নিধনের। পার্থক্য নেই আখলাখ, জুনেইদ, পহেলু খানদের ঘটনার সঙ্গেও। এইতো কদিন আগে এই রাজস্থানেই এক লোকসঙ্গীত শিল্পীকেও প্রায় একই কায়দায় খুন করা হয়েছে।
বিষবৃক্ষর বীজ পোঁতা হয়েছিলো অনেকদিন আগেই। আজ সেই গাছ ফুলে ফলে ভরে ডালপালা মেলেছে আসমুদ্র হিমাচলে। তাই এখন রুটির লড়াই গুরুত্বপূর্ণ নয়, রুজির লড়াই গুরুত্বপূর্ণ নয়, নোটবাতিল গুরুত্বপূর্ণ নয়, কৃষক আত্মহত্যা গুরুত্বপূর্ণ নয়। বরং অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ পদ্মাবতী বিতর্ক, রাম জন্মভূমি বিতর্ক, গোরক্ষা বিতর্ক, সৌধ বিতর্ক। ‘আচ্ছে দিন’-এর ছেলেভুলানী গান শুনে বিবেকও ঘুমিয়ে পড়েছে। এখন তো চোখ কান বন্ধ করে ঘুমোবারই সময়!
কম্পিউটারের কী বোর্ডটা রক্তে ভেসে যাচ্ছে। বিশ্বাস করুন। একটা করে অক্ষর, শব্দ লেখার সঙ্গে সঙ্গে একবার করে শম্ভুলালের কুড়ুলের কোপ পড়ছে শরীরে। আস্তে আস্তে অবশ হয়ে যাচ্ছে আঙ্গুল। হাত, পা, চোখ, কান, হৃদয়। এই অসহিষ্ণু রক্তাক্ত ভারতবর্ষই তো আমার দেশ! আমাদের দেশ! তাই না!
GOOGLE NEWS-এ আমাদের ফলো করুন