বাংলা বাঁচানোর সংকল্প

নবীনের প্রত্যয়, প্রবীণের অভিজ্ঞতায় সিক্ত মাটি জানান দিচ্ছে সংযুক্ত মোর্চাই রুখতে পারে শাসকদের এই খোয়াব। দেশের কোটি কোটি কৃষকদের মতো টিকরি, সিঙ্ঘু, শাহজাহানপুর বর্ডারও তাকিয়ে বাংলার নির্বাচনের দিকে
বাংলা বাঁচানোর সংকল্প
গ্রাফিক্স সুমিত্রা নন্দন

বাংলার রাজনীতির ময়দান এখন তীব্র উত্তপ্ত। এদিকে রাজস্থানের বালির তাপমাত্রাও বাড়ছে। বেড়েছে জেদও। প্রতিবাদী কৃষকদের। অন্যদিকে মোদি শাহ এবং তাদের বন্ধু আম্বানি আদানি দিবাস্বপ্ন দেখছে বাংলা দখলের। তাহলে ওদের শোষণের চাকা মসৃণ হবে। গোটা দেশে নির্বাচনের ফল দেখিয়ে চাঙ্গা হবে নাগপুরের স্বয়ং সেবকরাও। অন্যদিকে মিডিয়াও সেই খোয়াব বুনছে। বাংলার শাসক তৃণমূল ইতিমধ্যেই ওয়াক ওভারের পথ প্রস্তুত করে ফেলেছে। কিন্তু বাংলায় প্রতিদিনের লড়াইয়ে, নবীন কমরেডদের প্রত্যয়ে, প্রবীণের অভিজ্ঞতায় সিক্ত হয়ে মাটি জানান দিচ্ছে সংযুক্ত মোর্চাই রুখতে পারে শাসকদের এই খোয়াব। আর সেদিকেই দেশের কোটি কোটি কৃষকদের মতো টিকরি, সিঙ্ঘু, শাহজাহানপুর বর্ডারও তাকিয়ে আছে বাংলার নির্বাচনের দিকে। বিজেপি এবং হবু বিজেপির পরাজয়ের দিকে।

বিগত দশ বছরে বাংলা দেখেছে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতৃত্বে বামপন্থীদের বিরুদ্ধে তীব্রতম আক্রমণ। নেতা, কর্মী, সংগঠকদের খুন-মিথ্যা মামলা। তিলে তিলে গড়া ৩৪ বছরে বামপন্থীদের সাফল্য গুলোকে কালিমালিপ্ত করার আপ্রাণ প্রয়াস। ভূমিসংস্কারের ভিত্তিতে কৃষির বিস্ময়কর অগ্রগতি, শিল্পায়নের স্বপ্ন, জনস্বাস্থ্য, জনশিক্ষা - সব কিছুকেই শেষের পথে। আর শিল্প এবং কৃষিতে দিল্লির নীতিই কাট-কপি-পেস্ট করছে নবান্ন। কৃষিক্ষেত্রে বামফ্রন্ট সরকারের সাফল্য ধ্বংস করে পশ্চিমবঙ্গে বেড়েছে কৃষকদের আত্মহত্যা। প্রায় ২০০ কৃষক আত্মহত্যা করেছে এই দশকে। স্বাভাবিকভাবেই দিল্লির সরকারের মতোই অস্বীকার করেছেন দিদিমণি। মোদীর মতই বন্ধ করে দিয়েছেন সরকারী পরিসংখ্যান দেওয়া।

এদিকে ধান, আলু বা পাট - ফসলের দাম পায় না বাংলার কৃষক। অবস্থা এতটাই শোচনীয় যে, সরকার ঘোষিত ন্যূনতম সহায়কমূল্যেও ফসল বিক্রি করতে পারে না কৃষক। এফসিআই এর সরকারী ক্রয়ও খুব কম বাংলা থেকে। এমএসপি এমন সময় ঘোষণা করা হয় ততক্ষণে কৃষকরা ধার নিয়ে নেয় নতুন চাষ শুরু করার জন্যে। তাতে আবার ঋণের জাঁতাকলে পিষ্ট হতে হয় তাদের। এদিকে দিদি দাদার ভাবার সময় নেই। যখন কৃষক আন্দোলনের মঞ্চ থেকে ৮ই ডিসেম্বরের ভারত বন্ধ নিঃশর্ত সমর্থন পেল অবিজেপি সমস্ত রাজনৈতিক দলের। বাংলাতে হলো। কিন্তু বনধ করতে গিয়ে তৃণমূল আক্রমণ করলো বামপন্থীদের। আসলে দিল্লির দাদা আর বাংলার পিসির নীতি এক। তা সেদিনও প্রমাণিত হয়েছে। যেমনটা দলবদলুদের প্রত্যেকটা কথায় আজ প্রমাণিত হচ্ছে।

