মূর্তি ভাঙ্গার বালখিল্য রাজনীতি আর কতদিন ?

মূর্তি ভাঙ্গার বালখিল্য রাজনীতি আর কতদিন ?

না, ঠিক হলো না। খুব স্পষ্ট ভাবেই বলা উচিৎ, ভুল। এক উগ্র বামদলের বালখিল্য, অবিমৃষ্যকারী আচরণের মাশুল গুণতে হবে রাজ্য ও দেশের বাম আন্দোলনকে। আবেগ এবং রাজনীতি দুটো এক নয়।

বিশেষত বাম আন্দোলনের এই কঠিন অভিমুখে আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখা তো আরও বেশি কাম্য। শ্যামাপ্রসাদের মূর্তি ভেঙ্গে যে পরিমাণ মাইলেজ শ্যামাপ্রসাদকে দেওয়া হল, আদৌ কী সেই মাইলেজ তাঁর প্রাপ্য ছিলো? বোধহয় না।

লেনিনের জীবন, তাঁর কর্মকাণ্ড, তাঁর ভাবনা, তাঁর দক্ষতা, তাঁর আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতাকে দাঁড়িপাল্লার একদিকে বসিয়ে অন্যদিকে শ্যামাপ্রসাদকে বসালে – ভার সমান হওয়া তো দূরে থাক, কাছাকাছিও পৌঁছাবে না। কারণ ধারে ও ভারে – লেনিন বনাম শ্যামাপ্রসাদ, কোনও তুলনাই করা সম্ভব নয়। সুতরাং লেনিনের মূর্তি ভাঙ্গার বদলা শ্যামাপ্রসাদ ভেঙ্গে – এই জাতীয় চিন্তার মধ্যে আবেগ থাকতে পারে, সোশ্যাল মিডিয়ায় গোটা কয়েক লাইক বা পিঠ চাপড়ানি জুটতে পারে। কিন্তু সু-রাজনীতি একদমই থাকেনা। বরং সময় প্রমাণ করবে এই আচরণ, এই পদক্ষেপ নিতান্তই বাজার গরম করা বালখিল্য আচরণ ছাড়া আর কিছুই নয়।

লেনিনের মূর্তি ভাঙ্গার পর সর্বস্তরে প্রতিবাদ হয়েছিলো। বাম নেতৃত্ব এই ঘটনাকে জাতীয় স্তরে তুলে আনতে পেরেছিলেন তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায়। প্রতিবাদ সংগঠিত হয়েছিলো দেশ জুড়ে। ত্রিপুরার রাজ্যপাল তথাগত রায় এবং তাঁর মতাদর্শের অনুগামী কিছু মানুষ ছাড়া দলমত নির্বিশেষে এই ঘটনার প্রতিবাদে মুখর হয়েছিলো সারা ভারতবর্ষ। যা অনেকটাই লঘু করে দিয়েছে গোটাকয়েক হাতে গোণা মানুষের আবেগতাড়িত আচরণ।

একটু ভেবে দেখুন তো, ওই ঘটনার ঠিক পরের দিন ওই কেওড়াতলাতেই যখন বিজেপির প্রতিনিধিরা শ্যামাপ্রসাদের মূর্তির ‘শুদ্ধিকরণ’ অভিযানে গেলেন তখন কারা বাধা দিলো? এবং সবথেকে বড় প্রশ্ন কেন দিলো? সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয় একটা ঝামেলা, যা খবর হয়ে গেল। ভেবে দেখেছেন কী পরোক্ষে কাদের হাতে আন্দোলনের উর্বর জমি তুলে দিলেন?

এবং তার পর থেকে চলছে। প্রতিদিনই চলছে। রাজ্যের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে চলছে। না। এই লড়াইতে কিন্তু যারা লেনিনকে নিজেদের বলে দাবী করে শ্যামাপ্রসাদকে ভাঙতে গেছিলেন, তাঁরা কোথাও আর নেই। লড়াইটা দাঁড়িয়ে গেছে বিজেপি বনাম তৃণমূলে। যেন এরাই দুই মূল প্রতিপক্ষ। মাঝখান থেকে এই ঘটনা ঘিরে যে বাম প্রতিবাদ, প্রতিরোধের মাথা তোলার সুযোগ এসেছিলো, তাও বিনষ্ট হল।

যাদবপুরের ঘটনাকে যারা বীরত্ব বলে বড়াই করছেন, তাঁরাও একবার ভেবে দেখতে পারেন যে, রাজ্যের প্রধান বাম দল সেদিন বকলমে প্রতিরোধে সামিল না হলে ঠিক কতটা প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব হত। হেদুয়ার কাছে আরএসএস-এর দপ্তরে বিক্ষোভের ঘটনা তো সকলেরই অল্পবিস্তর জানা আছে।

আন্দোলনের জন্য ভাবনা লাগে। আন্দোলন দানা বাঁধাতে গেলে সঠিক পরিকল্পনা করে পা ফেলাই বাঞ্ছনীয়। নাহলে, সেই আন্দোলনে চটজলদি বাজার গরম করা গেলেও, দানা বাঁধানো যায়না। উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়, ব্যাহত হয়। বাঁদরের তৈলাক্ত বাঁশে ওঠার গল্পের মত, এক ধাপ এগোতে গিয়ে, তিন ধাপ পিছিয়ে পড়তে হয়। অভীষ্টে অধরাই থাকে। ‘বৃহত্তর বাম ঐক্য’ শুধুমাত্র সোশ্যাল মিডিয়ার থ্রেডে আটকে রেখে আত্মতৃপ্তি লাভ যদি একমাত্র উদ্দেশ্য হয় তাহলে ঠিক আছে। অন্যথায়, ভাবনা চিন্তায় বিচক্ষণতা না আনতে পারলে লাভের থেকে লোকসানই বেশি।

GOOGLE NEWS-এ আমাদের ফলো করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in