বিগত দশ বছরে বাংলা দেখেছে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতৃত্বে বামপন্থীদের বিরুদ্ধে তীব্রতম আক্রমণ। নেতা, কর্মী, সংগঠকদের খুন-মিথ্যা মামলা। তিলে তিলে গড়া ৩৪ বছরে বামপন্থীদের সাফল্য গুলোকে কালিমালিপ্ত করার আপ্রাণ প্রয়াস।

এদিকে বাংলায় শিল্পের অবস্থাটা শ্মশানের মতো। সিঙ্গুরের ঘটনা, দিদির তোলাবাজি-জমি নীতির জন্যে বিনিয়োগের ঝুঁকি নিতে চায়নি বেসরকারি বিনিয়োগকারীরা। রাজ্যে একের পর এক কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। রাজ্য সরকারের মালিকানাধীন সংস্থাও লাটে উঠেছে। রাজ্যের পরিচিত শিল্পাঞ্চলগুলি মরুভূমি। চটকল, সুতোকল, চা বাগান মৃত্যুর পদধ্বনি শোনে প্রতিনিয়ত। পেনশন পাচ্ছেন না শ্রমিকরা। বাংলা ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে শিক্ষিত ছেলেমেয়েরা। গ্রামের পর গ্রাম ১০০ দিনের কাজের অভাবে, কৃষির দুর্দশায় পুরুষ শূন্য হচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও চলছে তোলাবাজি। পরিবর্তনের পর শিক্ষায় খরচ বেড়েছে বাংলায় প্রায় ১১০%। লকডাউনে তার চেহারা আরোও ভয়াবহ হয়েছে। যেখানে ড্রপ আউট বেড়েছে ভয়াবহভাবে।

এর সাথে পাহাড় থেকে সুন্দরবন - সম্প্রীতি আর ঐক্যের পরিবেশ তছনছ করে দেওয়া হয়েছে পরিচিতি সত্ত্বার নামে। শুধুমাত্র বামপন্থীদের বিছিন্ন করবার জন্যে দেশ ও শাসক এনেছে সাম্প্রদায়িকতার বিষ। সংখ্যালঘু মৌলবাদীদের তুষ্ট করতে পিসির সরকার কর্মসূচি নিয়েছে ধর্মের সাথে রাজনীতিকে মেশানোর এক প্রাতিষ্ঠানিক রূপ৷ এতে দেখা যাচ্ছে যে সংখ্যালঘুর লাভ কিছুই হয়নি। যা সরকারি পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট। কিন্তু রাজনীতিতে ধর্মের এই প্রাধান্য আরএসএসের পথ মসৃণ করেছে।

গেরুয়া টিমের ঘৃণা আশ্রিত তীব্র সংখ্যালঘু বিরোধী অভিযানকেই অক্সিজেন জুগিয়েছে দিদিমণির এই রাজনীতি। ধূলাগড় থেকে বসিরহাট সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়েছে। বেড়েছে আরএসএসের শাখার সংখ্যা। বাংলায় দেশভাগের ক্ষত সত্ত্বেও বামপন্থীদের নিরবিচ্ছিন্নভাবে মানুষের সাথে থাকার ফলে প্রায় ছ'দশক ব্রাত্য ছিল যারা, আজ তারা আবার শক্তি অর্জন করেছে। আর এই আরএসএস বিজেপির শক্তিই ধর্মের নামে দেশকে ভাগ করে এখন দেশ লোটার কাজ করছে। গরীব মানুষ তো বটেই, মধ্যবিত্তও হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে এই ভয়ংকর অবস্থা। বৈষম্য বেড়েছে। রেল, বিমান, বন্দর, বিমানবন্দর, ব্যাঙ্ক, বীমা এবং লাভজনক সরকারি সংস্থা সব বেচে দিচ্ছে আম্বানি আদানিকে। এদিকে দেশে বেকারি আকাশচুম্বী। আর তখনই কৃষি আইনে বদল খুলে দিয়েছে দেশের ৫ লক্ষ একর জমি বিক্রির নীল নক্সা।

এদিকে বাংলায় শিল্পের অবস্থাটা শ্মশানের মতো। সিঙ্গুরের ঘটনা, দিদির তোলাবাজি-জমি নীতির জন্যে বিনিয়োগের ঝুঁকি নিতে চায়নি বেসরকারি বিনিয়োগকারীরা। রাজ্যে একের পর এক কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। রাজ্য সরকারের মালিকানাধীন সংস্থাও লাটে উঠেছে। রাজ্যের পরিচিত শিল্পাঞ্চলগুলি মরুভূমি।

তাই এই বাংলা থেকে শাহজাহানপুর বর্ডার আজ এক সূত্রে বাধা। দেশ বাঁচানোর জন্যে। একদিকে প্রায় ৩০০ কৃষক মারা গেছেন কৃষক আন্দোলন করতে গিয়ে। বাংলায় কাজ চাইতে গিয়ে শহীদ হয়েছে আমাদের কমরেড মইদুল। মইদুল চেয়েছিলো সেদিন মেয়ে দুটোর জন্যে কলেজস্ট্রীট থেকে বই কিনে নিয়ে যেতে। পারেনি। মমতার পুলিশ সেই ইচ্ছা শেষ করে দিয়েছিলো বার বার লাঠির আঘাতে। মইদুল চেয়েছিলো ওর মেয়েরা মানুষের মতো মানুষ হোক। স্বপ্ন ছিলো ডাক্তার হবে মেয়ে। দেখে যেতে পারেনি। কিন্তু অপূর্ণ স্বপ্ন পূরণের দায়িত্ব আমাদের বৃহত্তর পরিবারের। মইদুল ইসলাম মিদ্যার মেয়েদের পড়াশোনার সমস্ত দায়িত্ব যেমন আমাদের। বাংলার গরীব ঘরের প্রতিটি সন্তানের শিক্ষার দায়িত্বও আমাদের। মইদুল বাংলার কোটি কোটি যুবকের স্বপ্ন পূরণের জন্যে শহীদ হয়েছে। সবার জন্যে কাজ চেয়ে রক্তাক্ত হয়েছে। আমাদের কর্তব্যও ওর স্বপ্নও পূরণ করার।

তাই বাংলায় বিজেপি ও হবু বিজেপি অর্থাৎ তৃণমূলকে হারাতেই হবে। মানুষ দেখছে ওদের মুখ এক। শুধু ফুল বদলাচ্ছে ওরা। তাই এখন জিততেই হবে সংযুক্ত মোর্চাকে। গড়বে এক নতুন বাংলা।

তাই বাংলায় বিজেপি ও হবু বিজেপি অর্থাৎ তৃণমূলকে হারাতেই হবে। মানুষ দেখছে ওদের মুখ এক। শুধু ফুল বদলাচ্ছে ওরা। তাই এখন জিততেই হবে সংযুক্ত মোর্চাকে। গড়বে এক নতুন বাংলা। যেখানে কৃষকের ফসল কিনবে সরকার। পাবে নায্য দাম। সরকার প্রতি বছর এসএসসি, পিএসসি, টেটের মাধ্যমে স্বচ্ছ নিয়োগ করবে। কারখানা বানাবে। ১০০ র জায়গা ১৫০ দিনের কাজ হবে। এক বছরের মধ্যে সমস্ত শূন্য পদে নিয়োগ হবে। জাত নয় ভাতের রাজনীতি হবে। আবার। চলুন নতুন বাংলা গড়ার জন্যে হাতে হাত বেঁধে ভবিষ্যতের জন্যে এগোই। সে কাজে লড়াই শুরু হোক প্রতি বুথে বুথে...

GOOGLE NEWS-এ Telegram-এ আমাদের ফলো করুন। YouTube -এ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন।

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in